বন্ধুদের আড্ডা, মানসিক চাপ, প্রেমে ব্যর্থতাসহ নানান কারণে কিশোর-কিশোরীরা মাদকের দিকে পা বাড়ায়। আদরের সন্তান একসময় মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। চতুর্মূখি সমস্যার সম্মুখীন হন পরিবারের দায়িত্বশীলরা। তাই আগে থেকেই পরিবারের সচেতন থাকা দরকার। এরপরও মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে আসক্তি কাটাতে পিতা-মাতাকে সন্তানের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে মাদকবিরোধী এক পরামর্শ সভায় অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এ আহ্বান জানান।
সভায় অংশগ্রহণ করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মোহিত কামাল, সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার, সহযোগী অধ্যাপক অভ্র দাশ, বিএসএমএমইউ এর অধ্যাপক ডা. সুলতানা আলগিন, কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রের আবাসিক চিকিৎসক মো. রাহেনুল ইসলাম, বিএসএমএমইউয়ের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সরদার আতিক, একই বিভাগের আরেক সহকারী অধ্যাপক ফাতিমা মারিয়া খান প্রমুখ।
এসময় মনোশিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যকি অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল বলেন, করোনায় অনলাইন স্কুল চালু করতে হয়। এতে শিশুরা অবাধে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পায়। এতে তাদের নানান জায়গায় বিচরণ ঘটে, তারা সেদিকে মজা পায়। মানুষের ব্রেন যেদিকে মজা পায়, সেদিকে ছোটে, মাদকের মতো। যখন অনলাইনে আসক্ত হয়ে যাবে, তখন চট করে ইন্টারনেট–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, ফোন কেড়ে নেওয়ার মতো কাজ করা যাবে না। সন্তানকে একটি রুটিন দিতে হবে যে সে কতক্ষণ সময় ফোন ব্যবহার করতে পারবে। এ ছাড়া বই পড়া, গান শোনা, ঘুরতে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজের মধ্যে সংযোগ ঘটানোর মতো ব্যবস্থা করতে হবে, বিকল্প বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়াও দোষ না ধরে সন্তানের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সন্তানের যেকোনো আসক্তি থেকে মুক্তির জন্য অভিভাবকের আবেগ বা আচরণও নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেখলা সরকার বলেন, নেশার খপ্পরে পড়লে তা জালের মতো জড়িয়ে যায়। যত সময় যায়, এই জাল তত বেশি জড়াতে থাকে। সামাজিক, শারীরিক ও মানসিক দিক বিবেচনায় নিয়ে একজন মাদকাসক্তের চিকিৎসা করা হয়। এ চিকিৎসাপ্রক্রিয়ায় পরিবারেরও সহায়তা প্রয়োজন।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক অভ্র দাশ এক তরুণির প্রশ্নের উত্তরে বলেন, মাদক শুধু শারীরিক ক্ষতিই করে না, এটা মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করে। অনেকে হয়তো মাদক থেকে ফিরে আসে, কিন্তু মস্তিষ্কে প্রভাব থেকে যায় এবং আচরণগত পরিবর্তন দেখা যায়। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন।
মাদকাসক্তের চিকিৎসার পাশাপাশি সাইকিয়াট্রিক চিকিৎসাও জরুরি উল্লেখ্য করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক সুলতানা আলগিন বলেন, ওসিডি বা চিন্তাবাতিক ও বাধ্যতাধর্মী আচরণ (শুচিবাই) থেকে মুক্তি পেতেও মানুষ মাদক গ্রহণ করে থাকে।
কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রের আবাসিক চিকিৎসক মো. রাহেনুল ইসলাম বলেন, মাদক থেকে পুরোপুরি ভালো থাকার বিষয়টি আজীবনের যুদ্ধ।
বিএসএমএমইউয়ের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সরদার আতিক শিশুদের শাসন করার বিষয়ে বলেন, গায়ে হাত তোলা যাবে না। সন্তানকে শাসন করা ও বন্ধুত্বের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট মাত্রা বজায় রাখার কথা বলেন। তিনি বলেন, শিশুর সঙ্গে গল্প করতে হবে, তার জগতকে বুঝতে হবে।
একই বিভাগের আরেক সহকারী অধ্যাপক ফাতিমা মারিয়া খান জানান, বাচ্চাদের লালনপালন বা সন্তানের মানসিক অসুস্থতা থাকলে সে বিষয়ে পরিবারের জন্যও থেরাপির ব্যবস্থা আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্বিবদ্যালয়ে।
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে শনিবার (২১ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে মাদকবিরোধী আন্দোলনের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘আসুন মাদকমুক্ত থাকি’ শীর্ষক মতবিনিময় ও পরামর্শ সহায়তা সভা অনুষ্ঠান হয়। এতে বক্তারা আলোচনা ও দর্শকদের প্রশ্নের জবাবে পরামর্শ প্রদান করেন। এছাড়াও আলোচনা অনুষ্ঠানের আগে বিনা মূল্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা পরামর্শ ও চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেন।
সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর বিশেষ ক্রোড়পত্র সমন্বয়ক সাইদুজ্জামান রওশন।
/এসএস/মনেরখবর/