বাবা-মা এর একান্ত বাধ্য ছেলে অনীক। লেখাপড়াতেও মনোযোগী আবার খেলাধুলাতেও তার যথেষ্ট সুনাম। সে পড়ে ক্লাস নাইনে। স্কুলের স্যাররা তাকে এক নামে চেনে। স্কুলের ক্রিকেট টিমের অধিনায়কও সে। বন্ধু-বান্ধবও তার অনেক। বড় মিশুক প্রকৃতির। মানুষের সাথে যেচে গিয়ে আলাপ করে, বন্ধুত্ব পাতায়। বন্ধুদের বিপদে এগিয়ে যায়। এক কথায়, সে খুবই জনপ্রিয়।
অনীকের একটি ফেসবুক (Facebook) একাউন্ট থাকলেও খুব একটা বসার সময় হয় না পড়াশুনা ও খেলাধুলার কারণে। সেদিন বন্ধুরা সবাই বসেছিলো একসঙ্গে। হঠাৎ বন্ধু শাফকাত এসে খুশি মনে আমেরিকা থেকে তার বড় বোনের পাঠানো নতুন মোবাইল ফোন সবাইকে দেখালো। সে ফোন দিয়ে সবাইকে নিয়ে সেলফি তুললো অনেকগুলো। ব্যাপারটা অনীকের খুব ভালো না লাগলেও নতুনত্ব হিসেবে মনে নাড়া দিলো।
রাতে পড়তে বসে বন্ধুদের কথা বারবার মনে পড়তে লাগলো অনীকের। মনে হলো তারও যদি একটা এমন মোবাইল থাকতো। অনেকটা ভয় নিয়ে কথায় কথায় মাকে মোবাইলের কথাটা বলেই ফেললো অনীক। মা-বাবা কষ্ট করে হলেও ছেলের কথা চিন্তা করে বেতন পাওয়ার পর নতুন মোবাইল কিনে এনে ছেলেকে বিস্মিত করে দেবে বলে চিন্তা করলেন।
বাবা-মা তাকে বিস্মিত করেছে। কিনে দিয়েছে নতুন মোবাইল। অনীক আজ মহাখুশি। যাই হোক, বন্ধুদের নিয়ে খুব মজা হলো। বিকেলে মোবাইল কেনা উপলক্ষে বন্ধুদের খাওয়াতে হলো আর চললো সেলফি তোলা। বাসায় এসে অনীক পড়তে বসলো কিন্তু মন তো আর বসে না, খুব ইচ্ছা করছে ফেসবুকে সেলফিগুলো আপলোড করতে। শেষ পর্যন্ত লুকিয়ে আপলোড করে ফেললো ছবিগুলো। তখন মনে খুবই শান্তিবোধ হতে থাকলো অনীকের।
এভাবে দিনদিন অনীকের সেলফি তোলার প্রবণতা বাড়তেই থাকলো। ইদানিং খেলাধুলা করতেও তেমন ইচ্ছা করে না, পড়ালেখাতেও মন বসেনা। রেজাল্টও খারাপ হলো অনীকের। ইচ্ছা করে আগের মতো হাসিখুশি থাকতে। খেলাধুলা, পড়াশুনায় আগের মতো হতে; কিন্তু সে পারেনা। সেলফি তোলা তার এক প্রকার নেশার মতো হয়ে গেছে। ক্লাসে সেলফি তুলতে গিয়ে শিক্ষকের তিরস্কারও শুনতে হয়েছে। তারপরও অনীক নিজেকে বশে আনতে পারছে না। ইদানিং খুবই অস্থির লাগে তার। বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করতে মাঝে মাঝে ইচ্ছা করেনা, টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্টও খারাপ হলো।
উপরের ঘটনাটি নতুন মানসিক রোগ ‘সেলফাইটিস’ নিয়ে। এখানে রোগী চেষ্টা করলেও বশে আনতে পারে না নিজেকে। বিরত থাকতে পারেনা সেলফি তোলা থেকে। দিনে কমপক্ষে তিনটার বেশি সেলফি তোলে এবং সেগুলো যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড না করা পর্যন্ত তৃপ্তি পায় না। মানসিক ভাবে মাঝে মাঝে আবেগ অস্বাভাবিক হতে পারে। রোগীরা অনেক ক্ষেত্রে নিজের এসব কাজের জন্য বিরক্ত অনুভব করে। সঠিক সময়ে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নিলে আরোগ্য লাভ করে।
লেখক
ডা. চিরঞ্জীব বিশ্বাস
সহকারী অধ্যাপক
উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনেরখবর-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য মনেরখবর কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।