কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা

0
10
কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা

ডা. মো. জোবায়ের মিয়া
সহকারী অধ্যাপক (সাইকিয়াট্রি)
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

এবারের বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্য’। সারাবিশ্বে ২৫ বছর ধরে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। The World Federation for Mental Health (WFMH)-এর প্রেসিডেন্ট মি. ইভবিজারোর মতে, কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা হলো: বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ৯৪ শতাংশ ব্যক্তির নিম্নরূপ উপসর্গ পরিলক্ষিত হয়।

  • কাজে মনোনিবেশ করতে না পারা। সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা।
  • স্মরণ রাখায় সমস্যা, এর ফলে কাজে গুরুতর ব্যাঘাত ঘটে এবং উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পায়।
  • বিষণ্ণতাজনিত কারণে বছরে ৩৬ কর্মদিবস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকে। ৫০ শতাংশ মানুষ বিষণ্ণতার চিকিৎসা গ্রহণ করেন না।
  • ৪৩ শতাংশ মানুষ তাদের মানসিক সমস্যার কথা প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। শারীরিক রোগেও

যেমন মানুষ অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনভাবে মানসিক রোগেও একই ক্ষতির শিকার হয়। চাকরি আমাদের ভালোভাবে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। যদি কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর না দেওয়া হয়, তবে কাজের মাঝে যে আনন্দ অথবা পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়েও তা উপভোগ করা যায় না।

কর্মস্থলে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার উদ্দেশ্য কী?

  • কর্মচারী এবং নিয়োগকর্তা উভয়পক্ষকে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে তথ্য প্রদান করা, যাতে তারা নিজেরা ভালো থাকার জন্য সচেষ্ট হয়।
  • মানসিক রোগ সম্পর্কে নেতিবাচক অভিব্যক্তি এবং কুসংস্কার পরিত্যাগ করা।
  • কর্মচারী এবং নিয়োগকর্তাদের

মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে বাধা অতিক্রম করার সাহস জোগানো। মানসিক স্বাস্থ্যবান্ধব কর্মপরিবেশ তৈরির শ্লোগান ছড়িয়ে দেওয়া।

মানসিক রোগের কুসংস্কারাচ্ছন্ন দৃষ্টিভঙ্গিগুলোর পরিবর্তন আবশ্যক

  • মানসিক রোগীদের আক্রমণাত্মক এবঃ বিপজ্জনক না ভাবা।
  • গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত করে পরিবেশন না করা। তারা কখনোই ভালো হবে না এটা কাউকে না বলা।
  • তাদের দুর্বলতা নিয়ে উপহাস না করা।
  • তুমি আর কখনোই ভালো চাকরি পানে না এ কথা না বলা।

কাজের একঘেয়েমি দূর করতে প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট কাজ বন্ধ করে হালকা ব্যায়াম, যেমন- হাত-পা নাড়াচাড়া, ঘাড় সামনে-পেছনে, ডানে-বাঁয়ে ঘোরানো, ওঠা-বসা করা যেতে পারে। অনেক দেশে দেখেছি, কিছুটা সময় কাজ বন্ধ করে মিউজিকের তালে তালে এই ব্যায়ামগুলে করা হয়। অফিসের বড় কর্তা থেকে চাপরাশি সবাই একযোগে এটি করে থাকেন। অফিসকক্ষে যেন পর্যাপ্ত আলো- বাতাস, বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্যানিটেশনের সুব্যবস্থাপনা থাকে সেদিকে নজর দিতে হবে।

এই বিষয়গুলো শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। বছরে একদিন অন্তত পরিবার-পরিজনসহ সহকর্মীদের নিয়ে একত্রে সবাই আনন্দ উপভোগ করতে পারে সেই ব্যবস্থা রাখতে হবে। যেমন একদিন ঘুরতে যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির আয়োজন করা যেতে পারে। তাহলে কাজে আগ্রহ আসবে। প্রতিষ্ঠানকে নিজের মনে হবে। কর্মস্থলে মনোযোগ থাকবে। উদ্বেগ, হতাশাজনিত মানসিক রোগ থেকে উপশম পাবে।

Previous articleনেতিবাচক আবেগ সহজে গ্রহণ করা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম!
Next articleবাসের ধাক্কা ও বাচ্চাদের চিৎকার… এরপর থেকে সহজে ঘুম আসে না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here