আমার বয়স ২৩ বছর। আমি অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। ১ম বর্ষের মাঝামাঝি বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ইয়াবা সেবন শুরু করি। প্রথমে মাঝে মাঝে এবং ১/২ টাতে সীমাবদ্ধ ছিল। কিছুদিন পর নিয়মিত এবং পরিমাণে বেড়ে ৮/১০টা হয়ে যায়। আমার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসে; যেমন, ভাত খেতে না চাওয়া, রাত জেগে থাকা, দিনে ঘুমানো ইত্যাদি। এসব অনিয়মের কারণে আমার মা—বাবা বিষয়টি টের পেয়ে যায় এবং আমাকে বকাবকি করে। আমি বিষয়টি অস্বীকার করে রাগারাগি করি, ভাঙচুর করি। পরবর্তিতে তারা গোপনে আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ৪—৩—২০১৫ থেকে ১—৬—২০১৫ এই ৩ মাস একটি রিহ্যাব সেন্টারে চিকিৎসা নেই। এরপর ২/৩ মাস ভালো থাকি। হঠাৎ পুরোনো বন্ধুদের সাথে একদিন আবার খেয়ে ফেলি। কয়েকদিন পর আবারও সেবন করি। এভাবে মাঝে মাঝে সেবন করতে থাকি। মনে করি আগের মতো খাবো না, মাঝে মাঝে খাবো। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে প্রায়ই ইয়াবা নিচ্ছি। আমি মাদকমুক্ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চাই। এমতাবস্থায় আমার কি করা উচিত জানালে উপকৃত হবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ দিয়েছেন,
ডা. মুনতাসির মারুফ
সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।
ডা. মুনতাসির মারুফ: প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন যে আপনার মাঝে এই সু—ইচ্ছেটি জাগ্রত হয়েছে যে আপনি মাদকমুক্ত জীবনে ফিরে যেতে চান। মাদকসেবীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা বা ফিরিয়ে আনার সবচেয়ে কঠিন ধাপটিই হচ্ছে মাদকসেবীদের স্বীকারোক্তি এবং ভেতর থেকে ভালো হওয়ার তাগিদ জাগানো। এই কঠিন ধাপটিই যখন পার হয়ে এসেছে, সেক্ষেত্রে বাকীটুকু পার হতে পারবেন বলে আশা করা যায়।
যারা চিকিৎসার মাধ্যমে মাদকের পথ থেকে দূরে সরে আসেন, তারা পরবর্তী বিভিন্ন কারণে আবারও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়তে পারেন। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে পারিবারিক, সামাজিক নানা চাপ, চাকরিচ্যুতি, সম্পর্কের টানা—পোড়েন, বিচ্ছেদ ইত্যাদি। পুনরায় মাদকাসক্তির আরেকটি অন্যতম কারণ হলো মাদকসেবী বন্ধুদের সাথে পুনরায় যোগাযোগ। মাদকসেবী বন্ধুটি যদি সুস্থ পথে ফিরে আসতে চায় এবং সেক্ষেত্রে আপনার সহযোগিতা চায়, তাহলে আপনার সহযোগিতা করা উচিত। কিন্তু তা না হলে মাদকসেবীদের থেকে দূরে থাকা অবশ্য কর্তব্য। প্রয়োজনে নতুন বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন এমন ব্যক্তিদের সাথে যারা মাদকমুক্ত। মাদকমুক্ত আত্মীয়—পরিজনের সাথে সুসম্পর্ক রাখুন ও নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। পারিবারিক আয়োজনে সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট হোন, পারিবারিক দায়িত্বের অংশীদার হোন। যেসব স্থানে মাদক সেবন করতেন, সেসব স্থান এড়িয়ে চলুন। “আগের মতো খাবো না, মাঝে মাঝে খাবো”-এ ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় নেই। মাঝে মাঝে খাওয়াই একসময় আসক্তির দিকে টেনে নিয়ে যাবে নিশ্চিত। সুতরাং, কখনোই আর মাদক নেবো না এই শপথে অটল থাকুন। নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী দৈনন্দিন জীবনযাপনের চেষ্টা করুন। সুষম খাবার খান। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। নিজেকে নিয়োজিত করুন সৃজনশীল ও সামাজিক কাজে।
মাদক থেকে দূরে থাকার কারণে প্রাথমিকভাবে শারীরিক—মানসিক তীব্র প্রতিক্রিয়া অসহনীয় হলে প্রয়োজনে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে কিছুদিনের জন্য ভর্তি হতে পারেন। এছাড়া সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিংয়ের জন্য মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, সাইকোথেরাপিস্ট অথবা কাউন্সেলরের শরণাপন্ন হোন।
[প্রতিদিনের চিঠি পর্বে দেয়া উত্তরগুলো কেবলমাত্র প্রাথমিক দিকনির্দেশনা। সঠিক ও পূর্নাঙ্গ চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের সাথে সরাসরি কথা বলে চিকিৎসা নিতে হবে।]
- মাসিক মনের খবর প্রিন্ট ম্যাগাজিন সংগ্রহ করতে চাইলে কল করুন : 01797296216 এই নাম্বারে। বার্ষিক গ্রাহক হতে চাইলে কল করুন 01865466594 এই নাম্বারে। অথবা মেসেজ করুন পেজেরইনবক্সে। লেখা পাঠাতে পারেন monerkhaboronline@gmail.com বা এই 01844618497 হোয়াসঅ্যাপ নাম্বারে।