করোনার প্রভাবে পরিবর্তনের ধারা আজ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যস্ত সব নগরীতে কর্মস্থলে যাওয়ার ছুটাছুটি নাই বললেই চলে। কর্মস্থলে ছুটতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের ভূমিকাও অনেক দেখা যেত। আজ তা দেখা যায় না বললেই চলে।
কর্মস্থলের সব ধরনের প্রতিষ্ঠান প্রায় বন্ধ। তবে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও থেমে নেই কাজ। বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানই আছে সেসবের কাজ বাসায় সম্পূর্ণ করতে হচ্ছে। পুরুষের চেয়ে এক্ষেত্রে নারীদের অফিসের কাজ বাসায় করতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
একজন নারী কর্মস্থলের পাশাপাশি নিজের সংসারও সামলায়। অফিসের কাজ ও সংসার দুটোই সামলাতে গিয়ে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। মানসিক ও শারীরিকভাবে চাপ বাড়ছে। এরকম একজন নারী, কামরুন্নাহার সাথী বেসরকারি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সহকারী ম্যানাজার হিসেবে কর্মরত তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানিয়েছেন। তার কাজের বর্ননা দিয়ে বলেন, অফিস চলাকালীন একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তার অফিসের কাজ শেষ করে বাসায় চলে আসতেন, কিন্তু এখন নির্দিষ্ট সময়ের বাহিরেও বাসায় অফিসের কাজগুলো সামলাতে হচ্ছে, এখন যেহেতু বাসায় অবস্থান করছে সাংসারিক কাজের চাপও তার উপর চলে আসছে। শ্বশুর – শ্বাশুরির দেখা শোনা, ঘরের অন্যান্য কাজ ও তাকে দেখতে হচ্ছে।
অফিস চলাকালীন বুয়ার সাহায্য নিয়ে করেছেন,কিন্তু এখন করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ভয়ে, সচেতন থাকার জন্য বুয়াকে বাসায় আসতে নিষেধ করেছেন। আর এসব কাজের চাপ তার শারীরিক ও মানসিক চাপকেও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এরকম অবস্থা দীর্ঘদিন চললে হয়তো তার জন্য সামলানো কঠিন হয়ে যাবে। তার কাছে আরও একটা ভাবনার বিষয় হচ্ছে যেহেতু সে বেসরকারি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে কর্মরত, এখন পর্যন্ত তার বেতন বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সব পেলেও, দীর্ঘদিন লকডাউন অবস্থায় চলতে থাকলে এই সুযোগ সুবিধা গুলো থাকবে কিনা।
এরকম আরো একজন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষিকা লিমা আক্তার, তার শারীরিক ও মানসিক চাপ ও যে দ্বিগুণ হয়েছে সে সম্পর্কে জানিয়েছেন। স্কুলের কাজগুলো সে অনলাইনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ করছেন। কখনও ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষাদান ব্যবস্থা, পরীক্ষা নেয়া, ফলাফল তৈরি করা, ইত্যাদি সব কিছুই তাকে বাসাশ অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যম করতে হচ্ছে। যেহেতু এই প্রক্রিয়ায় নতুন কাজ করতে হচ্ছে, কাজ করতে তাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এছাড়াও বাসায় যেহেতু কাজ করছে, সংসার সামলানোর ব্যাপার তো আছেই।তাছাড়া প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া তার ছোট একজন ছেলে ও আছে। বাসায় অবস্থান করার কারনে আলাদা করে ছেলেকে ও সময় দিতে হচ্ছে, হয়তো মা বাসায় থাকার কারনে ছেলেও বেশি করে মায়ের সঙ্গ চাচ্ছে। এক্ষেত্রে হয়তো দুজনের জন্যই ভালো কিছু মুহূর্ত কাটানোর সময় পাচ্ছে। কিন্তু বাসায় কর্মস্থলে কাজের পাশাপাশি, সংসারের কাজের চাপ হয়তো কোন একসময় শারীরিক ধকল কাটিয়ে উঠলেও মানসিকভাবে কতটা কাটিয়ে উঠবে তা ভাবার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
করোনা ভাইরাসের কারণে এসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া নারীদের সামনের দিনগুলো হয়তো আরও কঠিনতর হয়ে উঠবে।আর এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষাই শুধু করতে হচ্ছে।
লিখেছেন: সৈয়দা মুমতাহিনাহ্ সোনিয়া