মৃগীরোগের সাথে মানসিক রোগের সম্পর্ক

শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

বহু বছর ধরে ধারণা করা হত এপিলেপ্সি বা মৃগী রোগ মস্তিষ্কের একটি রোগ যেখানে খিঁচুনি হয় এবং এই খিঁচুনি নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করাই ছিল এপিলেপ্সি রোগের মূল চিকিৎসার উদ্দেশ্য। কিন্তু গত দুই দশকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ একমত হয়েছেন যে, এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগের প্রধান উপসর্গ খিঁচুনি কিন্তু প্রতি ৩ জন এপিলেপ্সি রোগীর ১ জনের মানসিক রোগ সহযোগী হিসেবে থাকে।

গবেষণায় এটা প্রমানিত হয়েছে, এপিলেপ্সি এবং মানসিক রোগের সাথে একটা দ্বিমুখী সম্পর্ক রয়েছে। এর কারণ হিসেবে ধরা হয় ব্রেনের কর্টিকাল উচ্চসংবেদনশীলতা, ব্রেনের কেমিক্যাল সাবস্টেন্স GABA  এর ঘাটতি এবং Glutamate এর আধিক্য।

মৃগী রোগ এর সাথে যেসব মানসিক রোগ খুব বেশি দেখা যায় তা হল, মেজর ডিপ্রেসিভ ডিসঅর্ডার বা বিষন্নতা (৫০%), উদ্বিগ্নতা বা দুশ্চিন্তা, এটেনশন ডেফিসিয়েন্ট হাইপারএক্টিভিটি বা অমনোযোগীতা (৫০-৭৫%) এবং অতিচঞ্চলতা, এবং সাইকোসিস।এসব রোগী দের মধ্যে আত্নহত্যার প্রবণতা বেশি।

এপিলেপ্সির সাথে মুড ডিজর্ডার এর রোগীর আত্নহত্যার ঝুকি ৪২ গুণ বেশি  এবং যাদের এংজাইটি ডিজওর্ডার আছে তাদের ১২ গুণ বেশি।সাধারণত এপিলেপ্সি সনাক্ত হওয়ার পর প্রথম ৬ মাসে আত্নহত্যার হার বেশি। মৃত্যু হার ও বেশি সাধারণ মানুষের তুলনায় প্রায় ১১ গুন এবং ৭৫% এপিলেপ্সি রোগী যাদের এক বা একাধিক মানসিক রোগ থাকে বিশেষত বিষন্নতা এবং মাদকাসক্তি তাদের মৃত্যু হার বেশি।

মৃগীরোগের চিকিৎসায় মানসিক রোগের( যদি থেকে থাকে) অনেক প্রভাব পরিলক্ষিত – মৃগী রোগ শুরু হওয়ার আগে থেকে যদি কারো মুড ডিজর্ডার থাকে, তবে তার ক্ষেত্রে ট্রিটমেন্ট রেজিন্ট্যাস এপিলেপ্সি হওয়ার ঝুঁকি বেশি। একটা গবেষণায় এসেছে,৭৮০ জন এপিলেপ্সি রোগীর ২০ মাসের উপর ফলো আপ করার পর দেখা গিয়েছে, যাদের মানসিক রোগ ছিল এপিলেপ্সির সাথে তাদের ২ গুন বেশি ট্রিটমেন্ট রেজিন্ট্যাস ডেভেলপ করেছে।

বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন থাকলে তাদের মৃগী রোগ এর ওষুধ বা এন্টিএপিলেপ্টিক ওষুধ ঠিকভাবে গ্রহণ করে না ,বন্ধ করে দেয়। মানসিক চাপ বা স্ট্রেস মৃগীরোগের জন্য একটা ট্রিগার ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে।চাপ মোকাবেলার ক্ষমতা কম থাকলে বা মুড/ এংজাইটি ডিজওর্ডার এর ইতিহাস থাকলে খিচুনি বারবার হওয়ার প্রবণতা বাড়ায়। এমনকি মানসিক রোগের উপস্থিতি থাকলে খিচুনি র জন্য যে ওষুধ দেয়া হয়, তা সতর্কতার সাথে নির্বাচন করতে হয়।

এপিলেপ্সি সনাক্তকরণে তাই সাইকিয়াট্রিক বা মানসিক সমস্যা আছে কিনা তাও যাচাই করা এখন অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ। রোগ নির্ণয় এর সময় রোগীর বা তার পরিবারের কারো মানসিক রোগের  পূর্ব ইতিহাস আছে কিনা, প্রয়োজনে বিভিন্ন সাইকোমেট্রিক টুলস বা স্কেল ব্যবহার করে মানসিক সমস্যা নির্নয় করে চিকিৎসার আওতায় আনা উচিত। সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থা মৃগীরোগীদের জীবন যাত্রার মান বাড়াতে সহায়ক হবে।

লেখক : ডা. সাদিয়া আফরিন
শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব মেন্টাল হেলথ, ঢাকা

Reference :
A review : Psychiatric comorbidities in new onset Epilepsy : should they always be investigated?
Author
Andres M. Kanner, MD
Department of Neuorology
University of Miami, Miller School of Medicine, United States

লেখকের অন্যান্য লেখা পড়তে ক্লিক করুন এখানে :

সূত্র : মাসিক মনের খবর জুলাই ২২’ সংখ্যা। 

  • মাসিক মনের খবর প্রিন্ট ম্যাগাজিন সংগ্রহ করতে চাইলে কল করুন : 01797296216 এই নাম্বারে। অথবা মেসেজ করুন পেজের ইনবক্সে। মনের খবর অনলাইনে লেখা পাঠাতে পারেন monerkhaboronline@gmail.com এই ঠিকানায় অথবা হোয়াটসঅ্যাপ  01844618497 নাম্বারে।

/এসএস/মনেরখবর/

Previous articleক্রীড়াবিদদের খেলাযোগ ও মনোস্বাস্থ্য
Next articleমানসিক রোগ : বার্ধক্যে যারা থাকেন তাদের প্রতি পরিবারের দায়িত্ব
শিশু ও কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী রেজিস্টার- জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here