শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ছিল আন্তর্জাতিক ক্যান্সার দিবস। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ ক্যানসার কেয়ার কমিউনিটি সোসাইটি’ আয়োজন করে ক্যানসার লড়াকুদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে বিশেষ সভা ও সেমিনার।
‘একসাথে চলি ক্যানসার চিকিৎসায় বৈষম্য দূর করি’ স্লোগানকে সামনে রেখে এবার দিবসটি পালন করে ক্যানসার কেয়ার কমিউনিটি সোসাইটি। সেমিনারে ‘বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসা পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে বক্তারা আলোচনা করেন।
অভিজ্ঞতা বিনিময় পর্বে রায়না মাহমুদ নামে এক নারী ক্যান্সার রোগী নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বক্তব্য দেন। নিজের বক্তব্যে তিনি ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। রায়না মাহমুদ ২০১৯ সালে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তিনি বলেন, ক্যানসার রোগী ও তার পরিবারকে শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক— তিন ধরনের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হয়। এর মধ্যে ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসক-রোগীর মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ক্যানসার চিকিৎসার আট মাস পর আমার শরীরে আবার একই রোগ ফিরে আসে। এখনো চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি।
রায়না ছাড়াও আরো একাধিক ক্যানসারযোদ্ধা ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। ক্যানসার রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কেন ভারতসহ বিভিন্ন দেশে যেতে হচ্ছে, তা নিয়েও সরকার ও রাষ্ট্রের কাছে প্রশ্ন তোলেন তারা।
এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় অনুষ্ঠানে দক্ষ চিকিৎসকদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্যানসারের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন ক্যানসারজয়ী ও চিকিৎসকরা। অনুষ্ঠানে নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনার পাশাপাশি নানা করণীয় বিষয়েও সুপারিশ করেন ক্যানসারজয়ীরা। দেশের ক্যানসার চিকিৎসার বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার কথাও উঠে আসে আলোচনায়।
এসময় অভিনয়শিল্পী এবং মিস বাংলাদেশ ইউকে খেতাব পাওয়া সুলতানা সারা বলেন, শুধুমাত্র বাংলাদেশে ক্যানসার ডায়াগনোসিসে ভুল হচ্ছে— বিষয়টি কিন্তু মোটেও তা নয়। ব্যাংককে আমি নিজে ভুল ডায়াগনোসিসের ভুক্তভোগী। বাংলাদেশেও ভুল চিকিৎসার শিকার হই। তবে সবকিছুর পরও সেজেগুজে সব সময় ভালো থাকার চেষ্টা করি। কেননা, ক্যানসার লড়াইয়ে মানসিক জোর থাকাটা জরুরি।’
অনুষ্ঠানে ক্যানসার জয়ী ও চিকিৎসক ড. জেসনিন ফারহানা সীমা বলেন, ‘এই রোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। নিয়মিত আমাদের পরিচিত কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছে। পরিবারের একজন মানুষ আক্রান্ত হলে কী ধরনের সমস্যা হয় তা শুধু সেই পরিবারই জানে।’
তিনি বলেন, ‘আমি দেশে ও বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছি। সবার পরামর্শ ছিল কঠোর পরিশ্রম করা, এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। আমাদের নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করাটা সবচেয়ে জরুরি। নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন নিয়ে আমি কাজ করছি। সম্পূর্ণ কীটনাশক মুক্ত বাগান তৈরি করছি।’
ক্যানসারজয়ী ড. খালেদা খানম বলেন, ‘রোগীর জন্য সবচেয়ে জরুরি মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখা। এটার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এরপর ডাক্তারের পরামর্শ ও চিকিৎসা দরকার। আমাদের দেশে নির্দিষ্ট বিভাগে দক্ষ ডাক্তার খুব কম। সব রোগের চিকিৎসা ডাক্তারকে দিতে হয়। একটা বিষয়ে দক্ষ এবং ওই রোগের জন্য ডেডিকেটেড ডাক্তার থাকতে হয়। তাহলে রিপোর্টে ভুল হবে না। চিকিৎসায় ভুল হবে না। সঠিক চিকিৎসা পাবে সেবাগ্রহীতারা।’
/এসএস/মনেরখবর/