নতুন বছরের শুরুটা একেক জনের একেক রকম। কেউ তার নিজের লেখা প্রথম বইটা শেষ করছে। কেউ হয়ত গাড়ি চালানোর লাইসেন্স করছে নতুন গাড়ি কেনার জন্য। কেউবা স্বপ্নের চাকরীর ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু এর মাঝে এসে যাচ্ছে দুশ্চিন্তা। গল্পে গল্পে অনেক আড্ডাতেই শোনা যায়, “ দুশ্চিন্তা আসে সেসব ব্যাপারে, যেসব ব্যাপারে আমরা সতর্ক বেশী।”
অল্পস্বল্প দুশ্চিন্তা স্বাভাবিক। কিন্তু নিস্ফল দুশ্চিন্তা আমাদের মনে আঘাত করে। এমনকি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক বছর আগে মেক্সিকোতে মনস্তাত্ত্বিক ট্র্যাসি কাহান বরফে ঘেরা পাহাড়ে স্কি প্রশিক্ষক ছিলেন। তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের প্রথমেই শেখাতেন, “যা থেকে দূরে থাকতে চাও, তাতে মনোযোগ দিও না। পাহাড়ের তীক্ষ্ণ পাথরে মনোযোগ দিলে সেখানেই গিয়ে পৌঁছবে শেষে।” যে কোন ধরণের বাঁধাতে মনোযোগ দেয়া, বারবার ভাবা, রোমন্থন করা– নিস্ফল দুশ্চিন্তা।
তবে দুশ্চিন্তাকে সফলতার লক্ষ্যে ইতিবাচকভাবে ব্যবহার সম্ভব। ইতিবাচক দুশ্চিন্তা বলা যেতে পারে। মনস্তাত্ত্বিক প্রচাস্কা এবং তার সহকর্মীদের মতে, “ পথে কি কি থাকতে পারে? ” – যে কোন পথে, কাজে এই প্রশ্ন করে আমরা পথের বা কাজের বাঁধাগুলো অনুমান করতে পারি। অতপর সেই বাঁধাগুলো এড়ানোর যৌক্তিক উপায় খুঁজে বের করতে পারি। উদাহরণ হিসেবে নতুন কোন সুষম খাদ্যাভ্যাস শুরুর কথা বলা যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই চকলেট, আইসক্রিম, ফাস্টফুড এই প্রক্রিয়ার বাঁধা স্বরূপ। তাই এগুলো থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে।
এক বিশেষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদেরকে নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী একটি লক্ষ্য ঠিক করতে বলা হয়। এরপর লক্ষ্যে পৌঁছাতে পথের তিনটি বাঁধা এবং সেগুলো অতিক্রম করতে তিনটি উপায় ভেবে বের করতে নির্দেশ দেয়া হয়।এতে খুবই ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়। দেখা গেছে, এ প্রক্রিয়ায় ভেবে তারা লক্ষ্যের প্রতি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী ছিল।
এই ইতিবাচক দুশ্চিন্তার অর্থ লক্ষ্যের পথে বাঁধাগুলো আগেই অনুমান করা, কিন্তু বাঁধার কথা ভেবে আবিষ্ট হওয়া নয়। আমরা যদি নেতিবাচক বিষয়গুলো বারবার ভাবতে থাকি; তবে ভয়, অসহায়ত্বের অনুভুতিগুলো আমাদের ব্যর্থতার পথে এগিয়ে দেয়।
তাই ভবিষ্যৎে যখনই কোন কাজে দুশ্চিন্তা আসবে, নিজেকে প্রশ্ন করুন– “ কীভাবে পথের বাঁধা দূর করব?” দুশ্চিন্তাকে পরিবর্তন করে ফেলুন বাঁধা দূর করার উপায়ে।
মনোযোগ বাঁধায় নয়, মনোযোগ রাখুন বাঁধা পেরুনোর উপায়ে।
(Diane Dreher এর Do you sabotage yourself with worry? প্রবন্ধ অবলম্বনে)
মাসাফি আহমদে ফেরদৌস অনিক