সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ জীবনযাত্রার ঝুঁকিতে রয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬০ বছর ধরে এই অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে এবং বাড়ছে। ফলে এ অঞ্চলের কৃষি, স্বাস্থ্য ও উৎপাদন কমে গেছে। অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা।
তবে জলবায়ু পরিবর্তন বা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি শুধু শারীরিক বা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলে না, মানসিক স্বাস্থ্যেরও চরম ক্ষতি সাধন করে।
জার্নাল পিএনএএস-এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, গড় মাসিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানসিক স্বাস্থ্যের যৎসামান্য সমস্যা সৃষ্টি করে। কিন্তু পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে, গড় তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির ফলে মানসিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। দেখা দিতে পারে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি, ইমোশনাল সমস্যা।
এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির মিডিয়া ল্যাবের বিজ্ঞানী নিক ওব্রাদোভিচ বলেন, ‘আমরা ঠিক জানি না কেন উচ্চ তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা বৃদ্ধি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে।’
‘তবে এমনটা হতে পারে যে গরম তাপমাত্রার কারণে ঘুম কম হয়, যা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। উচ্চ তাপমাত্রা বা তাপমাত্রা বৃদ্ধি কেন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করে – তা জানতে আমাদের আরো প্রচুর কাজ করতে হবে,’ বলছিলেন তিনি।
গবেষণার জন্য ওব্রাদোভিচ ও তার সহকর্মীরা “ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিস কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনস’ বিহেভিওরাল রিস্ক ফ্যাক্টর সারভেইল্যান্স সিস্টেম” থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। তারা সেখান থেকে প্রায় ২০ লাখ মার্কিন নাগরিকের ব্যক্তিগত মানসিক স্বাস্থ্যের তথ্য এবং ২০০১ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দৈনিক আবহাওয়ার তথ্য নিয়েছিলেন।
ওব্রাদোভিচ বলেন, ‘আমরা এই জরিপ থেকে এক দশকের মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করেছি, যেখানে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। প্রশ্নটি ছিল- আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা এখন কেমন?’
পরবর্তীতে তারা মানসিক স্বাস্থ্যের ওই প্রতিবেদনের সাথে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের স্ব-স্ব এলাকার তখনকার আবহাওয়া মিলিয়ে দেখেন। গবেষণায় উঠে আসে যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের স্ট্রেস, অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন ও ইমোশনাল সমস্যা তৈরি করে।
এর আগে, মনোবিজ্ঞানী ডা. লাইস ভ্যান সাস্টেরেন জানিয়েছিলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিদ্যমান মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাকে আরো খারাপ করে। ভ্যান সাস্টেরেন ম্যাসাচুসেটের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের হার্ভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর সেন্টার ফর হেলথ অ্যান্ড দ্যা গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট-এর একজন মনোবিজ্ঞানী।
২০১৩ সালে সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে ভ্যান সাস্টেরেন বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও বৃষ্টিপাতের সাথে বিভিন্ন ব্যক্তি ও বিভিন্ন দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বৃদ্ধির সম্পর্ক রয়েছে।
তিনি বলেন, উচ্চ তাপমাত্রা শরীরের ‘অ্যাড্রেনালিন’ (এক ধরনের হরমোন) এর মাত্রা বৃদ্ধি করে, যা বিবাদ বা আগ্রাসনের ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে