বাংলাদেশ একটি স্বল্পোন্নত দেশ। এই দেশে কর্মজীবিদের স্বল্প খরচে অধিক কাজ করানো সম্ভব হয়। সেই কারণে অনেক সময় কর্মচারীদের দিয়ে অধিক কাজ করানো হয়ে থাকে। যদিও দিনে ৮ ঘণ্টা কাজ করা আদর্শ সময়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক জায়গায় এই সময়ের চেয়েও বেশি খাটানো হয়ে থাকে। যা কর্মচারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে ফেলছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এক জরিপে বলা হয়েছে সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি হয়। ২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ১৯৪ টি দেশ থেকে সংগ্রহ করা তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে জরিপটি চালানো হয়েছে। অতিরিক্ত কাজের ফলে মানসিক চাপে বেশি ভোগেন কর্মচারীরা। এর পাশাপাশি স্ট্রোক, হৃদযন্ত্রের সমস্যা সহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও তৈরি হয়।
২০০০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত অধিক সময় ধরে কাজ করার কারণে হৃদযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বেড়েছে ৪২ শতাংশ আর স্ট্রোকে মৃত্যু বেড়েছে ১৯ শতাংশ। এমনকি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ-জনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ে ৩৫ শতাংশ। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ৪ লাখ মানুষ স্ট্রোকেই মারা গেছেন। এমনকি হৃদযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সাড়ে তিন লাখের মতো।
স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়ে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিটোরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মুহম্মদ সিরাজ-উল-ইসলাম জানান, বেশিরভাগ সময়ে বসে কাজ করা হয় বলে লম্বা সময় নড়াচড়া করা হয়না আমাদের। ফলে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস নামের একটি সমস্যা হয়। যার কারণে শিরায় রক্ত জমাট বাঁধার মতো বিষয় ঘটে। এই শিরাগুলো রক্ত চলাচল মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের সুস্থতার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
অধ্যাপক মুহম্মদ সিরাজ-উল-ইসলাম বলেন, ‘বসে থাকার কারণে পায়ে ব্যথা হওয়ার সমস্যাই বেশি হয়। তবে ছোট ক্লট (জমাট বাঁধা রক্ত) মস্তিষ্কে পৌঁছে গেলে এবং ধমনীতে আটকে গেলে পক্ষাঘাত বা স্ট্রোকও হতে পারে। আবার ক্লট যদি হৃদযন্ত্রের কোন অংশে আটকে যায় তখন হৃদযন্ত্রে পর্যাপ্ত রক্ত পৌছায় না। তখন মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটে।’
এছাড়াও কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করলে চোখের যেমন ক্ষতি হয় একইভাবে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনাও বাড়ে। তবে এসবের চেয়েও মানসিক চাপ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বর্তমান সময়। এই বিষয়ে ডা. ইশরাত শারমিন বলেন, ‘বেশি সময় একই কাজ করলে ঐ কাজের উপর একটা বিরক্তি ভাব চলে আসে। এতে কাজে অনুপস্থিতি বেড়ে যায়। যথেষ্ট বিশ্রাম না হওয়ার কারণে ক্লান্তি বোধ তৈরি হয়, কাজে ভুল বেড়ে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। এছাড়াও ধীরে ধীরে একজন কর্মীকে অবসাদগ্রস্ত করে তোলে।’ কাজের চাপে অনেকে অ্যালকোহল বা মাদকেও আসক্ত হয়ে পড়েন বলে জানিয়েছেন এই সাইকোলোজিস্ট।
এর সমাধান হিসেবে ডা. ইশরাত শারমিন কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘কাজের ফাকে ছোট বিরতি নিতে হবে। সহকর্মীদের সাথে গল্প করা, পছন্দের কারো সাথে ফোনে কথা বলা, পছন্দের কোন গান শোনা এসবও করতে পারেন। প্রয়োজনে অফিস থেকে ছুটি নিতে পারেন।’
এই চিকিৎসক আরও যোগ করেন, ‘অফিসে না বলা শিখতে হবে। বাড়িতে কাজ নিয়ে যাওয়া যাবে না। চাপ তৈরি হচ্ছে মনে হলে সেটা সরাসরি জানিয়ে দিতে হবে। এসব করতে পারলে মানসিক চাপ কমিয়ে নিজের কাজ উপভোগ করা সম্ভব হবে।’
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে