মারুফ মুনির, মনের খবর : সেরা অভিনেতা হিসেবে জীবনের প্রথম ছবির জন্যই পেয়েছিলেন ভারতের জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার। ক্রাইম থ্রিলার, কমেডি, সামাজিক-পারিবারিক, পলিটিক্যাল, বাণিজ্যিক-শৈল্পিক সব ধরণের ছবিতে অভিনয় করেছেন।
নায়ক-খলনায়ক, বড় ভাই, বাবা; অভিনয় জীবনে সব চরিত্রেই নিজেকে অপরিহার্য প্রমাণ করতে পেরেছিলেন। পেয়েছেন সেরা অভিনেতা, সেরা সহ:অভিনেতা, সেরা খল অভিনেতার জাতীয় পুরুস্কার। অথচ তিনি কিনা কাজ না পাওয়ার হতাশায় মানসিকভাবে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। চেয়েছিলেন আত্মহত্যা করতে।
আর কেউ নন। ফাটাকেস্ট খ্যাত মিঠুন চক্রবর্তীর কথা বলছি। ১৯৭৬ সালে মৃনাল সেনের ‘মৃগয়া’ সিনেমার মধ্য দিয়ে বাংলা ছবিতে ক্যারিয়ার শুরু মিঠুন দা’র। ওই বছরেই প্রথম ছবি ‘মৃগয়া’র জন্যেই পেয়েছিলেন সেরা অভিনেতার পুরস্কার। কিন্তু এই পুরস্কার মিঠুনকে সন্তোষ্ট করতে পারেনি। মাথায় ভুত চাপে হিন্দি সিনেমায় অভিনয়ের। বাংলা সিনেমায় কাজ করলেও মন পড়ে থাকে কখন সুযোগ পাবে হিন্দি সিনেমায়। কোলকাতা ছেড়ে পারিও দিয়েছিলেন মুম্বাইয়ে। কিন্তু সহজেই যেন সুযোগ মিলছে না।
আশায় আশায় একসময় হতাশায় ভুগতে থাকেন মিঠুন। হতাশা থেকে মারাত্মক বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এমনকি একসময় আত্মহত্যার কথাও ভাবেন। সম্প্রতি এমন কথা নিজেই জানিয়েছেন মিঠুন। টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি তিনি নিজের ব্যক্তিজীবন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন।
মিঠুন বলেন, ‘সবাইকে নানা ধরনের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু আমারটা ছিল ভীষণ কঠিন। মাঝেমধ্যে মনে হতো, নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব না। এই হতাশা থেকে আত্মহত্যার কথা পর্যন্ত ভেবেছি। বেশ কিছু কারণে কলকাতাতেও ফিরে যেতে পারছিলাম না।’

তবে নিজের বর্তমান অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মিঠুন পরামর্শ দিয়েছেন জীবনে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার। নিজের ব্যাপারে বলতে গিয়ে মিঠুন বলেন, ‘যুদ্ধ না করে জীবন শেষ করে যাওয়ার চিন্তা করা উচিত নয়। আমি জন্মগতভাবে একজন যোদ্ধা, যে হারতে জানে না। দেখুন, এখন আমি কোথায় পৌঁছে গেছি।’
হ্যাঁ, বাস্তবেই অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন বাঙালি অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। শুধু বাংলা সিনেমায় নয়। হিন্দি সিনেমাতেও রাজ করেছেন। বলা যায় হিন্দি সিনেমায় প্রথম রাজত্ব শুরুই করেছিলেন তিনি। কাজের সুযোগ পেয়েই ক্ষ্যান্ত থাকেননি তিনি।
১৯৯৮২ সালে ‘ডিসকো ড্যান্সার’ সিনেমার মধ্য দিয়ে মুম্বায়ে রাজত্ব কায়েম করেন মিঠুন। ডিসকো ড্যান্সার প্রথম ভারতীয় সিনেমা যা বিশ্বব্যাপী ১০০ কোটি টাকা আয় করে। বাংলা হিন্দি ছাড়ায়ও মিঠুন অভিনয় করেছেন পাঞ্জাবী, তেলুগু, ওড়িশা, ভোজপুরী চলচ্চিত্রেও।
উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালে বাংলাদেশের বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন ভারতবর্ষের এই জনপ্রিয় বাঙালি অভিনেতা। পড়াশোনা করেছিলেন বরিশাল জেলা স্কুলে। পরবর্তীতে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি নেন। এছাড়াও ফিল্ম অ্যাণ্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইণ্ডিয়া (এফটিআইআই) থেকে গ্রাজুয়েশন করেছিলেন গুণি এই অভিনেতা।
সংসার জীবনে ভারতের সাবেক অভিনেত্র যোগীতা বালীকে বিয়ে করেন। তাদের রয়েছে তিন ছেলে মিমোহ, রিমোহ ও নমসী চক্রবর্তী এবং এক মেয়ে দিশানি চক্রবর্তী। মিমোহ, রিমোহ ও দিশানি ইতোমধ্যে অভিনয়ে নাম লিখিয়েছে।
আরো পড়ুন
মানসিক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করেছেন দীপিকা
/এসএস/মনেরখবর/