ঋণ ছোটদের মনে প্রতিহিংসার তৈরি করতে পারে এবং সরকারের অবশ্যই শিশুদের এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
এজেন্টরা ঘরের দরজায় আসে, ফোনে টাকা দাবি করে এবং আপনার পরিবার উচ্ছেদের স্বীকার হয়। যে কোন পিতা মাতার জন্য এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে তার সন্তানকে একা রেখে চলে যাওয়া অসম্ভব। ঋণগ্রস্ত পরিবারে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই কষ্টকর। এজন্যই এই শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা সপ্তাহে আমরা সরকারের কাছে ঋণগ্রস্থ পরিবার যেখানে একটি হলেও শিশু আছে সেসব পরিবারকে সাহায্য করার জন্য আইন প্রবর্তন করার কথা বলেছি।
ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস এর আনুমানিক ২.৪ মিলিয়ন ঋণগ্রস্থ পরিবারের শিশু ঘরের ভেতর বাস করে, বের হয় না। যেখানে তাদের বাবা মা একসাথে একাধিক ঋণদাতা দের টাকা দেয়া নিয়ে সমস্যায় থাকে, ইউটিলিটি কোম্পানি থেকে দোকান, ব্যাংক এবং বিভিন্ন কোম্পানিদের টাকা দেয়া নিয়ে বিপাকে থাকে।
বাচ্চাদের সোসাইটি এর উপর গবেষণা করে এই তথ্য প্রমাণিত হয়েছে যে, যেসব শিশুরা ঋণগ্রস্থ পরিবারে থাকে তারা ঋণ নেই এমন পরিবারে বসবাসরত শিশুদের তুলনায় ৫ গুণ বেশি অসুখী। এবং তাদের মনের মানসিক উন্নতি এবং প্রতিভার বিকাশে বেশ ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায় এই ঋণ।
ধারণা করা যাক এই ব্যাপারগুলো একটি শিশুর মনে কতটা চাপ সৃষ্টি করে, একটি শিশু বেইলিফ দের টোকায় দরজা খুলল, ফোন ধরেই শুনতে হল পাওনাদার রা টাকা চাচ্ছে, কিংবা কোন কোম্পানি তার পিতা মাতা কে টাকার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছে অথবা তার বাবা মা আবার টাকা নিয়ে কারোর সাথে তর্ক করছে।
আমরা জানি শিশুরা মাঝে মাঝে কিছু কিছু ব্যাপারে নিজেদের দায়ী করে থাকে যেখানে তাদের কোন দোষ নেই, মাঝে মাঝে এই ঋণ এর কারণ তারা নিজেদের মনে করে। ঋণগ্রস্থ পরিবারে বসবাসরত শিশুদের সাথে কথা হয়েছিল তারা নিজেদের দোষী মনে করে তাদের বাবা মা পরিবারকে সাহায্য করতে পারে না বলে। এবং তার তাদের নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং নিজেকে প্রাধান্য দেয় না।
কিছু কিছু শিশুদের জন্য ঋণ মানে অসামাজিক হয়ে থাকা, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাওয়া থেকে বিরত থাকা, খেলাধুলা, স্কুল এর বিভিন্ন সফর থেকে নিজেকে বিরত রাখা, সামাজিক কিংবা পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে বিরত রাখা। তারা লজ্জা বোধ করে যখন দেখে যে বিভিন্ন জিনিস তার সহপাঠী কিংবা বন্ধুদের আছে কিন্তু তার নেই। তারা নিজেকে গুটিয়ে ফেলে। এই সবকিছুই শিশুদের মন এবং মানসিক চিন্তা চেতনার উপর বাজে ধরণের প্রভাব ফেলতে পারে।
কম টাকা উপার্জনকারী পরিবার গুলোতে ঋণ সংক্রান্ত ফাঁদে পড়া সহজ। যখন দেখা যায় যে বেতন কমে গেছে, কাজের সময় বেড়ে গেছে, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল দেয়া যাচ্ছে না, সন্তানের স্কুলের বেতন দেয়া যাচ্ছে না, কিংবা চাকরী চলে গেছে তখন স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ ভেঙ্গে পড়ে এবং টাকা ধার নেয়াই একমাত্র পথ বলে মনে হয়।
যদি একবার কেউ ঋণের ফাঁদে পড়ে যায় তখন খুব সহজেই এ থেকে উঠে আসা এবং আর্থিক অবস্থায় সচ্ছলতা আনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। টাকার সুদ প্রত্যেক মাসে দ্রুত বাড়তে থাকে এবং বেইলিফ রা টাকার জন্য বারবার হানা দেয় এতে ঋণের পরিমাণ বাড়তেই থাকে। পরিবারের সদস্যরা মাঝে মাঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না ছোটদের খাবারের খরচ, তাদের পড়ালেখার খরচ দিবে নাকি ঋণ পরিশোধ করবে।
ঋনগ্রস্থ হয়ে বসবাস করা অনেকটা চোখ খুলে দুঃস্বপ্ন দেখার মত কিন্তু এটা যে এমনই হতে হবে এমন কোন কথা নেই। আমরা সরকারের কাছে দাবি করছি যে ঋণগ্রস্থ পরিবার গুলোকে ১২ মাসের ‘অবকাশ’ দেয়া হোক। ঐ সময়টা তারা ঋণ সম্বন্ধিত যেকোন ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকবে এবং পরামর্শ নিবে কিভাবে এই ঋণ পরিশোধ করা যায়। এবং সুদের হার কমানো হবে, বেইলিফ দের মাধ্যমে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা বন্ধ করতে হবে।
এটি স্কটল্যান্ড এর ‘ডেবট অ্যারেঞ্জমেন্ট স্কিম’ এর আওতাধীন আইন মোতাবেক করা উচিত, যেখানে ঋণগ্রস্থ পরিবারগুলো তাদের সাধ্যমত ঋণ পরিশোধ করবে এবং সুদের হার চড়া হবে না। ঋণদাতা দের সাথে একমত হয়ে সময় নেয়া হবে এবং সুদের হার ঠিক করা হবে।
আমরা সংসদ সদস্যদের সাহায্য চাচ্ছি যেন এই ‘অবকাশ’ নামের সুবিধাটি বাস্তবায়ন করা যায়। আপনি আপনার এলাকার সংসদ সদস্য কে বলতে পারেন আপনার পাশে দাঁড়াতে এবং আরো পরিবারকে ঋণ নামক দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি দিতে।
তথ্যসূত্র- হাফিংটন পোষ্ট
(http://www.huffingtonpost.co.uk/matthew-reed/debt-is-damaging-children_b_14630460.html)
রুবাইয়াত মুরসালিন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম