আমাদের চারপাশে শিশু নির্যাতনের বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনা আমরা দেখেছি। শিশু নির্যাতন নিয়ে আজকে আমরা কিছু জানার চেষ্টা করে দেখি, আরও একটু ভিন্ন ভাবে আমরা ভাবতে পারি কিনা। অনেকভাবে শিশু নির্যাতনকে ভাগ করা যেতে পারে। এর মধ্যে চারটি ভাগ আমরা দেখব।
১) শারীরিক নির্যাতনঃ এর প্রাদুর্ভাব প্রায় ৫-১০%। বাবা মাগণ তাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে ডাক্তারের কাছে এসে বলেন যে, দুর্ঘটনা জনিত কারণে বাচ্চাটি অসুস্থ কিন্তু বাচ্চাটি আসলে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত নয়। অনেক সময় পাড়া প্রতিবেশীরা নিয়ে আসেন বা বিদেশ থেকে পুলিশকে খবর দেন। বাচ্চাদের গায়ে বিভিন্ন দাগ থাকতে পারে এবং সেই দাগের সাথে বাবা মার প্রদত্ত ব্যাখ্যা মিলে না এবং ভালো করে জিজ্ঞাসা করলে বেশিরভাগই আটকে যান। এই দাগের কারণ পরিবারে অশান্তি, অল্প বয়স্ক মা, কম লেখাপড়া, অনাকাঙ্ক্ষিত বাচ্চা, বাবা মায়ের ব্যক্তিত্বের অসুবিধা, বাবা মায়ের মানসিক রোগ, বাচ্চার বিভিন্ন রোগ, জন্মগত ত্রুটিসহ প্রভৃতি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। শারীরিক নির্যাতন শিশুর সুস্থ বিকাশ অবশ্যই বাধাগ্রস্ত করে। দেরিতে ডাক্তারের কাছে যাওয়া, বাচ্চার অসুবিধার সাথে বাবা মায়ের অভিযোগের ব্যাখার সাথে মিলে না, বাবা মায়ের আচরণ দেখে ছাড়া ছাড়া মনে হয়, তখনই সন্দেহ করা দরকার এটা শিশু নির্যাতন কিনা। ডাক্তাররা এটা ধরতে পারলে তারপর দেখা দেয় আরেকটি সঙ্কট। যে বাবা মা নির্যাতন করছেন তারা চিকিৎসা করবেন তো! উন্নত দেশে শিশুদের নিরাপত্তার জন্য আইন ও তার যথাযত প্রয়োগ আছে। আমাদের এটা নিশ্চিত করা বেশ কঠিনই।
২) আবেগীয় নির্যাতনঃ এ ধরনের নির্যাতন শারীরিক না হলেও শিশুর বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। শিশুদের গুরুত্ব না দেওয়া, অবহেলা করা, বেশি যত্ন করা এই ধরনের নির্যাতনের মধ্যে পড়ে যা কিনা শিশুর বিকাশ অনেকাংশে বাধাগ্রস্ত করে। এই নির্যাতনের সাথে সাথে অন্য ধরনের কোনো না কোনো নির্যাতন থাকতে পারে। এটা সঠিক ভাবে নির্ণয় ও ব্যবস্থা নিতে না পারলে শিশুদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা হয় এবং পরবর্তীতে আচরণগত অসুবিধায় পরিণত হয় যা শিশুটির নিজের এবং তার সমস্ত পরিবারের মাথা ব্যথার কারণে পরিনত হয়। এর ফলশ্রুতিতে নেশা বা মাদক দ্রব্যে আসক্তি তৈরি হতে পারে বা জড়িয়ে পড়তে পারে।
৩) শিশু অবহেলাঃ এটা এক ধরনের শিশু নির্যাতন। এটা শিশুর শারীরিক, মানসিক অবহেলা, ঠিক মত যত্ন না নেওয়া, ঠিক সময়ে ঠিক জিনিস না দেওয়া বা দিতে অস্বীকার করা, ঠিক সময়ে চিকিৎসা না করানো ইত্যাদি। এটার জন্য বাচ্চার বিকাশ সাঙ্ঘাতিকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। এটা বাচ্চার শারীরিক বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ, সামাজিক প্রসারতা সবই বাধাগ্রস্ত করে। বাবা মা ছাড়া পরিবারের অন্যান্য সচেতন সদস্যদের সব সময় লক্ষ্য রাখা দরকার।
৪) যৌন নির্যাতনঃ যৌন নির্যাতন শিশুদের বিকাশকে সাঙ্ঘাতিকভাবে বাধাগ্রস্ত করে। আমাদের দেশে এর প্রাদুর্ভাব জানা নাই তবে বিদেশে এটা ১৫% পর্যন্ত দেখা গেছে। এটাও দেখা গেছে যে, মেয়ে শিশুরা পুরুষ শিশুদের তুলনায় তিন গুন বেশি নির্যাতিত হয় এবং পরিবারের পরিচিতরাই অপরিচিতদের থেকে বেশি এই কাজ করে থাকে। তবে এ সবই বিদেশের উপাত্ত আমাদের দেশের সঠিক উপাত্ত আমার জানা নাই। শিশুরা এটা বলতে সংকোচ করে এবং এটা তাদের মেনে নিতে সাংঘাতিক অন্তরদ্বন্দ্ব তৈরি হয় যার ফলাফল ভালো বলে দেখা যায় নাই।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।