শিশুর যথাযথ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করা জরুরী। শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সের মধ্যেই শিশুর ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠে। এজন্য শিশু বয়স থেকেই ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপায় খুঁজে বের করতে হবে।
রাজধানীর গুলশানে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মনোবিজ্ঞানীরা।
৫ম বার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে গুলশানের একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বিশেষ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘এ.বি.সি আর্লি লার্নিং ডে-কেয়ার সেন্টার’।
অনুষ্ঠান সেবাগ্রহীতাদের গভীর আস্থা, অকুণ্ঠ সমর্থন ও অকৃত্রিম ভালবাসার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গ্র্যান্ড-প্যারেন্টস ডে উদযাপন এবং প্রি-স্কুল গ্র্যাজুয়েটেডদের সনদ প্রদান করা হয়।
গত শনিবার, ১০ই সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান-২ এর হোটেলে ‘দি রয়্যাল প্যারাডাইস’-এ অনুষ্ঠিত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্ট এর সিনিয়র ম্যানেজার নাহিদ পারভিন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমেরিকান স্ট্যানডার্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল (এসইস) এর এম.ডি. জিয়া উদ্দিন ইমরান এবং প্রিন্সিপাল, লরি এ. ওয়ালস সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এছাড়াও সম্মানিত সেবা গ্রহীতা, তাদের সন্তানরা এবং গ্র্যান্ড প্যারেন্টসগণ উপস্থিত ছিলেন ।
এ.বি.সি আর্লি লার্নিং ডে-কেয়ার সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, সোনিয়া আকরাম এর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন, মনোবিজ্ঞানী ফারজানা ফাতেমা (রুমী), ডা. আইরিন বিনতে আজাদ এবং সিনিয়র স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট খুশবু আলম ক্যানি প্রমুখ।
মনোবিজ্ঞানী ফারজানা ফাতেমা (রুমী) তার বক্তব্যে বলেন, একটি শিশুর ব্যাক্তিত্ব গড়ে উঠে ০-৫ বছরের মাঝেই। তাই সন্তানকে বুঝতে দিতে হবে আপনি তাকে ভালোবাসেন, তার পাশে সব সময় আছেন, সে একা নয়।
আবার চাওয়া মাত্রই সব পেয়ে যাবে, না পেলে অস্থির হবে আর আপনি সবকিছুই মেনে নেবেন এই চর্চা থেকেও অভিভাবকদের বের হয়ে আসতে হবে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, আমরা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শিখি কিভাবে সব বয়সি মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করা যায় কিন্তু ডে-কেয়ার এমন এক জায়গা যেখানে শিশু তার আর্লি স্টেজেই শিখে যায় বিভিন্ন বয়সি শিশুদের সাথে কিভাবে বন্ধুত্ব তৈরী করতে হয়, খেলনা শেয়ার করতে হয়, ধৈর্য রাখতে হয়। তদুপরি একটি নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে আসার চর্চা শুরু হয় যা থেকে শিশু শেখে সামাজিকতা। যা অবশ্যই শিশুর ব্যক্তিত্ত্ব গঠনে সহায়তা করে। শিশুদের অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে শেখা, নিজেকে ভালোবাসতে শেখা অত্যন্ত জরুরী। ভালো থেরাপিস্ট হবার আগে একজন ভালো মানুষ হওয়া বেশি জরুরী।
বিএসএমএমইউ এর মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের এইচএমও ডা. আইরিন বিনতে আজাদ বলেন, শিশুর মানসিক ও শারিরীক বিকাশ সম্পর্কে ডে-কেয়ারের শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রশিক্ষিত বা অবগত থাকেন। যার ফলে মা-বাবার দৃষ্টির অগোচরে থাকলেও ডে-কেয়ারে শিশুদের বিকাশজনিত জটিলতাগুলো আগেই ধরা পরে। সবধরণের শিশুরা একসাথে থাকার কারণে অনেকাংশেই যেই জটিলতাগুলো নিয়ে কাজ করা যায় এবং অভিভাবকরা আর কি করতে পারেন সে ব্যাপারে গাইড করা যায়।
স্পিচ এ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট খুশবু আলম ক্যানি বলেন, শিশুর ভাষার বিকাশের জন্য পরিবেশ তৈরি করে দিতে হয়। শিশুদের অতিরিক্ত স্ক্রিন নির্ভরতা তাদের যোগাযোগের বিভিন্ন কৌশল উন্নতিতে ব্যহত হচ্ছে। তাদের শব্দ ভান্ডার সংকুচিত হচ্ছে। ডে-কেয়ার একজন শিশুর শেখার সুযোগ এবং পরিবেশ দুটোই তৈরি করে দেয়। সেই সাথে একজন শিশুর সামাজিক যোগাযোগের বিকাশ জনিত জটিলতা বাসার তুলনায় ডে-কেয়ারে বেশি চোখে পড়ে। এতে করে বাবা-মায়েরা খুব তাড়াতাড়ি শিশুর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।”
অনুষ্ঠানে গ্র্যান্ড-প্যারেন্টসদের জন্য শিশুদের গানসহ মনোমুগ্ধকর কালচারাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এরপরে গ্র্যান্ড-প্যারেন্টসদের সম্মানে তাদের জন্য ক্রাফটসি এক্টিভিটির আয়োজন করলে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ গ্রহন করেন।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে প্রি-স্কুল গ্র্যাজুয়েশন সেরেমনিতে শিশুদের সনদ প্রদান এবং এই ডে-কেয়ারের এডুকেটরদের বিশেষ অবদানের জন্য সনদ প্রদান করে সম্মানিত করা হয়।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে এ.বি.সি আর্লি লার্নিং ডে-কেয়ার সেন্টারের প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়। এসময় কেয়ার সেন্টারে শিশুদের সার্বিক বিকাশ নিশ্চিত করণে চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট বিশেষজ্ঞরা কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ্য করে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, সোনিয়া আকরাম প্রতিষ্ঠানের পাঁচ বছরের পদার্পণের এই যাত্রার অভিজ্ঞতার সাথে বিভিন্ন রকম চ্যালেন্জ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য তুলে ধরেন।
এছাড়াও সোনিয়া আকরাম তার বক্তব্যে ওয়েবসাইটের প্যারেন্টস পোর্টাল থেকে ভবিষ্যতে বাবা-মা কিভাবে তাদের সন্তানের দৈনন্দিন কার্যক্রম এবং তাদের বয়স ভিত্তিক দক্ষতা ও বিকাশের উন্নয়ন সম্পর্কে অবহিত হতে পারবেন সেই বিষয়ে দিকনির্দেশনা তুলে ধরেন।
/এসএস/মনেরখবর/