বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ডিরেক্টর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম খানকে ‘কথা বলো কথা বলি’ এর লিফলেট প্রদান করা হয়েছে।
‘কথা বলো কথা বলি’ কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ এর কাছ থেকে লিফলেট গ্রহণ করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম খান।
মহামারি করোনাভাইরাসে বির্পযস্ত সারা বিশ্ব। বাংলাদেশেও প্রতিদিনই বাড়ছে করোনার সংক্রমণে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। করোনায় আক্রান্তদের মৃত্যু তাদের স্বজনদের মনের ওপর ফেলে যাচ্ছে ভয়ংকর আঘাত। শুধু স্বজনই নন, মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন করোনায় প্রাণহারানো ব্যক্তির সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিটিও।
করোনায় স্বজনহারা এসব ব্যক্তি কিংবা তাদের সেবায় সরাসরি সংশ্লিষ্টদের জন্য বিনামূল্যে কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম শুরু করেছে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান মনের খবর। ‘কথা বলো কথা বলি’ নামের এই কার্যক্রমটি গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে।
আরও বৃহৎ পরিসরে এই সেবা কার্যক্রম মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অংশ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে এ সংক্রান্ত তথ্যপত্র (লিফলেট)। গত ১৫ জুলাই (বৃহস্পতিবার) এই লিফলেট উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য় অধ্যাপক ডা. মো. শরফুদ্দিন আহমেদ।
এ প্রসঙ্গে কথা বলো, ‘কথা বলো কথা বলি’ কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মনোরোগবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ জানান, করোনা মহামারীর এই আতংকগ্রস্ত সময়ে অনেকেই হারিয়েছেন তাদের প্রিয়জন। সেই শোক কাটিয়ে ওঠার মাঝেই প্রতিনিয়ত আশংকায় কাটে নতুন কোন দুঃসংবাদের।
ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ বলেন, স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসতে বেগ পেতে হচ্ছে। বেশিরভাগ ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্য হারানোর শোকের পাশাপাশি নানাবিধ মানসিক এবং সামাজিক সমস্যায় পড়েছেন অনেকে, যা তাদের জন্য কাটিয়ে ওঠা অনেকটাই কঠিন। বিষণ্ণতা, নিদ্রাহীনতা, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, মনোযোগহীনতা, মেজাজ নিয়ন্ত্রণে না রাখা, অন্যদেরকে ও নিজেকে আলাদা ভাবা, নিঃসংগ ভাবাসহ আরও বিবিধ মানসিক পরিবর্তন বা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে যা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত, সামাজিক জীবনকে ব্যাহত করছে।
তিনি আরো বলেন, কারো কারো কাছে এ রকম পরিস্থিতি এতটা অভাবনীয় যে, কেন এইসব সমস্যা হচ্ছে এবং কিভাবে তারা এর মোকাবিলা করবেন তা আদৌ জানেন না। কিন্তু মহামারীর এই সময়ে মানসিক একটু সাপোর্ট, মানসিক স্বাস্থ্য সেবা হতে পারে এতসব সমস্যা থেকে মুক্তির প্রথম পদক্ষেপ।
করোনায় স্বজনহারাদের উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টার অংশ হিসেবে তাদের পাশে একটু স্বস্তি, একটু নির্ভরতা দিতে ‘কথা বলো কথা বলি’ এর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ।
প্রসঙ্গত, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের খ্যাতনামা এবং অভিজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট এবং সাইকোলজিস্টগণ করোনায় স্বজনহারা ব্যক্তিবর্গকে বিনামূল্যে কাউন্সেলিং ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করবেন। ‘কথা বলো কথা বলি’ এর সহযোগিতায় রয়েছে “Organization for Human Development Initiatives through Research (OHDIR) Foundation ।
করোনায় স্বজনহারা ব্যক্তি এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির পরিচর্যায় নিযুক্ত ব্যক্তি ‘কথা বলো কথা বলি’ এর মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এই সেবা গ্রহণের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাকে প্রথমে ‘কথা বলো কথা বলি’ এর হটলাইন- ০১৪০৭৪৯৭৬৯৬ নম্বরে ফোন করে সিরিয়াল গ্রহণ করতে হবে।
শুক্রবার এবং সরকারি ছুটির দিন ব্যতিত যেকোন দিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত হটলাইন নম্বরে ফোন করে সিরিয়াল গ্রহণ করা যাবে। এছাড়া সেবাগ্রহীতাদের সার্বক্ষণিক আপডেট তথ্য দিতে কথা বলো কথা বলি (Corona Concern) Psychosocial Care for the Family Members) নামে একটি ফেসবুক গ্রুপও খোলা হয়েছে।
‘কথা বলো কথা বলি’ কার্যক্রমে যেসকল বিশেষজ্ঞগণ সেবা প্রদান করছেন তারা হলেন:
অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোর্শেদ, চেয়ারম্যান, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ খান, সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।
অধ্যাপক ড. মেহজাবীন হক, চেয়ারপার্সন, এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ড. মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান মজুমদার, সহযোগী অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহীদ, সহকারী অধ্যাপক (ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি), মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
তামিমা তানজিন, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
উম্মে কাউসার, সহকারী অধ্যাপক, এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
জোবেদা খাতুন, সহকারী অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
নাজমী আরা বেগম, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, সেন্টার ফর মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড কেয়ার বাংলাদেশ।
এ্যানি বাড়ৈ, সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলর, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।
ডা. সামিনা হক, চাইল্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রিস্ট।
ডা. সাদিয়া আফরিন, রেসিডেন্ট (চাইল্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি), বিএসএমএমইউ।
ডা. রায়হান সিদ্দিক, রেসিডেন্ট (সাইকিয়াট্রি), বিএসএমএমইউ।
ডা. তাইয়েব ইবনে জাহাঙ্গীর, রেসিডেন্ট (সাইকিয়াট্রি), এনআইএমএইচ।
ডা. জহর দত্ত, রেসিডেন্ট (সাইকিয়াট্রি), এনআইএমএইচ।
ডা. আফরোজা আক্তার, রেসিডেন্ট (সাইকিয়াট্রি), সিওমেক।
ডা. মুকুল চন্দ্র নাথ, রেসিডেন্ট (চাইল্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি), বিএসএমএমইউ।
ডা. নাহিদ আফসানা কওমী, রেসিডেন্ট (চাইল্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি), বিএসএমএমইউ।
ডা. সুমাইয়া বিনতে জলিল, রেসিডেন্ট (চাইল্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি), বিএসএমএমইউ।
ডা. মুনীম রেজা, রেসিডেন্ট (চাইল্ড অ্যাডোলেসেন্ট সাইকিয়াট্রি), বিএসএমএমইউ।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে