কিছু কিছু ক্ষেত্রে সন্তানের প্রতি অভিভাবকদের অন্ধ ভালোবাসা এবং স্নেহ তার ভবিষ্যৎ এবং ব্যক্তিত্ব গঠনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বাবা মা যখন তাদের সন্তানদের স্বভাবগত কোন সমস্যা নিয়ে কাউনসেলিং করানোর জন্য আসেন তখন এসব সমস্যা সমাধানের প্রাথমিক পর্যায় যে বিষয়টি দিয়ে শুরু হয় সেটি হল ভালোবাসা এবং এর অন্ধ ভালোবাসা বা এর অপব্যবহার বিষয় দুটি নিয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করা। অন্যভাবে বলতে গেলে, ভালোবাসা এবং এর অপব্যবহারের মাঝে তফাৎ খুবই সূক্ষ্ম এবং দুটি ভিন্ন বিষয় হলেও একে অপরের সাথে একান্ত ভাবে জড়িয়ে আছে এটি তাদের বোঝানো। প্রথমে তারা এটি বুঝতেই চান না যে সন্তানের এই সমস্যাটি তাদের অন্ধ ভালোবাসার ফলাফল বা ভালোবাসা এবং এর অপব্যবহার দুটি একদম আলাদা আলাদা দুটি বিষয় নয়, বরং ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। প্রথমে বুঝতে না চাইলেও ধীরে ধীরে একটা সময় মনঃকষ্ট নিয়ে এটা তারা বুঝতে পারেন যে তারা তাদের সন্তানকে সর্বোচ্চটুকুন দিয়ে ভালবাসতে চেষ্টা করেছেন কিন্তু অনিচ্ছাকৃত ভাবে হলেও সত্যি যে সেটি প্রকৃতপক্ষে ভালোবাসা নয় বরং এর অপব্যবহার হয়েছে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ছেলে বা মেয়ের আবদার বাবা মা ফেলতে পারেন না। এক মাত্র সন্তান কিংবা বাড়ির আদরের বড় সন্তান বা ছোট সন্তান বিভিন্ন রকম মানসিক ছুতোয় সন্তানকে বাড়তি সুবিধা প্রদান করা আমাদের অভিভাবকদের এক প্রকার মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। অনেকেই সময় বা বয়স কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে শুধুমাত্র সন্তানের ইচ্ছে পূর্ণ করার জন্য এমন সব বস্তু যেমন মোবাইল ফোন, মোটর সাইকেল ইত্যাদি তুলে দিচ্ছেন যা সন্তানের মানসিক বিকাশের পথে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।
অভিভাবকদের এ ধরণের আচরণ বা ভালোবাসা তাদের সন্তানদের মাঝে এক ধরণের বিশ্বাসের জন্ম দেয় যা তাদের মাঝে এমন এক মানসিকতা তৈরি করে যে তারা দায়বদ্ধতা এবং নৈতিকতা থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এছাড়াও তাদের মাঝে তৈরি এক ধরণের অনমনীয় এবং জেদী মনোভাব যা তাদেরকে বেপরোয়া আচরণের দিকে ঠেলে দেয়। অভিভাবকদের অনিয়ন্ত্রিত ভালোবাসা ধীরে ধীরে তাদের মাঝে বিশৃঙ্খলা, শিক্ষার অভাব, অকারণ ক্রোধ, এক রোখা মনোভাব, এমনকি আত্মহত্যা প্রবণ করে তোলে। আর এসব কারণেই অভিভাবকদের ভালোবাসা ধীরে ধীরে তাদের জন্য আশীর্বাদের বদলে অভিশাপ হয়ে ওঠে।
অভিভাবকগণ তাদের কৃতকর্ম এবং এর ফলাফল নিয়ে যত দিনে ওয়াকিবহাল হন ততো দিনে সন্তানদের জীবনের বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় অতিবাহিত হয়ে যায় এবং যে নেতিবাচক পরিবর্তন তাদের মাঝে ঘটে সেটি শুধরে নেবার সুযোগ অনেকটাই কমে যায়। তাই ভালবাসাতে গিয়ে অন্ধ স্নেহে মগ্ন হয়ে ভালোবাসার অপব্যবহার করা থেকে নিজেদের বিরত রাখুন। মনে রাখবেন যে কোন কিছুর আতিশয্য, তা সে ভালোবাসাই হোক না কেন, কখনো ভালো ফল বয়ে আনেনা।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে