মহামারীর এই দুঃসময়ে লকডাউন থাকার ফলে বহুদিন ধরে পরিবারের সবাইকে একই সাথে বসবাস করতে হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান এবং পিতামাতা তথা ভিন্ন দুটি জেনারেশনের মধ্যে সক্ষতা বজায় রাখা এখন একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে উঠেছে।
বয়সের পার্থক্য যত বৃদ্ধি পায় মন মানসিকতা এবং চিন্তা ভাবনাতেও ততোটাই ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। এ কারণে পিতামাতার সাথে মতের অমিল সব থেকে বেশি প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের সাথেই সৃষ্টি হয়। কারণ এক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন জেনারেশনের মানসিকতা একে অপরের সাথে সংঘর্ষ সৃষ্টি করে।
তাই এই লকডাউন কালীন সময়ে যখন পরিবারের সবাই অনেক দিন ধরে একই সাথে সময় কাটানোর সুযোগ পাচ্ছে তখন সমস্যা সৃষ্টি করছে প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের সাথে পিতামাতার মানসিক দ্বন্দ্ব বা মতের অমিল। ফলে মহামারীর এই দুঃসময়ে মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে সম্পর্কের এই জটিলতা।
পারিবারিক শান্তি রক্ষার্থে অনাকাঙ্ক্ষিত এই জটিলতা কিভাবে নিরসন করা যায় সেটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা আবশ্যক। নিচে কিছু বাস্তবিক সমস্যা এবং তার সমাধান তুলে ধরা হল।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রণ
পিতামাতা এবং প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের মধ্যে সব থেকে বেশি যেটি নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হচ্ছে সেটি হল বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং একে অপরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মানসিক অসন্তোষ। সন্তান যখন বড় হয়ে যায় তখন তারা চিন্তা ভাবনা এবং মানসিকতার দিক থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন স্বত্বা হিসেবে বিবেচনা করে।
অপর দিকে পিতামাতা তাদের সন্তানকে সব সময়ই শিশুর মতোই মনে করেন যাদের ভালো মন্দ সব চেয়ে বেশি পিতামাতাই ভালো বোঝেন। আর দুটি জেনারেশনের মূল সমস্যার কারণ এটিই। এই সমস্যা এড়াতে উভয় পক্ষেরই ধৈর্য এবং সহমর্মিতা থাকা প্রয়োজন।
একে অপরের চিন্তা ভাবনাকে সম্মান এবং একই সাথে মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকলে মতের অমিল অনেকাংশেই সমস্যার কারণ হয়ে উঠবে না।
নিয়ম এবং বিধি নিষেধ
পিতামাতা চায় পরিবারের সব নিয়ম কানুন সন্তানেরা মানবে। অপর দিকে প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানেরা সব সময় নিজেদের ইচ্ছা এবং সুবিধাকেই প্রাধান্য প্রদান করে। ছাড় দেওয়ার মানসিকতা না থাকলেই মূলত এ ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
পিতামাতাকে এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। তাদেরকে বুঝতে হবে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন আসা প্রাকৃতিক নিয়ম। এই পরিবর্তনকে স্বাদরে গ্রহণ করে সন্তানকে তাদের নিজেদের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে কাজ করার স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে।
সময়
মহামারী কালীন এই দুঃসময়ে যখন একই সাথে সবাইকে দীর্ঘদিন থাকতে হচ্ছে তখন উভয়েই তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এ সময়ে পিতামাতা এবং প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান উভয়ের মধ্যে সাময়িক জটিলতা, মতবিরোধ ও সমন্বয়হীনতাকে দীর্ঘস্থায়ী ভেবে ধৈর্যহারা হওয়া উচিত নয়।
পিতামাতা এবং একই সাথে সন্তানকে বুঝতে হবে যে এই পরিবর্তন সাময়িক এবং সময়ের সাথে মানিয়ে নিয়ে পরিবর্তনকে স্বাদরে গ্রহণ করাও সময়ের দাবি।
তাছাড়া, একে অপরকে সময় দেওয়া এখন সব থেকে জরুরী। যেহেতু লকডাউনে আমরা বাইরে বের হতে পারছি না এবং দীর্ঘ সময় ঘরের মধ্যেই কাটাতে হচ্ছে তাই পরিবারের সবাই মিলে একসাথে সময় কাটালে সমস্যা অনেকটাই কমবে এবং একের অপরের সাথে সৌহার্দ বাড়বে। পিতামাতাকে নিয়ন্ত্রণ করার মনোভাব ত্যাগ করতে হবে এবং সন্তানকে ধৈর্যশীল ও সম্মান সূচক আচরণ করতে হবে।
এক্ষেত্রে পিতামাতা এবং সন্তান উভয়কেই একে অপরের মানসিকতা বুঝতে হবে এবং সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে হবে। তাহলেই মহামারীর এই দুঃসময়েও হাজার সমস্যার মাঝেও পরিবারের সবাই মিলে সুন্দর সময় অতিবাহিত করা সম্ভব হবে।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে