শিশুর মানসিক বিকাশে পরিবারের দায়িত্ব

মহামারীতে শিশুদের যত্নে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা ও সমাধান

সুস্থ শিশু বলতে শুধু শারীরিকভাবে সুস্থ শিশুকেই বোঝায় না বরং শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবে ভালো থাকলে শিশুকে সুস্থ শিশু বলা যাবে। শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবে শিশুকে সুস্থ রাখা পরিবারের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

সাধারণভাবে আমরা শিশুর শারীরিক বিকাশে যতটা মনোযোগ দিই, মানসিক বিকাশে ততটা মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করি না। কিন্তু মানসিকভাবে সুস্থ না হলে শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। শিশুর মানসিক বিকাশের জন্য জরুরি করণীয় কাজগুলো আলোচনা করা হলো।

সুস্থ পারিপার্শ্বিক পরিবেশ

একটি শিশু যখন বড় হয়, তখন চারদিকের পরিবেশ তাকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে এবং এর প্রতিফলন ঘটে তার ব্যক্তিত্বে। শিশুর সামগ্রিক বিকাশের সঙ্গে পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা নিবিড়ভাবে জড়িত। আজকের শিশু ভবিষ্যতের নাগরিক। তাই তার সুন্দর ও নির্ভয় শৈশব নিশ্চিত করার দায়িত্ব মা-বাবাসহ পরিবারের সব সদস্যের।

সৃজনশীল খেলনা

শিশুর খেলনা হতে হবে আবিষ্কারধর্মী, নাটকীয় ও সৃজনশীল। বয়সভেদে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ উপযোগী খেলনা নির্বাচন করতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। ঘরে ও বাইরে দুই জায়গায়ই খেলা যায়, এমন খেলনা শিশুর মানসিক বিকাশে বেশি সহায়ক। শিশুকে এমন ধরনের খেলনা দিতে হবে, যা তার বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে।

ছবি আঁকা

দীর্ঘদিনের গবেষণায় দেখা গেছে, শৈশবে শিশুরা যদি ছবি আঁকার সুযোগ পায়, তাহলে তারা মেধাবী ও বুদ্ধিমান হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, শিল্পচর্চার মাধ্যমে শিশুদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অভিনব চিন্তার মাধ্যমে শিশু যখন বিভিন্নভাবে শিল্পচর্চার সুযোগ পায়, তখন তার সৃজনশীলতাও বৃদ্ধি পায়।

শিশু অসাধারণভাবে ভাবতে ও চিন্তা করতে শেখে, যা তাকে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে শেখায় এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে সে তখন সহজেই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।

সংগীতচর্চা

সুখে-দুঃখে সংগীত যেমন আমাদের মনোরঞ্জন করে, তেমনি শৈশব থেকেই শারীরিক ও মানসিক অনেক কাজের ওপরেও রয়েছে সংগীতের নিবিড় প্রভাব। তাই শিশুকে একেবারে ছোটবেলা থেকেই সংগীতের সঙ্গে পরিচয় করানো জরুরি।

সংগীত শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। ভালো সংগীত শুনলে মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন নামের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়। যা কোনো কিছু শেখার ক্ষেত্রে শিশুকে আগ্রহী করে তোলে।

বই পড়া

বই শিশুর মনের সুপ্ত ভাবনার বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে। একসময় মা-খালা-দাদির মুখ থেকে ঠাকুমার ঝুলির গল্প শুনে সময় কাটত শিশুদের। এখন এর ব্যতিক্রম ঘটছে। আগেকার সেসব গল্প এখন শিশুরা শুনতে পারে না। শিশু বয়স থেকেই তাই শিক্ষামূলক বইয়ের পাশাপাশি গল্পের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

গল্পের বই পড়ার মাধ্যমে শিশুর মানসিক বিকাশ প্রসারিত হয় এবং মনের ভাব প্রকাশের ক্ষমতা বাড়ে। এর ফলে শিশুরা জটিল শব্দ ও বাক্য সহজে বুঝতে পারে। এতে তার পড়ার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়, সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পায় শিশুর বুদ্ধিমত্তা।

শিশুর সামগ্রিক বিকাশে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখার পাশাপাশি শিশুর মানসিক বিকাশের দিকেও নজর রাখুন। অভিভাবক হিসেবে এ দায়িত্ব পালন করতে হবে আপনাকেই।

Previous articleমানসিক স্বাস্থ্যসেবায় প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব
Next articleবয়সভেদে শিশুর রাগ নিয়ন্ত্রণে করণীয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here