বাঙালি মাত্রই খেলাধুলা প্রিয় এক জাতি । আমরা কেউ নিজে খেলে আনন্দ পাই, কেউ বা ভালবাসি খেলা দেখতে। খেলাধুলা কেবল যে শুধু আনন্দের উৎস তাই নয় , বরং শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখার এক কার্যকরী নিয়ামক ।
একজন ভাল খেলোয়াড়কে শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হয় একথা আমরা সবাই জানি । যা হয়ত খেয়াল করা হয় না, তা হল একজন সফল খেলোয়াড়কে মানসিকভাবেও পরিপক্ক হতে হয়। আজকের সাকিব আল হাসান, লিওনেল মেসি, রজার ফেদেরারের মতো সফল ক্রীড়াবিদদের এই অবস্থানে আসার একটি অন্যতম কারণ কিন্তু তাদের প্রবল মনোবল।
মাঠের বাইরের ও ভেতরের চ্যালেঞ্জকে উনারা সঠিক উপায়ে এবং অন্যদের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ভাল সামলাতে পারে বলেই আজ তারা এতো সফল ।
খেলার সাথে মনের যে নিবিড় সম্পর্ক তার বিজ্ঞানভিত্তিক অধ্যয়নের নামই স্পোর্টস সাইকোলজি বা ক্রীড়া মনোবিদ্যা। বর্তমানে এর চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা সব খেলাতেই। মূলত স্পোর্টস সাইকোলজিকে ২ ভাগ এ ভাগ করা যায় –
১) শিক্ষাগত ক্রীড়া মনোবিদ্যা বা অ্যাকাডেমিক স্পোর্টস সাইকোলজি
২) প্রায়োগিক ক্রীড়া মনোবিদ্যা বা অ্যাপ্লাইড স্পোর্টস সাইকোলজি
সহজ করে বললে, শিক্ষাগত ক্রীড়া মনোবিদ্যা মূলত মাঠের বাইরের অবস্থা যা একজন খেলোয়াড়কে প্রভাবিত করে তা নিয়ে কাজ করে । অপরপক্ষে, প্রায়োগিক ক্রীড়া মনোবিদ্যা বা অ্যাপ্লাইড স্পোর্টস সাইকোলজি মনোবিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মাঠে খেলোয়াড়ের পারফর্মেন্স উন্নতির কাজ করে ।
একজন স্পোর্টস সাইকোলজিস্টকে তাই অনেক কিছু নিয়ে কাজ করতে হয় । একজন খেলোয়াড়ের মানসিক গড়ন ও তার বেড়ে ওঠা নিয়ে ভাবতে হয়, তার শক্তির দিক ও দুর্বল দিক বুঝতে হয়, তার পারিবারিক ও সামাজিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কৌশল শেখাতে হয়, সর্বোপরি তাকে উৎসাহিত করতে হয় এবং দক্ষতা অর্জন কৌশল শেখাতে হয় ।
মূলত নিম্নের ৬টি বিষয় নিয়ে কাজ করতে হয় ক্রীড়া মনোবিদকে –
১) একজন খেলোয়াড়ের চারিত্রিক গড়ন ও ব্যক্তিত্ব
2) খেলার প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি
৩) খেলার প্রতি ব্যাকুলতা ও জেদ
৪) খেলোয়াড়ের সামাজিক ও পারিবারিক চাপ
৫) চাপ কমানোর কৌশল
৬) উৎসাহ তথা মোটিভেশন এবং নতুন কৌশল আয়ত্তকরণ ।
নিঃসন্দেহে, মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের জন্য ক্রীড়া মনোবিদ্যা কাজ করার এক নতুন ক্ষেত্র। বাংলাদেশে এখনো ক্রীড়া মনোবিদ্যা ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করতে পারেনি । কিন্তু এর যুগোপযোগিতা ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে অনেকেই এই বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হচ্ছেন।
যথাযথ লোকবল না থাকায় অনেক পেশাদার ফুটবল বা ক্রিকেট দল বা অন্যান্য ক্রীড়াদল বিদেশ থেকে ক্রীড়া মনোবিদ আনছেন। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে এ অবস্থার পরিবরতন ঘটবে এবং দেশে বহু ক্রীড়া মনোবিদ কাজ করবেন।
লেখক
ডা. সাইদুল আশরাফ কুশল
এমডি রেসিডেন্ট (সাইকিয়াট্রি)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা