অস্থির স্বভাব, মনযোগ ক্ষণস্থায়ী

পাঠক:
আসসালামু ওয়ালাইকুম।
আমার সমস্য হলো অল্প কিছুতেই আমি অস্থিরতা অনুভব করি। তাড়াহুড়ো করেই কোনো একটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই। যখন কোনো একটি বিষয় একবার মনে চলে আসে তখনই সেটা না করতে পারলে চরম অস্থিরতা কাজ করতে থাকে। অনেক সময় এসব বিষয় আমার কাজের ক্ষেত্রেও অনেক সমস্যা করে। ঘটনাটা বা ঐ কাজটিকে কোনোভাবেই ভুলতে পারিনা। এমন অনেক বিষয় আছে যা আমি ভুলতে চাই। কিন্তু ভুলতে পারিনা। ক্লাসে বসে থাকলে লেকচার শুনতে শুনতে কোথায় যে মন চলে যায় বা কখন যে কি চিন্তা চলে আসে নিজেই বুঝতে পারিনা। হঠাৎ আবার যখন বুঝতে পারি আমি কি করছি, তখন মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। আমি খুব অল্প কারণেই রেগে যাই। তবে রাগ বেশি ক্ষণ থাকে না।

আমার ধারনা আমার আবেগ বিষয়টিও অন্যদের চেয়ে বেশী। আমি খুব অল্পতেই কোনো কিছুতেই খুশী হয়ে যাই। আবার অনেক সময় খুব অল্প কারণেই খুব কষ্টও পাই। নিজে সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয়। আমি নিজেকে ঠিক রেখে কিভাবে চলতে পারবো?

ছোটন বিশ্বাস
ঝিনাইদহ

পরামর্শক
ওয়ালিকুম আসসালাম

আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার প্রশ্নের বেশ কয়েকটি দিক রয়েছে। যদি ভাগ করি, তবে দাঁড়ায়-

১. আপনি অস্থির স্বভাবের, তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন
২. আপনি কিছু বিষয় ভুলে যেতে চান কিন্তু পারেন না
৩. মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না
৪. তাড়াতাড়ি রেগে যান
৫. আপনি আবেগী

উপরের প্রশ্নগুলো বা ভাগ গুলোর উত্তর এক কথায় দেয়া সম্ভব নয়, সেটি নিশ্চয়ই এতক্ষণে আপনিও বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু আপনার সমস্ত বিষয়গুলিকে যদি সাজানো হয়, তবে একটা কিছু অনুমান করা যায়। আপনি নিজে যদি একটু খেয়াল করেন তাহলে বুঝতে পারবেন-আবেগ আপনাকে যেভাবে তাড়িত করে সেদিকেই আপনার মনোযোগ বেশি যায়।

আপনার কথা থেকে এটিও স্পষ্ট যে, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি নিয়ে আপনি এতোদিন হয়তো কিছুই ভাবেননি এবং চেষ্টাও করেননি। নিয়ন্ত্রণ কম বলেই হয়তো, তাড়াতাড়ি রেগে যান। অথবা সামান্য সমস্যাতেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। বেশিক্ষণ কোনো সমস্যা নিয়ে পড়ে থাকার মানসিকতাও নেই বলেই হয়তো, অস্থিরতা কাজ করে, মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না এবং অপছন্দনীয় বিষয়গুলো ভুলে যেতে চান।

আপনার জন্য কয়েকটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে। আবেগ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষেরই থাকে। থাকতে হয়। থাকতে হবেই। তা’না হলে কেউই চলতে পারতোনা, কিছুই করতে পারতো না। আবেগ দিয়েই মানুষ তাড়িত হয়ে, মটিভেটেড হয়। সুতুরাং এটি প্রয়োজনীয়, সন্দেহ নেই। কিন্তু কথা হলো, কতটুকু? কখন, কীভাবে?

আপনি হয়তো কিছু চাইছেন, তখন তখনই সেটা পাবার কোন রাস্তা নিশ্চয়ই নেই। সুতরাং সঠিক সময় বা অবস্থার জন্য অপেক্ষা করতে হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তার জন্যই প্রয়োজন আত্মনিয়ন্ত্রণ। নিজের অস্থিরতাকে কমিয়ে আনতে হবে, নিজের ভেতর যুক্তি (গ্রহণযোগ্য) তৈরি করতে হবে।

আর রাগের অনেক কারণের মাঝে, যে কারণটি সবচেয়ে প্রচলিত ও গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, চাহিদা বা এক্সপেকটেসন। চাহিদা যত বেশি, না পাওয়ার কারণে রাগ তত বেশি। সেটিও এক ধরনের অনিয়ন্ত্রিত আবেগ। সুতরাং এটা বোঝা গেলো যে, আপনার অস্থিরতা, তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নেয়া, রেগে যাওয়া এবং মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা সবই অনিয়ন্ত্রিত আবেগের কারণে।

আবার বললেই আপনি আপনার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলবেন, এমনও নয়। তবে বিষয়টি প্রথমে বুঝে নেয়াটা জরুরি। আবেগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে, যেমন; ছোটকাল থেকে বেড়ে উঠা, প্রশ্রয়-আশ্রয়ের নিয়ন্ত্রণ, অভ্যস্ততা, সময়, সম্পর্ক এমন অনেক কিছুর সাথে সম্পর্কযুক্ত। এ বয়সেও আপনি আপনার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তার আগে একটি কথা মনে রাখতে হবে, তাহলো এ অনিয়ন্ত্রিত আবেগের কারণ কী, সেটি জানা। তারপর প্রয়োজন মতো কোন ব্যবস্থা নেয়া। আপনাকে অনুরোধ করবো কোনো একজন বিশেষজ্ঞের সাথে সরাসরি যোগযোগ করতে।

আপনার জন্য, আরেকটি কথা জরুরি, আপনি কিছু বিষয় ভুলে যেতে চান। এমন অনেক মানুষ বা রোগীকে আমরা পাই যারা কিছু কিছু ঘটনা বা স্মৃতি ভুলে যেতে চায়। অনাকাঙ্ক্ষিত আবেগ ভেতরে তোলপাড় করে, তাই সে অনুভূতি মনুষের কাঙ্ক্ষিত হয় না। ক্ষত বা রক্তাত্ব, কোনো কিছুই মানুষের নিজের জগৎকে আনন্দিত করেনা। তাই মানুষ ভুলতে চায়!!

বিজ্ঞান বড় নিষ্ঠুর! কিছুই ভুলায় না। মানুষ কিছুই ভুলতে পারে না। ভুলতে হলে পেছনের পৃথিবীকেই ভুলে যেতে হবে। সেকি সম্ভব!! আবারো সেই আবেগের কথা আসে, ভুলতে চাওয়া নয়। বরং অনিয়ন্ত্রিত দুঃখবোধকে কিংবা রাগান্বিত অনুভূতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানতে হবে। আপনার জন্য মঙ্গল কামনা।

পরামর্শক
ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লবর্
অধ্যাপক, বিএসএমএমইউ

Previous articleমানসিক চাপের প্রকার, অনিয়ন্ত্রিত চাপের প্রভাব
Next articleনিয়ন্ত্রণে রাখলে মানসিক চাপ উপকারী
অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
চেয়ারম্যান, মনোরোগবিদ্যাি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here