‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভূবনে
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই’
মানুষ পৃথিবীতে চিরজীবন বেঁচে থাকতে চায়, কিন্তু তা সম্ভব নয়। তবে সবাই চায় স্বাভাবিক মৃত্যু। কিন্তু দিনকে দিন পৃথিবীতে নানা অপরাধের কারণে মানুষের অকাল মৃত্যু বৃদ্ধি পাচ্ছে যেমন: ছিনতাই, খুন, ডাকাতি ও যাত্রাপথের দুর্ঘটনা। এর মধ্যে খুন মানুষের দ্বারা সংঘটিত জঘন্যতম অপরাধ। বিভিন্ন অপরাধীরা যেমন খুনের সঙ্গে জড়িত, তেমনি বিভিন্ন আবেগ ও ব্যক্তিত্বের সমস্যার কারণে পরিকল্পনা ছাড়াই কারো দ্বারা খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। আবার মাদকদ্রব্য গ্রহণের সঙ্গেও খুনের কতটুকু সম্পর্ক আছে, তা নিয়ে পৃথিবীতে বিভিন্ন গবেষণা হয়েছে। আসুন দেখি, মাদকদ্রব্য গ্রহণের সঙ্গে খুনের কতটুকু সম্পর্ক আছে। ২০০০ সালে CR Mclaughlin ও তাঁর সহযোগীরা আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে সংঘটিত হত্যার ২৫ জন খুনির বিষয়ে গবেষণা করে দেখেন যাদের বয়স (১৩- ১৭) তাদের ৫২% মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ও ২৮% মাদকদ্রব্যজনিত নেশায় যুক্ত। মাদকসেবীদের ২৭% মদ্যপান করত ও বাকি ৭৩% বিভিন্ন মাদকে আসক্ত। যাদের ৩৫% দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত।
২০০৯ সালে CR Paul B Stretesky Pubmed Journal এ তাঁর গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেন- খুনের সঙ্গে ইয়াবা গ্রহণের সম্পর্ক নিয়ে। তিনি তাঁর গবেষণায় দেখেন, যে ব্যক্তি ইয়াবা গ্রহণ করে তার সাধারণ মানুষের থেকে নয় গুণ বেশি খুনের প্রবণতা রয়েছে। ইয়াবাসেবীরা ইয়াবার সঙ্গে অন্যান্য মাদক যেমন: মদ, গাঁজা, LSD সেবন করে, কিন্তু ইয়াবা সরাসরি খুনের প্রবণতার সঙ্গে জড়িত এবং অন্যান্য মাদকের কারণে মারামারি, ছিনতাই, ডাকাতি, ধর্ষণ বেড়েছে।
১৯৯০ সালে Journal Criminal Justice এ William F. Wieczorek ও তাঁর সহযোগীরা মদ্যপানের সঙ্গে খুনের সম্পর্ক বিষয়ক গবেষণায় তাঁদের তথ্য উপস্থাপন করেন। তাঁরা ১৮৮৭টি খুনের ওপর গবেষণা করে দেখতে পান ৫০% খুন সরাসরি মদ্যপানজনিত কারণে ঘটেছে। যারা খুনি তাদের ৩৬% মদ্যপান করে, ১৩% খুনি মদ্যপানের সঙ্গে অন্যান্য মাদকজাতীয় দ্রব্যও গ্রহণ করে, ৭% খুনি মদ ছাড়া অন্য মাদকজাত দ্রব্য গ্রহণ করে ও ৪৩% খুনি মাদক গ্রহণ করে না। পরবর্তীতে মদ্যপানের সঙ্গে খুনের সম্পর্ক আরো অনেক গবেষণায় উঠে এসেছে।
১৯৯৪ সালে জানুয়ারিতে B Spunt ও তাঁর সহযোগীরা International Journal Of Addiction এ গাঁজা বা মারিজুয়ানার সঙ্গে খুনের সম্পর্ক নিয়ে তাঁদের গবেষণা প্রকাশ করেন। তাঁরা ২৬৮ জন খুনীর ৩ ভাগের ১ ভাগের মধ্যে খুন করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গাঁজা গ্রহণের তথ্য পান। ১৮ জন (৭%) খুনি স্বীকার করেন তাদের গাঁজা গ্রহণ হত্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। ১৯৯৬ সালে B Spunt ২১৫ জন মহিলা খুনির সঙ্গে মাদক গ্রহণের সম্পর্ক বিষয়ে গবেষণায় উল্লেখ করেন। যে গবেষণা অনুসারে, ১০ জন মহিলার মধ্যে ৭ জনই নিয়মিত মাদক গ্রহণ করে থাকে।
২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারিতে Richard Rosenfeld Journal of Research in Crime and Delingquency তে যুক্তরাষ্ট্রে Opioid (হেরোইন, মরফিন, প্যাথেড্রিন) গ্রহণের সঙ্গে খুনের যোগসূত্র নিয়ে গবেষণার তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি ও তাঁর সহযোগীরা ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত খুনের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখতে পান অতিরিক্ত Opioid গ্রহনে মৃত্যুর প্রবণতা ও খুন করার হার সাধারণ মানুষের খুনের হার থেকে বেশি।
এরকম গবেষণা পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে না হলেও অনেক দেশেই হয়েছে এবং তাঁরা প্রতিটি মাদকের সঙ্গেই খুনের সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন। মাদকের সঙ্গে খুনের সম্পর্ক উৎঘাটন করতে যেয়ে দেখা যায় প্রতিটি মাদক গ্রহণেই মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেখা গেছে নিয়মিত মাদক গ্রহণের ফলেঃ
ব্রেইনে অক্সিজেন কমে যাওয়ার কারণে কোষ ধ্বংস হয়।
মস্তিষ্কের কোষগুলো পুষ্টি কম পায়।
মস্তিষ্কের বিভিন্ন কেমিক্যাল, নিউরোট্রান্সমিটার এবং হরমোনের লেভেলে বিশৃঙ্খলা হয়।
মাদকদ্রব্য সরাসরি মস্তিষ্কের কোষ ধ্বংস করে (নিউরন ও অন্যান্য) এছাড়াও প্রতিটি মাদকেও কিছু বিশেষ ক্ষতিকর প্রভাব থাকে।
ডা. চিরঞ্জীব বিশ্বাস
সহকারী অধ্যাপক, উত্তরা মহিলা মেডিক্যাল কলেজ।
সূত্রঃ মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন, ৪র্থ বর্ষ, ৫ম সংখ্যায় প্রকাশিত।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে