আমাদের সবার মাঝেই কি জেরনটোফোবিয়া রয়েছে? এটা সঠিক যে খুব কম মানুষই রয়েছে যারা বয়স বেড়ে যাওয়া নিয়ে মানসিক চাপে ভোগেন না।
বয়স বৃদ্ধি নিয়ে মানসিক চাপ বৃদ্ধির মূল কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হল বৃদ্ধ বয়স নিয়ে সমাজে প্রচলিত নানা রকম গল্প কথা এবং ধ্যান ধারণা। এমনটাই মনে করা হয় যে যৌবন জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় এবং বৃদ্ধ বা বয়স্ক মানুষেরা তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়টা পার করে ফেলেছেন।
একই সাথে এমনটিও মনে করা হয় যে, তারা হয়তো এই বয়সে ভালো পিতামহ বা পিতামহী হতে পারেন কিন্তু তারা সর্বত অলাভজনক এবং তাদের দ্বারা কোন কাজই সম্ভব নয়। তাছাড়া তাদের জন্য শুধু অতিরিক্ত অর্থই ব্যয় হয় কিন্তু তারা কোন অর্থের সমাগমে ভূমিকা রাখতে পারেন না।
এমনকি বয়স্ক মানুষদের থেকে দূরে থাকাই তাদের এই বিরক্তিকর জীবন ব্যবস্থার উত্তর হিসেবে দেখা হয়। বিভিন্ন গবেষণার পরিসংখ্যানে এটি উঠে এসেছে যে, বয়স্ক ব্যক্তিরা শুধু সমাজের চোখেই নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে পরিবার পরিজনের কাছেও বোঝা স্বরূপ।
অন্যদিকে এটিও মনে করা হয় যে, বয়স্ক মানুষের কোন ইচ্ছে, স্বপ্ন বা স্বাদ থাকে না, তারা শুধু মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে যান ধীরে ধীরে। একই সাথে বিভিন্ন রোগ ব্যাধিকে মৃত্যুর পূর্ব লক্ষণ হিসেবে ভেবে নেওয়া হয় যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে আরও বৃদ্ধি পায়।
এ সব কিছু ব্যক্তির মনে বৃদ্ধ বয়স নিয়ে নেতিবাচক ভাবনা এবং ভয়ের জন্ম দেয়। আর এই নেতিবাচক মানসিক অবস্থাকেই আমরা জেরনটোফোবিয়া নামক মানসিক সমস্যা হিসেবে অভিহিত করছি।
বয়স বৃদ্ধি পাওয়া একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। আমরা যেমন ছোট থেকে বড় হই, কিশোর অবস্থা থেকে যুবক অবস্থায় পৌঁছাই, একই ভাবে আমরা বৃদ্ধ অবস্থাও প্রাপ্ত হই। কিন্তু এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটিকেই আমরা আমাদের বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা এবং বিভিন্ন রীতিনীতির মাধ্যমে ভয়ের এবং দুর্ভাবনার কারণ বানিয়ে ফেলি।
আমরা মনে করি যে এই বয়সে অন্যদের উপর নির্ভর করে বাঁচতে হয় এবং নিজের কোন স্বাধীন স্বত্বা থাকে না। এ ধরণের চিন্তা ভাবনা গুলোই একজন বয়স্ক মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা, দুশ্চিন্তা এবং ভয়ের জন্ম দেয়। তারা বৃদ্ধ বয়সে বেঁচে থাকাকে নয় বরং দুঃখ কষ্ট এবং মৃত্যুকেই চিরন্তন সত্য বলে বিবেচনা করে।
সমাজে পরম্পরার মতোই এই ধরণের ব্যবস্থা এবং ধারণাগুলো চলে আসছে। যারা আজ যুবা তারা বৃদ্ধদের এ ধরণের মানসিক সমস্যাগুলো দেখে দেখে নিজেদের মাঝেও এই ধারণা নিয়েই বেড়ে উঠছে যে বয়স বাড়লে আমাদেরকেও এভাবেই ভুগতে হবে।
তাই জেরনটোফোবিয়া যেন এমন একটি মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হচ্ছে যা সবার মাঝেই বেশ সাধারণ হয়ে উঠছে। কিন্তু এই মানসিক ব্যাধিকে কখনোই স্বাভাবিক বা সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করা উচিৎ নয়।
মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, বয়স বৃদ্ধির সাথে দুঃখ কষ্ট বা নির্ভরশীলতা বৃদ্ধির কোন সংযোগ নেই। এটি সম্পূর্ণ রুপেই মনস্তাত্ত্বিক এবং ভিত্তিহীন। বয়স বৃদ্ধিকে নেতিবাচক ভাবে না দেখে বরং জীবনের অন্যান্য অবস্থার মতোই সাধারণ ও স্বাভাবিক ভাবে দেখতে হবে।
অন্যান্য বয়সীদের মতো বয়স্ক ব্যক্তিরাও সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান। তাদেরও সমান অধিকার রয়েছে জীবনটাকে উপভোগ করার। এ ধরণের মানসিকতার বিকাশই বয়স বৃদ্ধি জনিত ভীতি বা জেরনটোফোবিয়া নামক মানসিক ব্যাধি থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারবে।
জেরনটোফোবিয়া বয়স্ক অবস্থার মতো জীবনের একটি স্বাভাবিক অবস্থাকে অস্বাভাবিক এবং কষ্টদায়ক করে তোলে যা একেবারেই উচিৎ নয়। বয়স বৃদ্ধি নিয়ে আমাদের এই নেতিবাচক ভাবনা বদলের সময় এসেছে। চলুন আজ থেকেই সমাজে পরিবর্তন আনয়নে ভূমিকা পালন করি এবং জেরনটোফোবিয়া নামক ব্যাধি থেকে মুক্ত হই।
লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/psychology-yesterday/202106/do-we-all-suffer-gerontophobia
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা