প্রকৃতি মানুষের জীবনে এক অপরিহার্য অনুষঙ্গ। পঞ্চভূতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ‚ প্রভাবেই মানুষের শারীরিক এবং বিশেষ করে মানসিক সুস্থতা নির্ভর করে। তাই তো মানুষ বারবার ফিরে ফিরে যায় সেই প্রকৃতির কাছে-যাকে বলা হয় ভ্রমণ। যদিও করোনা মহামারি সময়ে ভ্রমণ অনেকটেই বন্ধ রয়েছে। তবু আজ ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন এর মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত “মনোসামাজিক বিশ্লেষন” অনলাইন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল:
সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রমণ এর বিকাশ ঘটছে ‘ট্যুরিজম’ নামের আড়ালে। এই ট্যুরিজম আমাদের জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলে, আমাদের দেশে ট্যুরিজমের সুযোগ-সুবিধা কেমন, কী কী অসুবিধা, দিনশেষে আমরা কীভাবে ট্যুরিজম থেকে মানসিক শান্তি নিশ্চিত করতে পারি এমন সব বিষয় নিয়েই আমরা কথা বলেছিলাম সচেতন সমাজের বিভিন্ন ̄ব্যক্তিবর্গের সাথে। আর সেসব নিয়েই আমাদের এবারের মনোসামাজিক বিশ্লেষণ-‘ট্যুরিজমের এপিঠ-ওপিঠ’। বিশ্লেষণ করেছেন ডা. পঞ্চানন আচার্য।
̄স্পটগুলিতে ভ্রমণকারীর সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেয়া উচিত: অধ্যাপক মো. মঞ্জুরুল হাসান-চেয়ারম্যান, ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজের চাপ এড়াতে বিশ্রামের প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষেরা বিশ্রাম ব্যাপারটিকে মোটেই ̧গুরুত্ব দিই না। আমাদের দেশে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল মানুষেরা ভ্রমণ ব্যাপারটিকে জীবনের অনুষঙ্গ হিসেবে দেখেন। কিন্তু যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল না তারা ভ্রমণকে মনে করেন এক ধরনের বিলাসিতা। ভ্রমণ আমাদের দৈনন্দিন কাজের চাপ থেকে মুক্তির অন্যতম মাধ্যম। ভ্রমণের মাধ্যমে আমাদের মনে জমে থাকা চাপ প্রশমিত হয়। এই জন্য এখন চিকিৎসাশাস্ত্রেও ভ্রমণকে খুব ̧গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমেরিকার এক গবেষণায় দেখা গেছে, সে দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানষ কিছু দিন পরপর কোথাও ভ্রমণ না করতে পারলে প্রচন্ড মানসিক চাপে ভোগেন। আরেকটি মজার ব্যাপার হলো-কেউ যদি কয়েক দিনের বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে কোথাও গিয়ে আবার ফিরে আসে তাহলে সে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করে তা ১০০ বছর ঘরে বসে থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতার চেয়েও বেশি। ভ্রমণ আমাদের শক্তি জোগায়, উদ্যমী হতে সাহায্য করে। ভ্রমণ মানষের মধ্যে সুখী ভাব তৈরি করে, মানসিক শক্তি বাড়ায় এছাড়া ভ্রমণ মানষের সৃজনশীলতা বাড়ায়। তবে এসবের জন্য ভ্রমণ হতে হবে আনন্দদায়ক। আমাদের দেশে কক্সবাজার, বান্দরবান কিংবা অন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে গেলে দেখা যায় অজস্র মানুষ। এত মানুষের ভিড়ে ভ্রমণের উপভোগ অনেক সময় বিরক্তিতে পরিণত হয়। তাই ট্যুরিস্ট রিসোর্টের সংখ্যা কমাতে হবে এবং সকল ট্যুরিস্ট স্পটে ভ্রমণকারীদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। ভ্রমণ ব্যাপারটি অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে যেমন- জায়াগাটির যোগাযোগ ব্যবস্থা, থাকার নিরাপত্তা, খাবারের মান। এসব দিকেও কর্তৃপক্ষের নজর বাড়াতে হবে। আর কোথাও ভ্রমণে যাওয়ার আগে আমাদেরকে অবশ্যই সেই এলাকার গতি-প্রকতি, সংস্কৃতি সকল বিষয়ে কিছু সাধারণ তথ্য জেনে নিতে হবে।
পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে সার্বিক ব্যবস্থাপনা সবিধাজনক নয়: জোবেরা রহমান লিনু, ক্রীড়াবিদ।
ছোটোবেলা থেকে আমি খব বেড়াতে পছন্দ করি। অনেকে মনে করেন ঘুরে বেড়ানো মানে টাকার অপচয়, তারা জীবনে টাকা জমানোকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় ঘরে বেড়ানোটা মনের সবচেয়ে বড়ো খোরাক। আমি যখন খুব মানসিক চাপ অনুভব করি তখনই ঘুরতে বের হয়ে যাই, ঘুরতে গেলে মনের মধ্যে এক ধরনের প্রশান্তি চলে আসে। আমি মনে করি আমার জীবনে সুখে থাকার সবচেয়ে বড়ো উপাদান ঘরে বেড়ানো। তবে এই যে আমি এত ঘুরে বেড়াই তার মধ্যে আমাদের দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে কিন্তু খব বেশি যাই না। যাই না বলতে যেতে পারি না। যেতে পারি না এই কারণে যে, কোথাও বেড়াতে গেলে আমরা সবচেয়ে প্রধান্য দিই সেখানের পরিবেশ, নিরাপত্তা, খাবারের দিকে। এসব দিক দিয়ে আমাদের দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলি অনেক পিছিয়ে। উদাহরণ হিসেবে যদি বলি-কক্সবাজার আমাদের দেশের সবচেয়ে বেশি মানুষ বেড়াতে যায়। সেখানেও কিন্তু সন্ধ্যার পর বাইরে বেরোতে গেলে মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে, যা বেড়ানোর আনন্দে ব্যঘাত ঘটায়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, মানুষের আচার-ব্যবহার সবকিছুতে আমাদের দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো বাইরের দেশের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। যার কারণে আমাদের দেশে বেড়াতে গেলে মন ভালো হওয়ার বিপরীতে অনেক সময় মন খারাপ হয়ে যায়। এর ফলে বিপুল সম্ভাবনা থাকার পরও আমাদের দেশের পর্যটন খাত পিছিয়ে যাচ্ছে, দেশের বাইরে থেকে আমাদের দেশে পর্যটক আসার সংখ্যা প্রতিনিয়তই কমে যাচ্ছে। আমাদের দেশে ইদানীং বেশ কিছ রিসোর্ট হয়েছে, যার অনেক ̧গুলিই আবার ব্যয়বহুল। আবার ব্য়য়বহুল হলেও সেখানে পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। শুধ রিসোর্ট করে রাখলেই হবে না, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সেখানে পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থাও রাখতে হবে। এছাড়া পর্যটকদের ধরে রাখতে খাবার একটা বড়ো ব্যাপার। বাইরের দেশে বেড়াতে গেলে সেখানের স্ট্রীট ফুড অনেক বেশি সুস্বাদু , পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্থ্যকর। এই জায়গাতেও আমাদের দেশের পর্যটন কেন্দধ অনেক পিছিয়ে।
ভ্রমণ মানুষের জীবনে নতুন প্রাণশ৩ির সঞ্চার করে: কনক আদিত্য, সংগীত শিল্পী ও উদ্যোক্তা।
একই ধরনের কাজ বারবার করতে করতে মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে। অতিরিক্ত কাজের চাপেও হাঁপিয়ে ওঠে। অথবা কিছু না করে চুপচাপ বসে থাকলেও এমনটা ঘটতে পারে। এমন পরিস্থিতিতেই প্রয়োজন পড়ে হাওয়া বদলের। যাপিত জীবনে নতুন প্রাণশক্তির সঞ্চার হয়। নতুন উদ্যমে আবার শুরু করা যায়। সাধারণত মানুষ ভ্রমণে যায় তার পরিচিত গন্ডির বাইরে। সবসময় যে ধরনের পরিবেশের মধ্যে থাকে চেয়ে ভিন্ন আবেদনের জায়গাতেই ভ্রমণ করতে চায়। শহুরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত কেউ সাগর, পাহাড় বা বনের প্রান্তেই ঘরতে যায়। অথবা কম উন্নত শহরের পর্যটক আধুনিক কোনো শহরে গিয়ে মজা পায়। বলা যায় নতন কোনো বলয় ঘিরেই ভ্রমণপিপাসু দের আনাগোনা। মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ আচরণের বাইরে ভাবে না। নতুন কোনো জায়গায় গিয়েও অভ্যস্ত আচরণই পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। বিশেষ করে এলোমেলোভাবে ময়লা ফেলা-যা পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য হুমকি স্বরুপ। যে পর্যটকের তা ভালো লাগে না, সবার দেখাদেখি সে-ও একই কাজ করে। কিংবা অনেকের মধ্যে এ বিষয়টি হয়ত কাজই করে না। পরিবেশ নিয়ে সামান্য ভাবনাও নেই। উন্নত দেশের অনেক গভীর অঞ্চলে গিয়েও আমি একই ঘটনা ঘটতে দেখেছি। সেখানে সবধরনের লিখিত নির্দেশনা এবং জরিমানার অংক উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও। হয়ত আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হস্তক্ষেপে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। আমার পক্ষে এ বিষয়ে কোনো পরামর্শ দেয়া বেশ কঠিন।
ভ্রমণের সময় যত্রতত্র ময়লা ফেলার প্রবণতা ত্যাগ করতে হবে: মো. শফিকুল ইসলাম পলাশ, সিইও, বাংলার পথে (ট্যুরিজম এজেন্সি)।
আমরা জানি যে, চলমান পানিতে শেওলা জমে না। আমরা যখন কোনো কাজে আটকে থাকি তখন আমাদের মনের ওপর চাপ তৈরি হয়; আবার চাপ জমতে জমতে অনেক সময় আমরা কাজে মনঃসংযোগ করতে পারি না। তাই আমাদের উচিত প্রতি ১০-১৫ দিন পরপর একটু হাঁটতে বা ঘুরতে বের হওয়া। তাতে করে হাওয়া বদলের ফলে আমাদের মনটা একট সতেজ হয়, মন খারাপ দূর হয়, যেকোনো কাজের স্পৃহা বাড়ে। এই হাওয়া বদলের ব্যাপারটি কিন্তু অনেক সময় ডাক্তাররাও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাই ট্যুরিজম বা ভ্রমণ আমাদের দৈনন্দিন জীবনেরই একটি অংশ। আবার এই ট্যুরিজম একটি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পার্শ্ববর্তী দুটি দেশ নেপাল এবং ভুটানের অর্থনীতি কিন্তু পর্যটন-নির্ভর। সেই তুলনায় আমাদের দেশে ট্যুরিজম অর্থনীতির বৃহৎ সুযোগ থাকার পরও আমরা সেটি কাজে লাগাতে পারছি না। এসব দেশগুলোতে সবকিছুর মধ্যে শৃঙ্খলা এবং নিয়মানুবর্তিতা রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে সেসবের বালাই নেই। যদিও আমাদের মানুষই সভ্য দেশে গিয়ে আইন মেনে চলছে। অর্থাৎ আমাদের দেশের মানুষের আইন না মানার পেছনে আইনের কঠোর প্রয়োগের অভাব যেমন রয়েছে, তেমনি নিজেদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। এই আইন মানতে অনীহা ও অসচেতনতার প্রভাব কিন্তু আমাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর ওপরও পড়ছে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ র্যটনকেন্দ্রগুলোতে গিয়ে যত্রতত্র নোংরা করছে। আমরা আমাদের সংগঠন বাংলার পথেকে নিয়ে যখন কোনো পর্যটন কেন্দ্রে যাই, তখন সেখানে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করি। যারা ট্যুরে যান তাদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে কেউ যেন যত্রতত্র ময়লা না ফেলি।
আমার ভালোলাগা যেন অন্যের ভালোলাগাকে নষ্ট না করে: মো. জহির উদ্দিন সহকারী অধ্যাপক, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।
বেড়াতে যাওয়া একটি স্বাস্থ্যকর আচরণ। অনেক বছর ধরেই বেড়াতে যাওয়া মানসিক রোগের চিকিৎসার অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা আনুষ্ঠানিক কোনো চিকিৎসা নয়, কিন্তু মানষ যখন কোথাও বেড়াতে যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই তার মনের ওপর একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। বেড়াতে গেলে মানষের অনেক রিলাক্স লাগে। কারণ মানুষ সাধারণত তার পছন্দের বা ভালো লাগার জায়গা ̧লোতেই বেড়াতে যায়। যার পাহাড় ভালো লাগে সে পাহাড়ে যায়, যার সমুদ্র ভালো লাগে সে সমুদ্রে যায়, কেউ বা আবার বড়ো মার্কেটে বেড়াতে যায়। তাছাড়া বেড়াতে গেলে মানুষের দৈনন্দিন কাজের চাপ থাকে না, নিজের খাবার প্রস্তুতির চাপ থাকে না, এমনকি থাকার জায়গা পরিপাটি রাখার দায়িত্বটকু ও থাকে না হোটেলে থাকার ফলে। সবমিলিয়ে নিজের দৈনন্দিন কাজের জন্য পরিশ্রম করতে হয় না, তখন একটা পরিবর্তন আসে, সেটিই মনের মধ্যে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। যত দিন যাচ্ছে জীবন তত জটিল হয়ে যাচ্ছে, মানুষকেও তত বেশি মানসিক চাপ নিতে হচ্ছে, অনেক দায়িত্ব একসাথে পালন করতে হচ্ছে। যার ফলে যখনই এইসব দায়িত্বের বাইরে একট বেড়ানোর সময় পাওয়া যায়, তখনই একট ভালো থাকার ফুসরত মেলে। তবে এই ভালো থাকার সময়টা যেন অন্যের বিরক্তির কারণ না হয়ে দাঁড়ায় সেটি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। কারণ আমরা কোথাও বেড়াতে গেলে কোনো একটা খাবার খেয়ে যদি তার উচ্ছিষ্ট যেখানে সেখানে ফেলি তবে জায়গাটা নোংরা হবে। এক্ষেত্রে আমাদেরকে দায়িত্বশীল হতে হবে, আমরা যখন পর্যটন কেন্দ্রে যাই তখন যেন যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলি সেজন্য আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। আমাদের জানতে হবে, নোংরা পরিবেশ মনের ওপর নেতিবাচক এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশ মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ভ্রমণ মানসিক মানসিক স্বাস্থ্যে অবদান রাখলেও এটি মানসিক রোগের চিকিৎসা নয়: অধ্যাপক ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব, চেয়ারম্যান মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
মানষের মনের প্রশান্তির জন্য ভ্রমণ খুব ভালো একটি মাধ্যম। তবে আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত ধারণা আছে যে, ভ্রমণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে মূল চিকিৎসার অংশ। যেটি সঠিক নয়। ভ্রমণ পুরোপুরিভাবেই বিনোদনের অংশ। মানুষের জীবন ধারণের জন্য মৌলিক চাহিদার পাশাপাশি ভ্রমণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাঝে মাঝে কোথাও বেড়াতে যাওয়া ছাড়া জীবনের পরিপূর্ণতা আশা করা যায় না। তবে ভ্রমণ হতে হবে খুব বেশি পরিকল্পনামাফিক। কোথাও বেড়াতে যাওয়ার ফলে আমাদের ব্যক্তিগত পারিবারিক কিংবা পেশাগত কর্মকান্ড যেন কোনোভাবেই বাধাপ্রাপ্ত না হয় সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
বিশ্লেষণ: ওপরের আলোচনা থেকে যা উঠে এসেছে তার মধ্যে প্রথমেই আসে ভ্রমণের উপকারিতা সম্পর্কে। বিশেষ করে ভ্রমণে মানসিক স্বাস্থ্যে ওপর যে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে সে বিষয়ে সবাই একমত। তাই ভ্রমণ করা কোনো অহেতুক অর্থ নষ্ট করার বিষয় নয়। কিন্তু এই ভ্রমণ আনন্দদায়ক হওয়াটা খবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এই বিষয়ে আমাদের দেশ অনেক পিছিয়ে আছে। এই পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেসব হচ্ছে-সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার অভাব, আইন মেনে না চলার প্রবণতা, পরিবেশ নষ্ট করার প্রবণতা, জনগণের অসচেতনতা প্রভতি। যেমন প্রথমেই আসে সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার অভাবের কথা। ভালো যাতায়াত, নিরাপত্তা, খাবার ও থাকার সব ব্যবস্থা, কম খরচসহ বিভিন্ন বিষয় ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সেইসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ট্যুরিস্ট স্পটগুলিকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের বিষয়ও। আমাদের দেশ এই সব ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। ফলে অনেক সুন্দর সুন্দর এবং আকর্ষণীয় পরিদর্শনের স্থানে ভ্রমণের আগে ভাবতে হয় অসুবিধার কথা। পক্ষান্তরে, কিছু কিছু সাধ্য সীমার বাইরে একসঙ্গে অনেক মানুষ গিয়ে ভিড় করে অসুবিধার মাত্রা আরো বাড়িয়ে তোলে। যেমন শীতকালে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে একসাথে এত লোকের সমাগম হয়, যার ফলে থাকা-খাওয়া-যাতায়াত থেকে শুরু করে প্রতি পদে পদে প্রতিকূল অবস্থার সম্মূখীন হতে হয়। এমনকি সমদ্রের সৌন্দর্যও উপভোগ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সেইসঙ্গে অসচেতন জনগণের যত্রতত্র ময়লা ফেলা, উচ্চশব্দে গান-বাজনা করাসহ বিভিন্নভাবে পরিবেশের সৌন্দর্য নষ্ট ও পরিবেশ দষণ হয়ে ওঠে একটি স্বস্তিদায়ক ভ্রমণের অন্তরায়। ফলে মানসিক শান্তির পরিবর্তে মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় ভ্রমণ। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন। বিশেষ বিশেষ স্থানে পর্যটকের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টা বিবেচনা করা উচিত, যেটি অনেক পর্যটকবহুল দেশেই করা হয়ে থাকে।
তবে সবশেষে মনে রাখতে হবে, ভ্রমণে মন ভালো হওয়ার অনেক কারণ থাকলেও, যখন কারো মানসিক রোগ হয়ে থাকে তখন কিন্তু শুধু ভ্রমণে রোগ সারে না। ভ্রমণের কারণে মন ভালো হওয়ায় কিছু সহায়তা নিশ্চয়ই হয়, তবে মানসিক রোগ সারে শুধু নির্দিষ্ট বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার মাধ্যমে। তাই, মানসিক রোগে চিকিৎসা নিতে অবহেলা করবেন না।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন