গাঁজা সেবনে যত সমস্যা

গাঁজায় মাদকাসক্তি কেন মাদক

গাঁজা নামের মাদকটি যে গাছ থেকে তৈরি হয়, তার নাম ‘ক্যানাবিস স্যাটাইভা’। এই গাছের বিভিন্ন অংশ প্রক্রিয়াজাত করে বিভিন্ন নামে মাদক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মারিজুয়ানা, হাশিশ, ভাং, চরস, হেম্প, গ্রাস, পট, উইড-সবই ওই একই গাছের অংশ – বীজ, ফুলযুক্ত উপরিভাগ, পাতা, বা ডালের নির্যাস থেকে তৈরি।
গাঁজা বাংলাদেশে দামে সস্তা ও সহজপ্রাপ্য হওয়ায় এ মাদক দ্রব্য সেবনকারীও বেশি। অনেকে সিগারেটের মতোই গাঁজা সেবনে অভ্যস্ত।

অনেক মাদকসেবীর অভিভাবক বা পরিবারের লোকজন গাঁজাকে খুব হালকাভাবে নেন। শুরুর দিকে আসক্তের গাঁজা সেবনের ব্যাপারটি জানলেও খুব একটা গুরুত্ব দেন না বা চিকিৎসার প্রয়োজন অনুভব করেন না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে গাঁজাও একটি সর্বনাশা, ভয়ংকর মাদক। দীর্ঘমেয়াদে গাঁজা সেবনে যে পরিমাণ শারীরিক ক্ষতি হয়, তার চেয়েও বেশী হয় মানসিক সমস্যা।

গাঁজা সেবনের পর প্রাথমিক আনন্দের যে অনুভূতি হয়, তা কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এই আনন্দের অনুভূতির জন্যই প্রথমে সেবনকারীরা গাঁজা নেয়। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে এর পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং এক পর্যায়ে নির্দিষ্ট সময় পর পর গাঁজা না নিলে শারীরিক-মানসিক নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যার ফলে সেবনকারীরা আবারো গাঁজা নিতে বাধ্য হয়। গাঁজা সেবনের কিছুক্ষণ পর চোখ লাল হয়ে ওঠে, নাড়ির গতি বাড়ে, গলা-জিহ্বা-ঠোঁট শুকিয়ে যায়, ক্ষুধা বাড়ে, শারীরিক ভারসাম্য রক্ষায় অসুবিধা হয়।

অনেকের মাঝে উদ্বেগের লক্ষণ দেখা দেয়, বিবেচনা বোধ লোপ পায়। অল্প পরিমাণ গাঁজা সেবনেও এসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন গাঁজা সেবন করলে রোগ প্রতিরোধ ও প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়, ক্যান্সারসহ ফুসফুসের নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ে, শরীরে হরমোনের তারতম্য ঘটে। তবে, দীর্ঘমেয়াদে গাঁজা সেবনে মূল যে সমস্যা দেখা দেয় তা হচ্ছে- নানা ধরনের মানসিক বৈকল্য। গাঁজাসেবী সন্দেহবাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে, নির্দিষ্ট কাউকে বা সবাইকে অহেতুক তার শত্রু মনে করে, ভীত সন্ত্রস্ত থাকে। সন্দেহের বশবর্তী হয়ে নিরীহ কারো উপর আক্রমণও করে বসে। কারো কারো দৃষ্টিভ্রম, শ্রুতিভ্রম ঘটতে পারে। গাঁজাসেবীদের জটিল মানসিক রোগ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশী। অনেকের স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ, সৃশৃংখল চিন্তার ক্ষমতা বিনষ্ট হয়।

দীর্ঘদিনের আসক্তদের ‘অ্যামোটিভেশনাল সিনড্রোম’ নামের রোগ হতে পারে। এতে ব্যক্তি মনোযোগ ও ধৈর্য ধরে করতে হয়-এমন কাজ করতে অনাগ্রহী হয়, আবেগ-অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায়, কোন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শারীরিক ও মানসিক শক্তির অভাব বোধ করে। ফলে, পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাজীবন ব্যাহত হয় এবং একপর্যায়ে ব্যক্তি পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

এ কারণে গাঁজাকে হালকাভাবে না নিয়ে এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে, গাঁজাকে ‘না’ বলতে শিখতে হবে। অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সন্তান গাঁজা নিচ্ছে এ ব্যাপারে সন্দেহ হলে তার সাথে খোলামেলাভাবে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে কথা বলতে হবে, তাকে দায়ী না করে বরং তার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। কেউ গাঁজা সেবন করলে প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে তা নিশ্চিত হওয়া যায়। এ থেকে মুক্তির জন্য মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করাতে হবে। যে কোন মাদকের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী। ধৈর্য ধরে বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।

করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

 

 

Previous articleনারীর যৌন সমস্যা ও কিছু কথা
Next articleমানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখবে বই
ডা. মুনতাসির মারুফ
সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here