আত্মহত্যার বড় একটি মানসিক অস্থিরতা বা অসুস্থতা। নানা কারণে মানুষের মন খারাপ হয় জীবন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ে তারপর আত্মহত্যার মতো সিদ্ধান্ত নেয়। সব সময় যে এই ধারাবাহিকতায় হয় তা কিন্তু না। মানসিক অসুস্থ না থাকলেও অনেক সময় কেউ কেউ আত্মহত্যা করে বসে। এমনকি আমিও একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলাম।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস (বিএপ) এর দ্বিতীয় জাতীয় সাইকিয়াট্রি কনফারেন্সে এক গোলটেবিল বৈঠকে এভাবেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও নির্মাতা, প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ পত্নী মেহের আফরোজ শাওন। মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ‘মনের যত্নে সবাই এক সাথে’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
সাইকিয়াট্রি কনফারেন্স : ‘মনের যত্নে সবাই এক সাথে’
নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মেহের আফরোজ শাওন বলেন, আমার জন্মদিন ভুলে গেছে আমার হাসবেন্ড। ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি। মনে করতে না পারায় আত্মহত্যার চেষ্টা করি। সেটা ঠিক মরে যাওয়ার চিন্তা থেকে করিনি। এটা ক্ষোভ থেকে মায়া পাওয়ার আসে। দুর্ঘটনা ঘটলে বা ঘটার মুখে থাকলে মানুষ সহমর্মি হয় সেই চিন্তা থেকে। কিন্তু হঠাৎ আমার মনে হলো আমি তো মরতে চাই না। আমার সন্তান আছে, সংসার আছে। আমি তাদের ছেড়ে যেতে চাই না। তখন তাকে গিয়ে বললাম আমার আজকে জন্মদিন ছিলো, তুমি ভুলে গেছ। এখন আমি তো অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলেছি আমাকে বাঁচাও।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাইকিয়াট্রিস্টস এর সভাপতি ব্রি. জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজ্যাবিলিটি প্রটেকশন ট্রাস্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোলাম রব্বানী, সার্ক সাইকিয়াট্রি ফেডারেশনের সভাপতি ও ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. গৌতম সাহা, ওয়ার্ল্ড সাইকিয়াট্রি এসোসিয়েশনের ট্রেজারার ও বিএপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. ওয়াজিউল আলম চৌধুরী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহাম্মদ নুরুল হুদা, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর সাবেক পরিচালক ও কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল, বিএসএমএমইউ এর মনোরোগ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও সিনিয়র অধ্যাপক মনের খবর সম্পাদক অধ্যাপক ডা. সালাহ্ উদ্দিন কাউসার বিপ্লব প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. জিল্লুর রহমান রতন।
উন্নত বিশ্বের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শাওন বলেন, উন্নত দেশগুলোতে যেকোনো রোগী চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে গেলে বলে দেওয়া হয় যিনি রোগী তার যেন প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্যের স্ক্রিনিং করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রামে-স্কুল পর্যায়ে সচেতনতার বার্তা পৌঁছানো দরকার। টেকনোলজির একটা খারাপ দিক হলো ডিভাইস আসক্তি, যে জিনিস যার নাগালে আসার কথা না, তা চলে আসা। আমার ক্লাস সেভেনের বাচ্চা যখন বলে মা আমার কেমন যেন লাগে। আমি সুইসাইডাল। আমি সঙ্গে সঙ্গে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম। আমার ছোট বাচ্চাকে হঠাৎ দেখি সামান্য কিছুতে রেগে যাচ্ছে। খাবার চেয়ে দু মিনিট দেরি হলে রেগে যাচ্ছে। আমি কিন্তু দেরি করিনি। ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছি। আমি এটা মনে করিনি যে, একটা থাপ্পর দিলে ঠিক হয়ে যাবে। এই মেসেজগুলো তো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে।
সাধারণ মানুষের ভুল ধারণা আছে সাইকিয়াট্রিস্টসের কাছে গেলেই ওষুধ দেন। আমি জানি ওষুধ কত জরুরি। আমার সন্তানদের খাইয়েছি, এখনো খাওয়াচ্ছি। অবশ্যই আমরা প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে ইনব্যালেন্স আছি। তবে যতক্ষণ সেটা অন্যের কষ্টের কারণ না হবে ততক্ষণ আমরা সুস্থ। কিন্তু আমার কারণে কারো কষ্ট হলে নিশ্চয়ই চিকিৎসকের স্বরনাপন্ন হতে হবে।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও সাহিত্যিক আনিসুল হক, এটিএন বাংলার চিফ এক্সিকিউটিভ এডিটর প্রখ্যাত সাংবাদিক জ ই মামুন, জলের গানের রাহুল আনন্দ, অভিনেতা মুকিত জাকারিয়া, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. অভ্রদাস ভৌমিক, ডা. মেখলা সরকার প্রমুখ।
/এসএস/মনেরখবর/