করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক জেলা ইতোমধ্যে লকডাউন করা হয়েছে। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা বাগেরহাটেও যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সীমিত করা হয়েছে মানুষের চলা ফেরাও। এই পরিস্থিতিতে সবকিছুতে এক ধরনের স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
সমস্যায় পড়েনি এমন কোনো পেশা বা শ্রেণির মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন চাল-চুলোহীন ছিন্নমূল ও মানসিক ভারসাম্যহীন পথে থাকা মানুষগুলো। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সাধারণ বিত্তশালীরা কর্মহীন ও অসহায়দের খাদ্যসামগ্রী দিলেও, অভুক্ত থেকে যাচ্ছেন মানসিক ভারসাম্যহীন ও ছিন্নমূল মানুষেরা। কারণ স্বাভাবিক অবস্থায়ই তারা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটান। নোংরা কাপড়, লম্বা জট ওয়ালা চুল, ময়লাযুক্ত শরীরের কারণে তাদের ধারে কাছে কেউ আসতে চায় না। অন্য সময়ে খাবারের হোটেলের সামনে অনটাইম প্লেটে কাস্টমারের মাখা খাবারে পেটের জ্বালা মেটায় এরা। তবে করোনা পরিস্থিতে না খেয়ে মরার উপক্রম হয়েছে এই মানুষগুলোর।
এই করুণ পরিস্থিতে নীরবে, নিভৃতে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষগুলোকে রান্না করা খাবার খাওয়াচ্ছেন বাগেরহাট এর সামাজিক সংগঠন ‘ইচ্ছা’। একবার যাকে খাবার দিয়ে আসছেন ‘ইচ্ছা’র কর্মীরা তার কাছে জানতে চান পরবর্তীতে কি খেতে চান তিনি। পরবর্তী সময়ে ওই মানুষটির চাহিদা অনুযায়ী খাবার রান্না করে আবার হাজির হন স্বেচ্ছাসেবকরা। মানসিক ভারসাম্যহীনদের পাশাপাশি বাগেরহাট শহরের ২০টি স্থানে বেওয়ারিশ কুকুর এবং পাখিদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছে এই সংগঠনটি।
জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ হওয়ার পথে। ২৩ মার্চ থেকে ‘ইচ্ছা’র কর্মীরা বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। শহরের ১৫ থেকে ২০ জন মানসিক ভারসাম্য মানুষকে তারা প্রতিদিন দুই বেলা রান্না করা খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। শহরে ঘুরে বেড়ানো বেওয়ারিশ কুকুরদেরও নিয়মিত খাবার দিচ্ছেন তারা। পাখিদের জন্য দেওয়া হচ্ছে ধান, গম ও মুড়িরমত শুকনো খাবার। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে সংগঠনটি কয়েকজনকে নগদ অর্থ এবং ৬৬৮ মধ্যবিত্ত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। নিজস্ব প্রস্তুতকৃত ৯০০ লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। খেটে খাওয়া মানুষকে মাস্কও দিয়েছে সংগঠনটি। ‘ইচ্ছা’র এসব কার্যক্রম চলে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়ন ও শুভাকাঙ্ক্ষিদের সহায়তায়। সমাজের বিত্তবানরা তাদের কাজের সঙ্গে এগিয়ে এলে আরও বেশি মানুষের উপকার করা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
‘ইচ্ছা‘র সাধারণ সম্পাদক শারমিন মেহফুজ সাথি বলেন, যেসব ভাসমান এবং ভারসাম্যহীন মানুষ এখন বাগেরহাটে অবস্থান করছেন তাদের শুধু খাদ্য নয় বাসস্থানেরও প্রয়োজন। অন্যথায় এসব ভ্রাম্যমাণ মানুষেরাই হয়ে উঠতে পারেন করোনা ভাইরাস ছড়ানোর মারাত্মক হাতিয়ার। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে এ সব মানুষদের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান তারা।
প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন: এস.এস শোহান।