শুরুতেই কিছু তথ্য জানিয়ে দেওয়া যাক। ১০১৯ সালে প্রকাশিত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর সমীক্ষা বলছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১৭ শতাংশ কোনও না কোনও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। বুঝতেই পারছেন, সংখ্যাটা ক্রমবর্ধমান, রোজই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ইদানীং অনেকে তাঁদের মনোরোগ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলছেন, ভাঙছে নানা ভুল ধ্যানধারণা। অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ দরকারে কাউন্সেলরের দ্বারস্থ হচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, বেশিরভাগ চিকিৎসকের ধারণা, আমরা যে গতিতে ছুটছি আজকাল, জীবনে যা যা অর্জন করতে চাইছি, তার মূলেই লুকিয়ে রয়েছে মনোরোগের বীজ।
এবার প্রশ্ন, আপনার খুব কাছের কারও মধ্যে যদি ডিপ্রেশন বা মন খারাপের লক্ষণ দেখতে পান, তা হলে কী করবেন? দেখুন, স্ট্রেস, কাজের চাপ, পারিবারিক সমস্যা কম-বেশি সকলেরই থাকে। কোনও কারণে প্রত্যাশা পূরণ না হলে ভেঙে পড়া বা কিছুদিনের জন্য মন খারাপের মতো সমস্যাও হয়। কিন্তু সেটা আবার কেটেও যায়। ডিপ্রেশন থাবা গেড়ে বসলে কিন্তু মন খারাপের মেঘটা ক্রমশ চেপে বসে। সেই সঙ্গে হারাতে বসে যুক্তিবোধ, রোগী ক্রমশ নিজেকে একটা গণ্ডির মধ্যে আটকে ফেলেন। সেই সঙ্গে কমতে আরম্ভ করে শারীরিক শ্রমের পরিমাণও। ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষার ফল খারাপ হতে আরম্ভ করে, অযথা ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে যুক্ত হয় তারা, নেশার খপ্পরেও পড়ে কেউ কেউ। বেড়ে যায় রাগ, মাথাব্যথা, গা-হাত পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা। ইনসমনিয়া, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও থাকে কারও কারও ক্ষেত্রে।
এই পরিস্থিতিতে নিকটজন ও পরিবারের সকলকে রোগীর পাশে দাঁড়াতেই হবে। প্রথমেই ভালো কোনও কাউন্সেলরের খোঁজ করুন, দরকারে বার বার কাউন্সেলর বদলাতে হতে পারে, তাতে নিরাশ হয়ে পড়ার কিছু নেই। ডিপ্রেশনের মাত্রা বাড়লে ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধপত্রও খেতে হবে হয়তো। কোনও সময়েই রোগীকে একা ছাড়বেন না, তাঁর পাশে কেউ না কেউ থাকুন, আশ্বাস দিন যে সব ঠিক হয়ে যাবে। রোগীকে উত্তেজিত করবেন না, তাঁর কথা শুনুন মন দিয়ে। কাউন্সেলিংয়ে যেন কোনও ফাঁকফোকর রয়ে না যায়, তা নিশ্চিত করুন। রুটিন মেনে এই সহায়তাটুকু জোগালেই দেখবেন, পরিস্থিতি বদলাচ্ছে ধীরে ধীরে। তবে কোনও কিছুই তাড়াতাড়ি হবে না, ধৈর্য ধরতে হবে।