দাম্পত্য জীবনে দুজন সঙ্গীর মধ্যে বয়সের পার্থক্য বেশী হলে তাদেরকে তুলনামূলক ভাবে বেশী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। কিভাবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়া যায় সেটি নিয়ে আজ আলোচনা করা যাক।
এটা চির সত্য যে, দাম্পত্য সম্পর্ক বয়স নয় বরং সম্পর্কে জড়িয়ে থাকা মানুষ দুজন দ্বারাই সংজ্ঞায়িত হয়। তাদের পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং মনস্তাত্ত্বিক ভাবের আদান প্রদানই নির্ধারণ করে তাদের দাম্পত্য জীবন কেমন হবে এবং সম্পর্ক কতোটা সফল বা বিফল হবে।
তবে এক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রীর বয়সের পার্থক্যটি যদি একটু বেশী হয়, যেমন- আঠারো বা বিশ বছর। তাহলে এই সম্পর্ক স্বাভাবিক আর দশটা সম্পর্কের মতো কখনোই হয় না। প্রতিটি সম্পর্কেই চড়াই উৎরাই থাকে, তবে এ ধরণের সম্পর্কে সমস্যাগুলো কিছুটা বেশী মাত্রায় দেখা যায়।
সাধারণ ভাবে বলা যায়, বয়স শুধুমাত্র একটি সংখ্যা নয়। এটি হল জীবনে হওয়া আমাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন শিক্ষার একটি প্রতিফলিত রুপ। অন্য কথায়, বয়স হল আমাদের পরিপক্বতার মাত্রা। তাই বলা যেতে পারে যে, দুজন মানুষ যাদের মাঝে বয়সের পার্থক্য বেশ খানিকটা তারা যদি অন্তরঙ্গ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তাহলে সাধারণ ভাবেই তাদের অভিজ্ঞতা, তাদের শিক্ষা এবং পরিপক্বতা ভিন্ন হবে। আর এ কারণে জীবন যাপন, মানসিকতা এবং যৌন আচার আচরণে ভিন্নতা থাকবে। এমন দুজন দম্পতীদের দাম্পত্য জীবনে সফল হতে হলে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতেই হয়।
দুজনের সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রথম ধাপ হল নিজেদের মধ্যে থাকা বিভিন্ন পার্থক্য গুলোকে স্বীকার করে নেওয়া বা মেনে নেওয়া। কিন্তু সঙ্গীরা সাধারণত সম্পর্কে বিদ্যমান এই পারস্পরিক পার্থক্য গুলোকে চিহ্নিত করতে অনিচ্ছুক থাকে বা তাদের মাঝে যে মানসিকতা এবং অভিজ্ঞতার পার্থক্য রয়েছে এটিকে নেতিবাচক ভাবে দেখে।
কিন্তু দাম্পত্য জীবনে দুজন মানুষ, বিশেষ করে যাদের মাঝে বয়সের অনেক বেশী ফারাক রয়েছে, তাদের মাঝে ভিন্নতা থাকা অনেক বেশী স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে সফল সম্পর্ক স্থাপন করতে এই পার্থক্য গুলোকে উপেক্ষা না করে বরং এগুলোকে চিহ্নিত করে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা এবং বোঝাপড়া বৃদ্ধি করতে হবে।
সম্পর্কে বয়সের অধিক পার্থক্য থাকার ফলে সৃষ্টি হওয়া বিড়ম্বনা গুলোর মধ্যে অন্যতম হল জীবন যাপনে পার্থক্য। সাধারণত একজন মানুষের জীবন যাপন ব্যবস্থা তার ইচ্ছা, রুচি, শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা এবং তার বয়সী মানুষদের সান্নিধ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
যখন ভিন্ন বয়সী একজন সঙ্গীর সাথে দাম্পত্য জীবন শুরু হয়, তখন স্বভাবতই তাদের জীবনাচরণ ও ভিন্ন ভিন্ন হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, তারা হয়তো ভিন্ন রকমের গান পছন্দ করবে, ভিন্ন রকম সিনেমা দেখতে ভালোবাসবে, বা ভিন্ন রকম সংস্কৃতি অনুসরণ করবে। এক্ষেত্রে সম্পর্কে সফল হতে হলে একে অপরের এই পার্থক্যকে সম্মান করা এবং এগুলোর মধ্যে সামাঞ্জস্য বিধান করে চলা জরুরী।
দ্বিতীয় বিশেষ চ্যালেঞ্জটি হল যৌন জীবন। অনেকেই মনে করে বেশী বয়স্ক সঙ্গী হয়তো কম যৌন চাহিদা সম্পন্ন হয়। এটি সঠিক যে বয়সের পার্থক্য যৌন জীবন সম্পর্কে দুজনার মধ্যে ভিন্ন ধারণার সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু বয়সের সাথে যৌন চাহিদার সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। পূর্ব নির্ধারিত কোন ধারণাকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং দুজনার মানসিক অবস্থা এবং আগ্রহের ভিত্তিতে সময় অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণই এক্ষেত্রে সঠিক হবে।
সর্বশেষ যে বিষয়টি গুরত্ব দিতে হবে সেটি হল বয়সের অত্যধিক পার্থক্য বিদ্যমান এমন সম্পর্ক পারস্পরিক ধৈর্য এবং শ্রদ্ধা ছাড়া কখনোই টিকে থাকে না। বেশী বয়সের পার্থক্য আছে এমন একজন মানুষের সাথে দাম্পত্য জীবন শুরুর অর্থ হল, আপনি হয়তো এমন অনেক কিছুই দেখবেন যেগুলো একদম নতুন এবং একই সময়ে সেই বিষয় গুলো সম্পর্কে আপনার সঙ্গীর হয়তো ভালো ধারণা থাকবে।
এ অবস্থায় দুজনেরই সম্মাণ প্রদর্শন এবং ধৈর্য ধারণ অতীব প্রয়োজন। নতুন অভিজ্ঞতার জন্য ধৈর্য ধারণ এবং পুরাতন অভিজ্ঞতার জন্য সম্মান প্রদর্শন, এমন হলেই দুজনার মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া তৈরি হবে।
সম বয়সী বা কম ব্যবধান সম্পন্ন সম্পর্কের তুলনায় বয়সের বেশী ব্যবধান থাকা সম্পর্ক গুলো একটি বেশী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হলেও উপরের বিষয় গুলো খেয়াল রাখলে সফলতা লাভ করে। ভালোবাসা কখনোই বয়সের গণ্ডীতে বাঁধা থাকে না। এটি উন্মুক্ত এবং স্বাধীন। প্রতিটা জিনিসের যেমন সমস্যা থাকে ঠিক তেমনি সমাধানও অবশ্যই রয়েছে। আপনার সঙ্গীকে নিয়ে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং নিরাপদ থাকুন।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে