যুক্তরাজ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় প্রধানমন্ত্রীর নতুন অঙ্গীকার

যুক্তরাজ্যে মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্বন্ধে জানতে একটি জরিপ করা হয়। এই জরিপের মাধ্যমে দেখা যায় যে সম্পূর্ণ জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে অথবা কোন না কোন সময় তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এই সপ্তাহে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার চিকিত্সার যে প্রধান প্রধান অবহেলা গুলো রয়েছে তা মোকাবিলা করার অঙ্গীকার প্রকাশ করেছেন।
থেরেসা মে বলেন যে তিনি সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করলে তিনি বিদ্যমান মানসিক স্বাস্থ্য আইনটি বাতিল করবেন। তিনি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার বৈষম্য দূর করতে নতুন নীতিমালার প্রণ্যন করবেন বলে জানিয়েছেন, এবং বলেন যে আরো ১০০০০ এনএইচএস কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।
সংরক্ষণশীলরা বলেন যে তাদের উদ্বেগের বিষয়টি হল পুলিশ কারাগারে যারা বন্দি তাদের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান সম্পর্কিত তথ্য প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে কমপক্ষে একজন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যারা যেসব শিশুরা উদ্বিগ্নতা এবং বিষণ্নতায় ভুগছে তাদের খুঁজে বের করবে এবং প্রাথমিক সহায়তা প্রদান করবে। সমালোচকরা অবশ্য বলছেন যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কোন নতুন তহবিল ঘোষিত হয়নি।
দ্যা মেন্টাল হেলথ চ্যারিটি সেন এর প্রধান নির্বাহীমার্জরি ওয়ালেস প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারটিকে স্বাগত জানান কিন্তু তিনি বলেন, “এখান এমন একটি প্রতিশ্রুতি থাকা উচিৎ যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা পুরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান এবং সেবা সবসময় প্রস্তুত থাকবে। ভবিষ্যতে মানসিক স্বাস্থ্যের উচ্চাভিলাষী এবং প্যানোরামিক দৃষ্টিভঙ্গি মানসিক সেবাগুলির কিছু বিপজ্জনক ফাটল ও ত্রুটির উপর চিত্র আঁকছে, যা এখন অনেকেই অনুভব করছে। সারা দেশে মানসিক রোগীদের জন্য কয়েকটি বেড রয়েছে। বিপদে পড়া মানুষদের জন্য পুলিশই প্রথম অবলম্বন”।
গত মাসে তথ্য অনুরোধের স্বাধীনতার মাধ্যমে পাওয়া তথ্যগুলি দেখিয়েছে যে, এনএইচএস বলেছে ইংল্যান্ডে মানসিক স্বাস্থ্য খাতে ২০২১ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের প্রয়োজন কিন্তু বর্তমানে যুক্তরাজ্যের চারটি অঞ্চলে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা খাতে বরাদ্দ অর্থের চেয়ে ৪.৫ মিলিয়ন ইউরো কম করে দিয়েছে।
মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে মেন্টাল হেলথ ফাউন্ডেশন এই সপ্তাহে একটি জরিপ করেছে যেখানে ২৩০০ জন মানুষকে প্রশ্ন করা হয় অর্থাৎ ২৩০০ জন জরিপে অংশ নেয়, শুধুমাত্র ১৩ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য অবস্থা ভাল ছিল। প্রত্যেক দশজনের মধ্যে চারজন বলেছিলেন যে তারা বিষণ্নতায় ভুগছিলেন; একটি চতুর্থাংশ মানুষের প্যানিক আক্রমণ এর অভিজ্ঞতা ছিল; এবং কাজের বাইরে অধিকাংশ লোক প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ছিল।
যাদের সর্বনিম্ন আয়ের মাত্রা যে মাসে ১২০০ ইউরো কম তারা বা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি অথবা তারাই বেশি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। তাদের তুলনায় বেশি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে যাদের মাসিক আয় ৩৭০১ ইউরো।
সামগ্রিকভাবে, উত্তরদাতাদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। প্রতি দশজনের মধ্যে ৭ জন, যারা ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী যুবক, মহিলা এবং যারা একা বসবাস করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বেশি দেখা দেয়। জরিপে দেখা গেছে যে যাদের বয়স ৫৫ বছরের বেশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা সবচেয়ে ভাল। তাদের ভবিষ্যতে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়ার ঝুঁকি ও কম।
মেন্টাল হেলথ ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ বলে যে জরিপে যুক্তরাজ্যের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের যে অবস্থা পাওয়া গেছে তা অবশ্যই ক্ষতিকারক। ফাউন্ডেশন থেকে সরকারকে বলা হয় যে আগামী পাঁচ বছরে যুক্তরাজ্যের মোট স্বাস্থ্য-গবেষণা ব্যয় দ্বিগুণ করতে হবে।  যুক্তরাজ্যে স্বাস্থ্য খাতে যে অর্থ বরাদ্দ আছে তার ৫.৮ শতাংশ মানসিক স্বাস্থ্য সেবা খাতে বিনিয়োগ করতে হবে এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা রোধ করার জন্য একটি রাজকীয় কমিশন গঠন করতে হবে।
মানসিক ও স্বাস্থ্যগত সমস্যায় জড়িতদের আরো বেশি ব্যস্ত থাকার জন্য চার্চকে উত্সাহিত করে মাইন্ড এন্ড সোল ফাউন্ডেশনের পরিচালক ডাঃ কেট মিডলটন তিনি বলেন, “যুক্তরাজ্যের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আরো অনেক উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান বের হয়েছে তবে আমি স্বাগত জানাই সরকারকে যে তারা পরিস্থিতিটিকে খুব গুরত্ব সহকারে নিয়েছেন। এবং মানসিক স্বাস্থ্য সেবা সমূহকে আরো উন্নত করার জন্য পরিকল্পনা করছেন।
তিনি আরো বলেন, “যারা খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পর্যায়ে আছে তাদের জন্য খুব দ্রুত আমাদের ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ, চিকিৎসায় পরিবর্তন আনা উচিৎ যেন তারা জরুরি ভিত্তিতে তাদের প্রয়োজনীয় সেবা পেতে পারে। আমরা জানি যে যারা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে মোকাবিলা করছে তাদের সুস্থতার আশা করা যায়। তাদের সুস্থতা সম্ভব মানে তাদের যে অবস্থা আছে তার অনেক উন্নতি করা সম্ভব। আমরা মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের সমীচীনতার জন্য সাম্প্রতিক যে সাড়া পাওয়া গেছে পুরোপুরি সমর্থন করি, এবং আশা করি এটি প্রকৃত পরিবর্তন দেখার দিকে একটি প্রথম পদক্ষেপ”।
তথ্যসূত্র-
(https://www.churchtimes.co.uk/articles/2017/12-may/news/uk/pm-makes-pledge-on-mental-health)
কাজী কামরুন নাহার, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম

Previous articleপ্রায় দেড় বছর ধরে পায়ের তালু জ্বালাপোড়ায় ভুগছি
Next articleঅ্যানজাইটি ডিজঅর্ডার বা উদ্বেগজনিত রোগ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here