মহামারীর এই সময়ে আমাদের মানসিক চাপ অনেক বেশি। মানসিক এই চাপ বা ধকল থেকে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।মৃত্যুভয়,শংকা,হতাশা,রাগ,দুশ্চিন্তা আর দুঃসংবাদ জন্ম দিতে পারে নানান মানসিক ব্যাধি।
এসময় মানসিক চাপ মোকাবেলার কৌশল জানা এবং মানা খুবই জরুরি। মানসিক চাপ মোকাবিলার কৌশল প্রধানত দুইভাবে কাজ করে। করোনা মহামারীর আলোকে বিষয়টি নিম্নলিখিত ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। ’
ক.সমস্যা সমাধানের কৌশল
১.করোনা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন।দরকারী পরামর্শ গ্রহণ।প্রতিরোধ বিধি মেনে চলার ইচ্ছাশক্তি অর্জন।
২.প্রতিরোধের জন্যে ব্যাক্তিগত এবং পারিবারিক পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ।
৩.যাদের জরুরী সেবা দানের জন্যে অফিসে যেতেই হবে তাদের উচিত মন থেকে শংকা এবং ভয় ঝেড়ে ফেলে সাহস সঞ্চয় করা এবং নিজস্ব নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া। ৪.করোনার সমস্যা আপনার ব্যাক্তিগত সমস্যা নয়।বিশ্বব্যাপী সব মানুষের সমস্যা।তাই সমাধানে আপনি কেবল মাত্র ছোট একটি অংশ তা মন থেকে মেনে নিতে হবে।
খ.আবেগ কমানোর কৌশল
১.প্রিয়জন এবং কাছের মানুষদের সাথে আলাপ আলোচনা করা।তাদের সাথে মন খুলে কথা বলা,গল্প করা এবং সুখ স্মৃতি স্মরণ করা।
২.মহামারীতে কে কি করছে?কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা শোনা এবং যুক্তিযুক্ত মনে হলে তা ধারণ করা।
৩.যে সমস্যা সমাধান যোগ্য নয় তা নিয়ে চিন্তা না করা এবং সবার পরিনতির সাথে নিজেরটাও মেনে নেওয়া।একথা নিজে বিশ্বাস করা এবং অন্যদের অনুপ্রাণিত করা। ৪.মহামারীর এ সময়ে খারাপের মধ্যে ভালো কিছু আছে কিনা ভেবে দেখা।পারিবারিক সম্পর্কে অনেক সময় পাচ্ছেন এমনটা চিন্তা করা।
৫.খারাপ খবর,মৃত্যু সংবাদ এবং লাশের সংখ্যা হিসেব না করা।
মনে রাখতে হবে করোনা নিয়ে আপনাকে পিএইচডি করতে হবে না। শুধুমাত্র বাঁচার কৌশল জানতে হবে এবং মানতে হবে। এছাড়া নিয়মিত শারিরীক ব্যায়াম,রিলাক্সেশান পন্থা (শ্বাসের ব্যায়াম,ধ্যান),গান শোনা,গল্পের বই পড়া,বাগান করা,কবিতা লেখা এবং পড়া,লাফিং এক্সারসাইজ,খাবার রান্না কিংবা পারিবারিক কাজে সাহায্য করা আপনার মানসিক চাপ কমাবে অনেকাংশে।সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হলে ব্যস্ততা প্রয়োজন।প্রয়োজন মনকে অন্য কোন ভালো এবং দরকারি দিকে সরিয়ে নেওয়া। এ্যালকোহল
,নিকোটিন,ক্যাফেইন (চা,কফি),বাসার জিনিস পত্র ভাংচুর,ঝগড়াঝাটি কিংবা দোষারোপ কখনোই মানসিক চাপ মোকাবেলার কৌশল নয়। সুন্দর সুস্থ,প্রানবন্ত রঙিন পৃথিবীকে নিয়ে স্বপ্ন বুনি। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যে বিজ্ঞানের কথা শুনি।
লিখেছেন: ডা.মোহাম্মদ হাসান, রেসিডিন্টে সাইকয়াট্রি।