প্রশ্ন : বিষণ্ণতা কি এতই মারাত্মক রোগ যে, এটি বছরের পর বছর একজন কিশোর-কিশোরীকে ঘরবন্দী ও এগোরাফোবিয়ায় রাখতে পারে?
তাসফিয়া (ছদ্মনাম)
পরামর্শ : প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। প্রশ্নে বিষণ্ণতার কথার উল্লেখ এর বেশ গুরুত্ব বুঝা যায়। প্রথমেই বুঝতে হবে আসলে বিষণ্ণতা কি? বাংলায় এবং শব্দার্থ করলে দাঁড়ায় যখন মনমরা বা মন বিষাদপূর্ণ থাকা, কমপক্ষে ২ সপ্তাহ ধরে স্থায়ী হয়।
সাধারণত কোনো কারণে মন সবসময় খারাপ থাকে, মনের স্পিড বা গতি থেমে যায়। কাজ কর্মের প্রতি অনীহা দেখা দেয়, রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। অতীতের কথা চিন্তা করে মনে অপরাধবোধ জাগে, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখে। মনে হয়, তখন আমরা তাকে বিষণ্ণতা বলি।
বর্তমান বিশ্বে সব অসুস্থের তালিকার মধ্যে ডিপ্রেশনের স্থান দ্বিতীয় এবং আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই সব অসুখের তালিকায় প্রথম হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রতি বছরই বিষণ্ণতা সমাজে বেড়েই চলেছে। তাহলে বুঝা যাচ্ছে ডিপ্রেশন দিন দিন মারাত্মক আকার রূপ ধারণ করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বর্তমানে সাধারণভাবে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন তার জীবদ্দশায় কখনো না কখনো বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়। বিষণ্ণতার ধরণ দেখলে দেখা যায়। যার প্রকারভেদ চার রকমের। যেমন mild (মৃত), moderate (মাঝারী মধ্যম), severe (মারাত্মক) Ges severe with psychosis ( মারাত্মক এবং সাথে যখন হ্যালুসিনেশন বা ডিলুশন থাকে।)
তাহলে কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিষণ্ণতা মারাত্মক ছাড়াও মৃদু বা মাঝারী রকমেরও পরিলক্ষিত হয়। একজন কিশোর বা কিশোরী ডিপ্রেশনের কারণে বছরের পর বছর ঘরবন্দী থাকতে পারে না, তার কারণ ডিপ্রেশন হচ্ছে অটোরেগুলেশন অর্থাৎ সাধারণত দেখা যায় তিন থেকে ছয় মাস ভুগার পর ডিপ্রেশন আপনা আপনি ভালো হয়ে যায়। কিন্তু কিছুদিন ভালো থাকার পর আবার বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়। চিকিৎসা না করলে বছরের পর বছর এভাবে চলতে থাকে।
তবে চিকিৎসাহীন অবস্থায় থাকলে যেকোনো সময় সিরিয়াস রূপ নিতে পারে এবং ১০-১৫ শতাংশ রোগী আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে। কিছু রোগী ভালো হয় আবার বেশির ভাগ রোগীরা চিকিৎসায় সুস্থ থাকে। অতএব, বলা যায় Depression is a reatilole diseasel বিষণ্ণতায় কখনো এগারাফোবিয়া রাখতে পারে না। কারণ এগারাফোবিয়া হচ্ছে anrictly disorder এবং একটি প্রকারভেদ।
তবে অনেকসময় এগারাফোবিয়া ডিপ্রেশনের উপ হিসবে আসতে পরে। ডিপ্রেশন এগারাফোবিয়া আসে না।
শেষে এটাই বলব ডিপ্রেশন নিয়ে টেনশনের কিছু না; কারণ এটি এমন একটি রোগ যা চিকিৎসাধীন থাকলে রোগী ভালো থকে বা সুস্থ থাকে।
সুস্থ থকার রহস্য সবসময় হাসিখুশিতে থাকা, খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করা বা ব্যায়াম করা, কাজকর্মে ব্যস্ত থাকা। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, টেনশন মুক্ত থাকা। তবেই বিষণ্ণতা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।
পরামর্শ দিয়েছেন,
অধ্যাপক ডা. মহাদেব চন্দ্র মন্ডল
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও সাবেক পরিচালক
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।
সূত্র : ‘মাসিক মনের খবর’ মার্চ ২০২২ সংখ্যা
- মনেরখবর.কম এর প্রশ্ন-উত্তর বিভাগে, মানসিক স্বাস্থ্য, যৌন স্বাস্থ্য, মাদকাসক্তি সহ মন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আপনার কোনো জানার থাকলে বা প্রশ্ন থাকলে বা বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দরকার হলে monerkhaboronline@gmail.com এ মেইল করতে পারেন অথবা মেসেজ করতে পারেন মনের খবর ফেসবুক পেজের ইনবক্সে এবং 01844618497 হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে।
এছাড়া মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন সংগ্রহ করতে কল করুন : 01797296216 এই নাম্বারে।
/এসএস/মনেরখবর