অবসরপ্রাপ্ত জীবন সব সময় প্রশান্তি নিয়ে আসেনা

0
192
অবসরপ্রাপ্ত জীবন সব সময় প্রশান্তি নিয়ে আসেনা
আমরা সাধারণত এমনটাই ভেবে নেই যে, চাকরী শেষে অবসরের সময়টা খুব প্রশান্তিতে নিশ্চিন্তে কেটে যাবে। কিন্তু সব সময় এমনটা হয়না।

একজন মানুষের কর্মজীবন তাকে জীবনে সামনে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা যোগায়। যখন একজন মানুষ কাজ নিয়ে ব্যাস্ত থাকে তখন তার মন অন্যান্য অনেক দুর্ভাবনাগুলি থেকে মুক্ত থাকে। সরকারী বেসরকারি চাকরী গুলোতে সাধারণত দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় সেখানে ব্যায় করতে হয়। যেমন, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা বা এমনই কোন নির্ঘণ্ট সেখানে বেঁধে দেওয়া থাকে। প্রতি দিনের এই কাজ ব্যক্তির স্বভাব সুলভ হয়ে জীবন যাপনের সাথে মিশে যায়। ব্যক্তি তার কাজের মাঝে ব্যস্ত থাকলে দুর্ভাবনা যেমন তাকে আক্রান্ত করতে পারেনা তেমনি শারীরিক ও মানসিক দিক থেকেও তিনি সুস্থ থাকেন। জীবন একটি নির্দিষ্ট ছন্দে অতিবাহিত হতে থাকে। জীবনের এই কর্মব্যস্ততাকে অনেকের কাছেই আবার মনে হতে পারে কিছুটা অসুখের কারণ। কারণ, চাকরিরত একজন মানুষ তার পরিবারকে সময় দিতে পারেননা, ইচ্ছা অনুসারে মন মতো জায়গায় যেতে পারেন না। এমনকি দৈনন্দিন জীবন এতোটাই ব্যস্ততায় কাটে যে নিজেকেও সময় দিতে পারেন না। এমন অবস্থায় এটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে চাকরী শেষে হয়তো স্বাধীনভাবে বাঁচার একটা সুযোগ আসবে। তখন ইচ্ছা মতো ঘোরা যাবে, নিজের সাথে সাথে পরিবারের সবাইকে সময় দেওয়া যাবে। কিন্তু চাকরী শেষে যখন অবসরের সময়টা এসে যায় তখন হয়তো এই সুখের ভাবনা গুলি ঠিক এভাবে বাস্তব হয়ে ওঠেনা। বাস্তবতা হয়ে ওঠে কিছুটা ভিন্নতর।

মানুষ যখন চাকরী জীবন শেষে অবসর জীবনে পা রাখে মনে স্বাধীন হয়ে যাবার আনন্দ কিছু দিন পর্যন্ত অবশ্যই থাকে। সারা দিনের কর্মব্যস্ততা নেই, কোন কাজের কোন তাড়া নেই, আর সব থেকে বড় বিষয়, হাতে অফুরন্ত সময়। কিন্তু ধীরে ধীরে এই অফুরন্ত সময়ের আনন্দ অবসাদে রুপ নেয়। কারণ জীবন থেকে সামনে এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণাই হারিয়ে যায়। এত দিনে বয়সের যে ভার কখনো মনে পড়েনি, সেই শরীর যেন জানান দেয় যে শরীর ও মন হয়ে পড়ছে বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত। একজন অবসরে থাকা মানুষ খুব দ্রুত বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হন। কারণ তাদের দৈনন্দিন কাজের মাঝে কোন নিয়ম শৃঙ্খলা থাকেনা। তাদের মন ধীরে ধীরে পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন চিন্তাভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মানসিক চাপ সহ অন্যান্য সমস্যায় পর্যবসিত হয়। তার মাঝে একাকীত্বের অনুভূতি দ্রুত বাড়ে। এই একাকীত্ব তাকে সব সুখ থেকে দূরে করে দেয়। ব্যাস্ততাহীন জীবন যেন থমকে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে অবসরে যাওয়ার পর মানুষের শরীরে বয়সের ছাপ দ্রুত পড়ে। তাছাড়া বিভিন্ন অসুখ বিসুখেও মানুষ অপেক্ষাকৃত বেশী মাত্রায় আক্রান্ত হয়। আর এর কারণ হিসেবে তারা লক্ষ্যহীন জীবন যাপনকেই তুলে ধরেছেন।

একজন মানুষের জীবন দর্শন, চিন্তা ভাবনা এবং মানসিক অবস্থা ইতিবাচক থাকলেই তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় থাকে। কর্ম ব্যাস্ত জীবন মানুষকে অবসন্ন হবার কোন সুযোগ দেয়না। শরীর ও মন সব সময় একটা পরিক্রমার মধ্য দিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু অবসর জীবনে অধিকাংশ মানুষ এই চলমান প্রক্রিয়াটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শারীরিক ও মানসিক অবসাদের শিকার হয়। আর এ কারণেই ঠিক কল্পনার মতো সুখের সময় হয়তো কাটেনা। মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বেশ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। আর এটি কাটিয়ে উঠতে তার চারপাশের মানুষ জনই তাকে সহায়তা করতে পারে। আর তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা আমাদেরকেই এই অবসর জীবনে নিশ্চিত করার প্রয়াস করতে হবে।

মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন ক্রয়ের বিশেষ অফার

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleকারণে অকারণে আবেগ প্রবণ হওয়া থেকে বিরত থাকুন
Next articleসম্পর্কে স্বচ্ছতার গুরুত্ব অপরিসীম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here