যৌন স্বাস্থ্য বা দাম্পত্য সম্পর্কে অতি চঞ্চলতার প্রভাব

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

এডিএইচডি বা এটেনশন ডেফিসিট হাইপার একটিভিটি ডিজঅর্ডার ডায়াগনোসিস করার জন্য একটি বায়োলজিক্যাল মার্কারের গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৬ থেকে ৮ বছরের শিশুদের এই নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারটি বেশি।

শতকরা ৪৭ ভাগের মধ্যে এই এডিএইচডি রোগটি দেখা গেছে। তার মানে এই নয় যে ছয় থেকে আট বছরের শিশুদের মধ্যে ৪৭% এই এডিএইচডি রোগে ভুগছে। বরং বলা চলে ৪৭% এর এডিএইচডি রোগটি ছয় থেকে আট বছরে ধরা পড়েছে।

বড়োদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি কম। নয় থেকে বারো বছরের মধ্যে ধরা পড়ে ৮%। সংখ্যাটি আতঙ্কিত হওয়ার মতো নয়। তবে বড়োদের মধ্যে রোগটি ডায়াগনোসিস করা বেশ কষ্টসাধ্য। ছেলেবেলায় রোগটি ডায়াগনোসিস না হলে বড়োবেলায় এসে ডায়াগনোসিস করা কষ্টকর হয়ে ওঠে। কারণ সেসময় ছেলেবেলার অনেক তথ্যই চিকিৎসককে জানানো সম্ভব হয় না।

  • আবার ছেলেবেলায় ধরা পড়েছে এমন রোগীদের অনেকেরই রোগটি বড়োবেলা পর্যন্ত থেকে যায়। পরিসংখ্যান বলে প্রায় ৫০% এর রোগটি বড়োবেলা পর্যন্ত থেকে যায়। আশার কথা হলো এই, বয়স বাড়ার সাথে সাথে রোগটি এক সময় চলে যায়।

তবে বড়োবেলায় যখন রোগটি থাকে তখন বেশ কিছু জটিলতা হয়। এডাল্ট এডিএইচডির রোগীরা অ্যাংজাইটি এবং বিষণ্ণতায় ভোগে। তাদের যৌন স্বাস্থ্যও ভালো থাকে না। দাম্পত্য সম্পর্ক ও যৌন স্বাস্থ্য এই রোগটির দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত হয়।

এডিএইচডি রোগটির মল বৈশিষ্ট্যই হলো তিনটি-

  • মনোযোগের সমস্যা বা ইনএটনশন
  • অতি চঞ্চলতা বা হাইপার অ্যাকটিভিটি
  • আবেগের ধাক্কা বা ইমপালসিভিটি

ফলে দাম্পত্য সম্পর্কে যে পারস্পারিক লেনদেনের বিষয় সেখানে তারা আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন না। অপরের আবেগকে বুঝতে পারাও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। অতি চঞ্চলতার কারণে তাদের আচার-আচরণে সঙ্গী তাল মিলাতে ব্যর্থ হন।

আবার মনোযোগের সমস্যার কারণে সঙ্গীর প্রতি যথেষ্ট মনোযোগী হতে পারেন না। এক কথায় তাদের রোমান্টিক সম্পর্কের মধ্যে এক ধরনের আবেগীয়, আচরণগত ভারসাম্যহীনতা লক্ষ করা যায়। যৌন স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা মাত্রাতিরিক্ত যৌনতায় ভোগে।

অনেক সময় আবেগীয় তাড়নায় যৌন ঝুঁকিপূর্ণ আচরণে লিপ্ত হয়। যৌন আসক্তিও দেখা যায়। তাদের যৌন উদ্দেশ্য, পারদর্শিতা অনেক সময়ই পূর্ণতা পায় না। যা দাম্পত্য সম্পর্কে সরাসরি প্রভাব ফেলে। যদিও রোগটি নিউরোডেভলপমেন্টাল তবও এটাকে বলা চলে যতগুলো নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার আছে তার মধ্যে এই এডিএইচডি চিকিৎসা করালে ভালো হয়।

অর্থাৎ রোগটির প্রগনোসিস বা সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা ভালো। সেক্সুয়াল ডিজফাংশন এবং দাম্পত্য সম্পর্ক বা রিলেশনাল ডিসট্রেস উইথ স্পাউজের চিকিৎসা করতে গেলে এই বিষয়টি মাথায় রাখা প্রয়োজন যে সমস্যায় আক্রান্ত মানষটি এডিএইচডি রোগে ভুগে থাকতে পারেন।

মানসিক বিশেষজ্ঞ ছাড়াও যারা যৌন রোগের চিকিৎসা করেন তাদের মনে রাখতে হবে যৌন রোগে ভোগা মানুষটি যদি আগে থেকেই এডিএইচডির রোগী হন তাহলে তার চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

রোগীর পরিচিতজন বা আশপাশের মানুষদের বোঝার সুবিধার্থে এডাল্ট এডিএইচডির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য এখানে তলে ধরেছি :-

  • সময় ব্যবহারে পারদর্শী কম
  • ধৈর্য ধরে দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ দেওয়া লাগে এমন কাজে অসমর্থ
  • সহজেই হাতের কাজ ফেলে অন্যদিকে মনোযোগ চলে যাবে
  • অন্যের সাথে যোগাযোগ যেমন ফিরতি কল করা, ই- মেইলের জবাব দেওয়া বারবার ভুলে যাবেন
  • অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত কথা বলা
  • দরকারে বসে থাকতে না পারা

এছাড়াও আরো অনেক বৈশিষ্ট্য আছে। তবে ওপরেরগুলো সহজেই চোখে পড়ার মতো। তাই এই বিষয়গুলোর ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হবে।

লেখক : ডা. আতিকুর রহমান, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ
সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

  • চঞ্চলতা কখন রোগ? কী করে বুঝবেন? চিকিৎসা কেমন? শিশুদের ক্ষেত্রে শিক্ষক ও পরিবারের ভূমিকা কী? ছোটবেলার অতি চঞ্চলতা বয়সকালে কেমন প্রভাব ফেলে? এরকম বহু প্রশ্নের উত্তর জানতে এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সাজানো মাসিক মনের খবর জানুয়ারি ২০২২ সংখ্যাটি সংগ্রহ করুন। প্রয়োজনে কল করুন : 01797296216 এই নাম্বারে।
Previous articleঅতি চঞ্চল ও অমনোযোগী শিশু : ভবিষ্যত কী?
Next articleমানুষ দেখলে ভয় লাগে, কারো সামনে কথা বলতে পারি না
ডা. এস এম আতিকুর রহমান
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here