গতপর্বে আমরা কনভার্সন ডিসঅর্ডার এর কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে জেনেছিলাম। আজ এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে আরো কিছু জানবো।
কনভার্সন ডিসঅর্ডার নির্ণয়ের উপায়সমূহ
কনভার্সন ডিসঅর্ডার মূলত Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders এর মানদণ্ড অনুযায়ী নির্ণয় করা যায়। এ সকল উপায়সমূহ হলো-
- শারীরিক মুভমেন্ট এবং ইন্দ্রিয়জনিত লক্ষণগুলো নিজে থেকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারা
- নির্দিষ্ট স্ট্রেসজনিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেই শারীরিক প্রতিক্রিয়াগুলো দেখা দেয়া
- শারীরিক লক্ষণগুলো চিকিৎসাগতভাবে ব্যাখ্যা করতে না পারা
- শারীরিক লক্ষণসমূহ দৈনন্দিন জীবনকে বাধাগ্রস্ত করা
- এছাড়াও ব্যক্তির কনভার্সন ডিসঅর্ডারের লক্ষণসমূহ নিশ্চিত করার জন্যে প্রয়োজনে সিটি স্ক্যান,এক্স রে, ইলেক্ট্রোয়েনসেফালোগ্রাম, রক্তচাপ পরীক্ষা করা যেতে পারে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?
উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলো যদি ব্যক্তির বর্ণনা করা লক্ষণের সাথে মিলে যায়, তবে সে ক্ষেত্রে ব্যক্তিকে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এছাড়াও উক্ত লক্ষণগুলো আসলেই কোন শারীরিক বা স্নায়বিক গুরুতর সমস্যার কারণেও দেখা যেতে পারে বিধায় দেরি না করে তা নির্ণয় করে নেয়া উচিত। যদি নির্ণয় করার পর দেখা যায় যে, এটি একটি কার্যকরী নিউরোলজিক ব্যাধি, তবে তাৎক্ষণিক গৃহীত ব্যবস্থা ডিসঅর্ডারের লক্ষণগুলির অবস্থা উন্নত করতে পারে এবং ভবিষ্যতে সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
কনভার্সন ডিসঅর্ডারের কারণে সৃষ্ট জটিলতা
যদি উপযুক্ত সময়ে সঠিকভাবে কনভার্সন ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা না করা হয়, তবে সে সকল লক্ষণগুলো স্থায়ী হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। এর ফলে রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।
কনভার্সন ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা
সাধারণত বিভিন্ন ক্লিনিকগুলোতে এ ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রধানত রোগের পেছনে দায়ী থাকা স্ট্রেসজনিত পরিস্থিতিটিকে খুঁজে বের করা হয়। এছাড়াও থেরাপিস্ট এ ডিসঅর্ডারের লক্ষণগুলোর প্রকটতা কমিয়ে আনার জন্যে রোগীকে উপযুক্ত ইতিবাচক প্রণোদনা দিয়ে থাকেন যার ফলে রোগী স্ট্রেসজনিত পরিস্থিতিতে এ ধরনের উপসর্গের দ্বারা আক্রান্ত না হয়। এছাড়াও ব্যক্তিতে যে সকল থেরাপি দেয়া যেতে পারে, তা হলো-
• সাইকোথেরাপি
• ফিজিক্যাল থেরাপি (এটি স্ট্রেসজনিত পরিস্থিতির ফলে সৃষ্ট পেশীজনিত দৃঢ়তা বা খিঁচুনিকে শিথিলায়নে সহায়তা করে)
• গ্রুপ থেরাপি
• বায়োফিডব্যাক
• হিপোনসিস বা সম্মোহন থেরাপি
• রিল্যাক্সেশন থেরাপি এবং
• সাইকোট্রপিক মেডিকেশন বা ঔষধ সেবন (ডিসঅর্ডারের কারণে সৃষ্ট বিষণ্ণতা এবং উদ্বিগ্নতা দূর করতে সাহায্য করে)
উপরে উল্লেখিত উপায়গুলোর মাধ্যমে সহজেই কনভার্সন ডিসঅর্ডারকে নিরাময় বা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়ে থাকে।
কনভার্সন ডিসঅর্ডারের প্রতিরোধ
এটি সবসময় সব রোগের ক্ষেত্রেই সত্য যে, রোগ নিরাময় অপেক্ষা তা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সর্বাধিক কাম্য। কনভার্সন ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম নয়। কনভার্সন ডিসঅর্ডার প্রতিরোধের প্রাথমিক উপায় হলো স্ট্রেসজনিত পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাবার উপায় খুঁজে বের করা এবং যথাসম্ভব উপায়ে মানসিক আঘাত এড়ানোর চেষ্টা করা। এছাড়াও আর যে উপায়ে এ ডিসঅর্ডারটি প্রতিরোধ করা সম্ভব, তা হলো-
• যে কোন মানসিক ব্যধিতে আক্রান্ত হলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা
• ভালো কাজ করা এবং জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখা
• সকলের সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি করা এবং তা বজায় রাখার চেষ্টা করা
• একটি নিরাপদ ও শান্ত পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টি করা
উপরে উল্লেখ করা অনেক পরিস্থিতিই হয়তো আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে যতটুকু সম্ভব এসকল বিষয়গুলোকে কার্যকরীভাবে মোকাবেলা করা উচিত কারণ যারা এসকল ব বিষয়গুলোকে কার্যকরীভাবে মোকাবেলা করতে পারে তারা অনেকাংশেই তাদের চাইতে ভালো থাকে যারা বিরূপ পরিস্থিতি সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে অক্ষম। সর্বোপরি, চাপ এবং মানসিক আঘাত হ্রাস করা কনভার্সন ডিসঅর্ডার প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে।
অতএব, আমাদের জীবনে নানা ধরনের স্ট্রেস বা উদ্বেগজনিত পরিস্থিতি আসতেই পারে। এসকল পরিস্থিতি উপযুক্ত উপায়ে মোকাবেলা করা অথবা সময় থাকতেই কনভার্সন ডিসর্ডারের কোন লক্ষণ দেখা দিলে উপযুক্ত থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচত। আপনার সঠিক সময়ের একটি সঠিক পদক্ষেপ এ ডিসঅর্ডারে ফলে তৈরি হওয়া প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্তি দিতে পারে এবং আপনার আগামীকে করে তুলতে পারে আরো সুন্দর, স্বাভাবিক ও আনন্দময়।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন