জাহিদ ই হাসান
সাংবাদিক
অদৃশ্য এক ভাইরাস জনজীবনে কী দুর্বিষহ প্রভাব রেখেছে সেটা নতুন করে বলার কিছু নাই। দিনমজুর থেকে শুরু করে ধনী সবার প্রাত্যহিক জীবনে এটা যে ভয়ংকর প্রভাব রেখে গেছে তা বর্ণনাতীত। লাখ লাখ মানুষ মারা গেছেন। কত শত পরিবার মুহূর্তেই নিঃস্ব হয়ে গেছে তার কোনো ইয়াত্তা নেই।
করোনাভাইরাসের এই কালো থাবা বড় ধরনের প্রভাব রেখেছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেও। কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে ক্রিকেট-ফুটবল থেকে শুরু করে সকল খেলাকেই। দৃশ্যমান সকল বিপর্যয়ের সঙ্গে ক্রীড়াবিদদের জীবনে যুক্ত হয়েছে মনের যুদ্ধ।
বিষয়টা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের একটা বক্তব্যেই স্পষ্ট করা যেতে পারে। ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক ক্রিকেট আসর ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) খেলতে গিয়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান একটা বিস্ফোরক বক্তব্য দিয়েছিলেন।
- বক্তব্যটি ছিল ঠিক এমন- ‘ঘরবন্দি থেকে একবার প্রচণ্ড রকম ডিপ্রেশড হয়ে গিয়েছিলাম। তখন মনে হয়েছে- লোকে যে আত্মহত্যা করে; কেন করে, সেটি বুঝতে পেরেছি।’
হঠাৎ করেই এমনটা হয়নি। দীর্ঘ সময় ধরে কোয়ারেন্টিন ও বায়োবাবলে বন্দী থাকতে থাকতে মানসিক বিপর্যয়ে পড়েছিলেন সাকিব। তার মতো লাখ লাখ ক্রীড়াবিদ গত দুই বছরে এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছেন।
বেন স্টোকসকে অনেকেই হয়তো চিনেন।
ইংল্যান্ডকে ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন এ অলরাউন্ডার। কিন্তু ক’দিন আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ সময়ের জন্য ছুটি নিয়েছিলেন তিনি। ফুল ফর্মে থাকার পরেও এমন বিরতি নিতে হলো কেন তাকে? পুরোটাই মানসিক কারণ। বায়োবাবল আর কোয়ারেন্টিনের সঙ্গে মনের যুদ্ধে পেরে উঠছিলেন না তিনি। তাই বেছে নিতে হয়েছে বিরতি।
গত টোকিও অলিম্পিক চলাকালীন একটা দৃশ্য সবার দৃষ্টি কেড়েছে। চলতি আসরেই নিজের ইভেন্ট থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন যুক্তরাষ্ট্রের তারকা জিমন্যাস্ট সিমোন বাইলস। বড় কীর্তি গড়ার লক্ষ্য নিয়ে জাপানে গিয়েছিলেন এই জিমন্যাস্ট। কিন্তু ‘টুইস্টিস’ নামে মানসিক সমস্যায় ভুগে সরে দাঁড়ান বাইলস।
এমন হাজারো ঘটনার সাক্ষী ক্রীড়াবিশ্ব। উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না। প্রতিনিয়ত এমন সমস্যায় জর্জরিত ক্রীড়াবিদরা এখন নিউনরমালের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে একজন খেলোয়াড় কী করবেন সেটাও অনেকেই জানেন না। অনেকেরই ধারণা, এসব নিয়ে কথা বলতে গেলে মানুষ ভাববে ‘সে পাগল হয়ে গেছে’। ক্রীড়াবিশ্বে এমন পরিস্থিতি এখন একটা বিষয় আরও স্পষ্ট হয়ে সামনে এসেছে। তাহলো- কাউন্সেলিং ও মনোচিকিৎসা।
মনের অসুস্থতা প্রাধান্য পাচ্ছে এখন। মাঠের খেলাটাকে চাঙা রাখা অব্যাহত করতে মনের এ যুদ্ধটাকেও জয় করতে হবে ক্রীড়াবিদদের। এটাই এখন ক্রীড়াবিদদের নিউনরমাল।
লেখক : জাহিদ ই হাসান
ক্রীড়া সাংবাদিক, নিউজবাংলা২৪.কম
/এনএইচ/মনেরখবর/এসএস