বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, আপনার ব্যক্তিত্ব নিজের সম্বন্ধে আপনার মানসিক স্থিতি কি তার সাথে সম্পর্ক যুক্ত। আপনি নিজেকে কেমন ভাবেন, সেটি আপনার ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করে।
অনেকেই আছে যারা নিজেকে নিয়ে সুখী নয়। তারা নিজেকে অন্যদের থেকে কুৎসিত বা কম সুন্দর ভাবে। সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে যে, প্রায় ৭২ শতাংশ নারী এবং প্রায় ৬১ শতাংশ পুরুষ নিজের শারীরিক অবয়ব নিয়ে খুশি নয়। এই শারীরিক অসন্তোষ নিজেই একটা মানসিক সমস্যার নাম। এছাড়াও এই সমস্যা ধীরে ধীরে আত্ম বিশ্বাস কমিয়ে দেয়, বিষণ্ণতার সৃষ্টি করে, এবং শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা যেমন রোগ ব্যাধিও তৈরি করে। যখন কেউ নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে অসন্তুষ্ট থাকে, তারা ধীরে ধীরে নিজের ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, এবং নিজের যত্ন নেওয়া, খেয়াল রাখা কমিয়ে দেয়।
নিজেকে নিয়ে এই অসন্তোষ মানুষের মাঝে বেশ প্রচলিত এবং ব্যক্তির উপর এর বেশ কিছু খারাপ বা নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিজের বাহ্যিক রূপ নিয়ে সন্তুষ্ট নয় তারা অধিক মাত্রায় স্নায়বিক পীড়াগ্রস্ত হয়। নারী এবং পুরুষ উভয়ের ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। সাধারণত যারা স্নায়বিক পীড়াগ্রস্ত হন তারা নিজেকে নিয়ে সব সময়ই বেশ উদ্বেগগ্রস্ত থাকেন, সব বিষয়ে খুঁতখুঁতে এবং অন্যদের মতামতের বিষয়ে বেশ সংবেদনশীল হয়ে থাকেন। এছাড়াও তাদের মাঝে প্রায়শই নিজেদেরকে অন্যদের সাথে তুলনা করার প্রবনতা দেখা যায়। এ সকল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তাদেরকে নিজেদের বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে আরও বেশী নিরাপত্তাহীন ভাবতে প্রলুব্ধ করে। এভাবে নিজেদের বাহ্যিক অবস্থাকে অন্যদের বাহ্যিক অবস্থার সাথে তুলনা করলে এবং এর মাধ্যমে সামাজিক একটা পর্যায় সৃষ্টি করার প্রচেষ্টার ফলে তাদের মাঝে বাহ্যিক সৌন্দর্য সম্পর্কে এক নেতিবাচক মানসিকতা গড়ে ওঠে।
যারা মিশুক প্রকৃতির এবং বিবেক সম্পন্ন মানুষ, তারা আত্মবিশ্বাসী এবং ইতিবাচক মানসিকতার অধিকারী হয়। একইভাবে, যারা একটু কম মিশুক বা অন্তর্মুখী এবং কম বিবেকবান, তারা শারীরিক অসন্তোষের বিষয়টিকে এক অন্য পর্যায়ে নিয়ে যায় এবং একে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির মাপ দণ্ড বানিয়ে ফেলে যা অত্যন্ত নেতিবাচক।এসব বিষয় বিবেচনা করলে বলা যায়, মানুষের নিজের সম্পর্কে এই অসন্তোষ এবং তার ব্যক্তিত্ব একে অপরের সাথে বেশ মিলেমিশে আছে। অবশ্য বলা কঠিন কোনটির প্রভাব কোনটি উপর বেশী। তবে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, যেমন, নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে অসন্তোষ তার ব্যক্তিত্বকেই ফুটিয়ে তোলে। এটি তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা এবং চিন্তা ভাবনার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক ফুটিয়ে তোলে।
তবে যা কিছু হয়ে যাক, নিজেকে নিয়ে সব সময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রাখা উচিৎ। আপনি যদি একটু কম মিশুক বা সব কিছু নিয়ে একটু বেশী সংবেদনশীল হয়ে থাকেন, তবুও কখনোই নিজেকে নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগবেননা। নিজেকে অন্যদের সাথে তুলনা করে অযথা কষ্ট পাবেননা। পৃথিবীর প্রতিটা মানুষ একে অপরের থেকে ভিন্ন রকম এবং ভিন্ন ভিন্ন রূপে সবাইই সুন্দর। তাই নিজেকে নিয়ে খুশি থাকুন, আত্মবিশ্বাস বজায় রাখুন। জীবনটা সুন্দর হবে।