রাহেলা খাতুন (ছদ্মনাম) গত ১০ বছর ধরে রুম থেকে বের হন না। কেননা যখনি কোনো পুরুষ তার সামনে আসে তখনি তার মাথায় যৌন চিন্তা আসতে থাকে বারবার। একা যখন থাকেন তখনো আসে, কিন্তু কারো সামনে গেলে তার চিন্তাগুলো বহুগুণে বেড়ে যায় এবং বারবার চিন্তা আসতেই থাকে আসতেই থাকে ; চিন্তাজট থেকে যেনো মুক্তি নেই। তিনি বারবার তওবা করেন, সারাদিন নামায পড়েন যেনো চিন্তা আর না আসে, কিন্তু চিন্তা আর বন্ধ হয়না। তার এখন মনে হয় আত্মহত্যাই তার একমাত্র মুক্তির পথ।
উপরে যে ঘটনার অবতারণা করা হলো তা কোনো কল্পকাহিনী নয়, তা এক রোগীর আত্মকাহিনী। তার যে চিন্তাগূলো আসতো তার কারণ তার মনোরাগ যার নাম Obsessive Compulsive Disorder (OCD) বা চিন্তাবাতিক ও বাধ্যতাধর্মী আচরণ। এটি একটি উদ্বেগ জনিত রোগ। সারাবিশ্বে প্রতি ১০০ জনের ১ জনের এ রোগটি হয়। পুরুষ ও নারী উভয়েই এ রোগে সমান হারে ভোগে। সাধারণত ১৮-২৯ বছরের মানুষেরা রোগটিতে ভুগে থাকেন। তবে শিশু ও বয়স্কদের মাঝেও এ রোগটি বিদ্যমান।
অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজওর্ডার কি?
এটা এমন ধরণের রোগ, যাতে অবসেশন অথবা কমপালশন বা উভয়টিই থাকতে পারে।
অবসেশন কি?-এটা এক ধরনের মর্মপীড়াদায়ক চিন্তা, দৃশ্য কল্পনা যা মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মাথায় আসে।
কমপালশন কি?-অবসেশন দ্বারা তাড়িত/বাধ্য হয়ে এবং অস্বস্তি ও উদ্বেগ কমানোর জন্য যে কাজ করা হয় তাকে কমপালশন বলে,যেমন-বারবার হাত ধোয়া, গণনা করা,বারবার যাছাই করা,গুছিয়ে রাখা এবং একি কথা বারবার বলা,ইত্যাদি।
লক্ষণসমূহঃ
১) শরীর , কাপড়চোপড় বা আসবাবপত্রে জীবাণু বা ময়লা লেগে আছে এমন চিন্তা বারবার আসা ও অতিরিক্ত ধোয়া মোছা করা
২) অনাকাঙ্খিত, নিষিদ্ধ বা বিকৃত যৌন চিন্তা, দৃশ্য কল্পনা বা আবেগ, সৃষ্টিকর্তা বা ধর্মগ্রন্থ নিয়ে অবিশ্বাস, দ্বিধা ও নেতিবাচক চিন্ত এবং বারবার ক্ষমা চাওয়া, তওবা করা, এমনকি ভয়ে ধর্মীয় কর্মকান্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
৩) আসবাব পত্র, বইখাতা, কাপোড়চোপড় অথবা যে কোন জিনিস নির্দিষ্ট ছকে গুছিয়ে রাখাএ প্রবণতা।
৪) কোন কাজ বুঝি ঠিক মত হয়নি মনে করে বার বার চেক করা, অপ্রয়োজনীয় জিনিস জমা করা, নির্দিষ্ট ছকে বারবার গণনা করা, ইত্যাদি
সাধারণত কারো পরিবারে এ রোগটি থাকলে তার পরবর্তী প্রজন্মে কারো এ রোগটি হওয়ার হার ৪-৫ গুণ বেড়ে যায়। এছাড়াও মস্তিস্কে বিভিন্ন নিউরোট্রান্সমিটার যেমন ডোপামিন, সেরোটোনিন ইতাদির হ্রাস-বৃদ্ধি, মস্তিষ্কে কিছু গঠন গত পরিবর্তন সহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে রোগটি হওয়ার।
এর চিকিৎসা কি এবং কোথায় হয়?
উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস যেমন চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তেমনি নিয়ম মাফিক জীবন যাপন, বদভ্যাস যেমন ধূমপান-মাদকাসক্তি ত্যাগ, নিয়মিত ডাক্তারের দেয়া ঔষধ সেবন এবং সাইকোথেরাপির মাধ্যমে এ রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সবগুলো সরকারী মেডিকেল কলেজে মানসিক রোগ বিভাগে এ রোগের চিকিৎসা হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ,জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে আলাদা করে ওসিডি ক্লিনিক আছে যাখানে শুধু ওসিডি রোগীদের সময় দেয়া হয় তাই আর নয় কুসস্কার, চিন্তা বাতিক ঝেড়ে ফেলতে জলদি চিকিৎসা নিন, অন্যকেও উৎসাহিত করুন।