ARDS – করোনার একটি জটিলতা

ARDS - করোনার একটি জটিলতা
ARDS - করোনার একটি জটিলতা

পঁয়তাল্লিশ বয়সের একজন ভদ্রলোক হাসপাতালে ভর্তি হলেন শ্বাসকষ্ট নিয়ে। তিনি জ্বরে ভুগছিলেন দশ দিন যাবত। ছয় দিন আগে থেকে তার শুকনো কাশি শুরু হয়। এর জন্যে তিনি সাধারণ মেডিসিনও খেয়েছেন। সমস্যা না কমার কারণে তিনি চিকিৎসকের নিকট যান। চিকিৎসক সেই ভদ্রলোকের কভিড টেস্ট করান। টেস্ট পজিটিভ। তার বুকের এক্সরে’তেও নিউমোনিয়া পাওয়া যায়। শ্বাসকষ্ট বাড়ার কারণে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হলেন।

ভর্তির সময় তার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ছিলো ৮৪%. চিকিৎসক মিনিটে চার লিটার অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা শুরু করলেন। সাথে ভালো এন্টিবায়োটিক এবং এন্টি থ্রমবোটিক মেডিসিনসহ নানা ধরনের মেডিসিন শুরু করলেন। অক্সিজেন স্যাচুরেশন খুব একটা না বাড়াতে চিকিৎসক অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে শুরু করলেন। মিনিটে ছয় লিটার তারপর মিনিটে দশ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন দেয়া হলো। কিন্তু অক্সিজেন স্যাচুরেশন বাড়ছিলো না। চিকিৎসক আর্জেন্ট বুকের এক্সরে করে দেখলেন বুকের দুই পাশই সাদা হয়ে আসছে। চিকিৎসক আর দেরি না করে তাকে আই সি ইউ তে রেফার্ড করলেন।

আমরা এই কন্ডিশনটিকে বলে থাকি ARDS অর্থাৎ Acute Respiratory Distress Syndrome. ARDS অর্থাৎ Acute Respiratory Distress syndrome হলো এমন একটি জটিলতা যেখানে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা এতটাই কমে যায় যে তা শরীরের অন্যান্য অংগগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহে ব্যার্থ হয়। যার ফলে শরীরে শরীরে তীব্র অক্সিজেনের স্বল্পতা দেখা দেয়। অক্সিজেনের স্বল্পতার কারনে এক দিকে Respiratory Failure অর্থাৎ ফুসফুসের কার্য অক্ষমতা দেখা দেয়, অপরদিকে শরীরের অন্যান্য অংগগুলো যেমন কিডনি, হার্ট, মস্তিষ্কেরও কার্যক্ষমতা কমতে থাকে।

ARDS নামক জটিলতা কি কারণে এবং কেন হয় সেটার ব্যাপারে অনেক মতবাদ আছে। তারমধ্যে, গবেষণায় দেখা গেছে কিছু কিছু নিউমোনিয়ার জটিলতার ফলে ARDS হয়ে থাকে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো SARS-COV-2 অর্থাৎ করোনা ভাইরাস দিয়েও ARDS নামক জটিলতা দেখা যাচ্ছে, যা কিনা কভিড-১৯ রোগীদের মৃত্যুর অন্যতম কারন। কভিড-১৯ এ আক্রান্ত যেসকল রোগীদের প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট থাকে তাদের ব্যাপারে আমারা চিন্তা করে থাকি ARDS নিয়ে। এধরনের রোগীদের শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমতে থাকে যা কিনা আমরা পালস অক্সিমিটার নামক একটি ছোট মেশিন দিয়েই দেখতে পারি।

ARDS এর ক্ষেত্রে আরো একটা ঘটনা লক্ষ্য করা যায়, তা হলো রোগীদের অক্সিজেনের ডিমান্ড সময়ের সাথে বাড়তে থাকে। অর্থাৎ রোগীদের যতই অক্সিজেন দেখা হোক না কেন তাদের অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিকে আনা কষ্টকর হয়ে পড়ে। ARDS জটিলতা নির্ণয়ের জন্য আমরা সাধারণত রক্তের অক্সিজেনের পরিমাণ মেপে থাকি। তাছাড়া বুকের এক্সরে এবং সিটি স্ক্যান নামক পরীক্ষা করে থাকি। এই পরীক্ষায় বুকের দুই পাশের অনেক এলাকা জুড়ে সাদা হয়ে যায়। আমরা কোন রোগীর ARDS ধারণা করা মাত্রই অনেক বেশি সাবধান হয়ে যাই। রোগীকে অক্সিজেন দেয়া শুরু করি। রোগীর জন্য আই সি ইউ ব্যাবস্থা করে থাকি। যেহেতু ARDS এর রোগীদের ফুসফুসের কার্যক্ষমতা দ্রুত কমতে থাকে তাই এধরনের জন্য কৃত্তিম শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যাবস্থা করে থাকি অর্থাৎ ভেন্টিলেটর। ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে অনেক বেশী পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

আমেরিকার একটি গবেষণায় দেখা গেছে যেসকল কভিড-১৯ রোগীদের ভেন্টিলেটর সাপোর্ট লেগেছে তাদের প্রায় ৮৮% রোগী মৃত্যুবরণ করেছে। এর অর্থ হলো ARDS নামক জটিলতায় আমরা যতই অক্সিজেন দেই না কেন, যতই আই সি ইউ বানাই না কেন মৃত্যর ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই আমাদের আগে থেকেই অনেক সতর্ক হতে হবে। রোগের সংক্রমণ রোধ করতে হবে। সন্দেহজনক রোগীদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরীক্ষা করে সবার থেকে আদালা করতে হবে। যাদের কভিড-১৯ পজিটিভ তাদেরও দেরী না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করতে হবে। যাদের প্রয়োজন তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। সবার মাঝে সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে।

সবশেষে বলতে চাই, কভিড-১৯ থেকে আপনি নিজেকে এবং আপনার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে আপনাকেই দ্বায়িত্বশীল হতে হবে। সচেতন হোন। ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleকরোনা থেকে সেরে ওঠার পর চ্যালেঞ্জগুলো কী?
Next articleকোয়ারেন্টিনে মানুষ ‘উদ্ভট স্বপ্ন’ দেখছে কেন?
এমবিবিএস, এমসিপিএস (মেডিসিন), এমআরসিপি( ইউকে), এমডি(চেস্ট)। কনসালটেন্ট - মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিভাগ, আজগর আলী হাসপাতাল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here