করোনাকালে সুস্থ থাকতে যেমন শারীরিক সুস্থতা প্রয়োজন তেমনি মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাও প্রয়োজনীয়। আর মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে প্রথমে আমাদের মধ্যে বিদ্যমান মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত বিভ্রান্তি গুলোকে দূর করতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো বেশ আগে থেকেই মানুষের কাছে বেশ অপ্রচলিত এবং সামাজিক ভাবে অগ্রহণযোগ্য বিষয় হিসেবে পরিচিত। অনেকের মাঝেই এমন ধারণা আছে যে মানসিক সমস্যা থাকা মানেই সেই ব্যক্তি পাগল এবং এটি মান হানীকর একটি বিষয়। মনস্তত্ত্ব বিদগণ বিভিন্নভাবে মানুষকে এই বিষয়ে সচেতন করার প্রয়াস করে যাচ্ছেন। এই সচেতনতা মূলক প্রচারণায় অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তি যেমন সঙ্গীতশিল্পী, অভিনেতা ইত্যাদি যেমন যুক্ত হয়েছেন তেমনি সরকারী পৃষ্ঠপোষকতাও একে বেশ খানিকটা সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করছে। তবে এখনো সমাজ থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিভ্রান্তি দূর করা সম্ভব হয়নি এবং মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যা একটি বড় বাঁধা।
মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিভ্রান্তি, অনুভূতি, বা অভিজ্ঞতা ব্যক্তির চিন্তা ভাবনা, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং সামাজিক অবস্থা অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন রকম হয়। ব্যক্তির আভ্যন্তরীণ অনুভূতি এ ক্ষেত্রে তার মাঝে লজ্জা এবং ভয়ের সৃষ্টি করে। আন্তঃব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বিভিন্ন কুসংস্কারের জন্ম দেয় এবং ব্যক্তি তার মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির জন্য সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা গুলোর কারণে একজন ব্যক্তির মাঝে যে হীনমন্যতা, লজ্জা এবং আশঙ্কা সৃষ্টি হয় সেটি খুবই প্রভাবশালী একটি সমস্যা। এর ফলে একজন মানুষ তার মধ্যাকার সমস্যার কথা কাউকে বলতে দ্বিধা বোধ করে। সামাজিকভাবে হেয় বা অপমানিত হবার এবং আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের তিরস্কারের ভয়ে সে কাউকে কিছু বলতে পারেনা।
এছাড়াও এ ধরণের বিভ্রান্তি একজন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহনেও অনুৎসাহী করে। এসব বাঁধা তাদের এই মানসিক সমস্যা সমূহকে আরও জটিল করে তোলে যা ভয়াবহ পরিণাম বয়ে আনে। আর সমস্ত কিছুর মূলে রয়েছে সেই বিভ্রান্তি যা এই ধারণার সৃষ্টি করে যে একজন মানসিক অসুস্থতায় ভোগা ব্যক্তি অন্য দশটা মানুষের মত স্বাভাবিক নয়, তারা পাগল বা উন্মাদ এবং সমাজ তাদের স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে অপারগ।
কোভিড-১৯ মহামারী যেন এই পুরনো সমস্যা নিয়েই আমাদের আবার নতুন ভাবে ভাবতে বাধ্য করছে কারণ এই দুঃসময়ে অন্যান্য সমস্যার সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে যেমন সমস্যার পরিমাণ বেড়েছে তেমনি এই সময়টাই হতে পারে এসব বিভ্রান্তি মেটাবার প্রচেষ্টা করার উপযুক্ত সময়। করোনা থেকে সুরক্ষিত থাকতে এখন মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়াস করা হচ্ছে এবং অধিকাংশ ব্যক্তি সেই নির্দেশনা স্বেচ্ছায় মেনে চলার প্রয়াস ও করছে। তাই এই সময়ে যদি মানুষের মধ্য থেকে মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত বিভ্রান্তি গুলো নিয়ে কথা বলা হয় তাহলে তাদের বোঝানো সহজ হবে এবং করোনা মুক্ত থাকার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভুমিকা ও পালন করবে। করোনা মানুষের মাঝে সৃষ্টি করেছে এক চরম আতঙ্ক। দীর্ঘদিন ধরে স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে থাকার ফলে সবার মানসিক অবস্থাই চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপ, বিভিন্ন দুশ্চিন্তা, হতাশা, অবসন্নতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব ইত্যাদি করোনার মতোই মহামারী আকার ধারণ করেছে। কিন্তু সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন বিভ্রান্তি মানুষকে তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের মত মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবতে নিরুৎসাহিত করছে যা এই সমস্যাগুলোকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এই দুঃসময়ে আমাদের সুস্থ থাকতে হলে শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবেই সুস্থ থাকতে হবে।
আর তাই অসুস্থ এই পরিবেশের ফলে সৃষ্টি হওয়া এসব মানসিক সমস্যা গুলো দূর করতে হলে এই বিভ্রান্তিগুলোকে দূর করা সবার আগে প্রয়োজন যেন মানুষ নিজের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আরও সচেতন হয় এবং মানসিক সমস্যাগুলিকে গুরুত্ব দিয়ে সেগুলো সমাধানের প্রয়াস করে। এটাই উপযুক্ত সময় যখন আমরা আমাদের মধ্যে প্রচলিত ধারণা গুলিকে আবার ভেবে দেখতে পারি। করোনা আবহে নিজ নিজ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগালেই আমরা বুঝতে সক্ষম হবো যে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা কতোটা প্রয়োজন। এটাই সুযোগ যখন সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারনাকে বদলানো সম্ভব হবে এবং অন্যান্য আর দশটা সমস্যার মত মানসিক সমস্যাগুলোও যে আমাদের জীবনের অংশ এই সচেতনতা সৃষ্টি হবে।
জীবনে সমস্যা থাকবেই। এটা মানব জীবনের স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এটা অস্বাভাবিক যে আমরা মানসিক সমস্যাকে স্বাভাবিক সমস্যা হিসেবে মানতে পারিনা। শারীরিক স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য জটিলতার মত মানসিক স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য জটিলতা গুলো ও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে এবং সমাধানের প্রয়াস করতে হবে। এক্ষেত্রে হীনমন্যতা বা লজ্জা পাওয়ার কোন কারণ নেই। বরং প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস, সহমর্মিতা এবং আশ্বাসের।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে