পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের কাছে চরম কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের নাম সুখ। সুখ চান না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। একটুখানি সুখের জন্য প্রতিদিন আমাদের সে কী প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা।
সুখ কী? সুখী মানুষেরা কেমন হয়? এ নিয়ে প্রাচীনকাল থেকেই দার্শনিক, মনোবিজ্ঞানীদের মধ্যে রয়েছে বিতর্ক। একারণেই সুখ কী? কীভাবে তা লাভ করা যায়, সুখী মানুষেরা কেমন হয়? তাদের বৈশিষ্ট্য কী?- এসব নিয়ে মানুষের রয়েছে জানার আগ্রহ। এই আগ্রহ থেকে অসংখ্য গবেষণা হয়েছে।
ডাইনার এবং সেলিগম্যানের (২০০২) গবেষণায় সুখী মানুষের বৈশিষ্ট্য হলো-
• সুখী মানুষ নিজের যোগ্যতার প্রতি বিশ্বাস রাখে। সে নিজেকে পছন্দ করে এবং অন্যদের তুলনায় নিজেকে বেশি বুদ্ধিমান হিসেবে দেখে। সুখী মানুষ অন্য মানুষের চেয়ে নিজেকে বেশি সক্ষম ভাবে। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে নিজেকে উপস্থাপন করে। নিজেকে ভালো, যোগ্য এবং আকাঙ্ক্ষিত মানুষ হিসেবে দেখে।
• অন্য মানুষের তুলনায় একজন সুখী মানুষ নিজের ওপর বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন। তাঁরা জীবনের বিরূপ পরিস্থিতিতেও নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম, সুখী মানুষেরা নিজেকে অন্যের নগণ্য সহকারী মনে করে না।
• সুখী মানুষ আশাবাদী হয়। হাজারো প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝেও ভালো কিছু ঘটবে বলে আশা করে এবং সেই লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে যান একজন সুখী মানুষ। তারা ধৈর্য সহকারে যে কোনো কিছুর সঙ্গে লেগে থাকেন আর তাতেই সাফল্য ধরা দেয়। সফল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মনোবল আরো বৃদ্ধি পায় ।
• অনেকের আবার জানার ইচ্ছা থাকতে পারে যে, সুখ পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মাঝে কোনো পার্থক্য হয় কী না। গবেষণায় দেখা যায়, এক্ষেত্রে তেমন কোনো পার্থক্য হয় না। তবে একদমই যে হয় না সেটা বলা যাবে না। পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়ষ্ক নারী-পুরুষের সুখের অনুভূতির কোনো পার্থক্য হয় না বললেই চলে। তবে, মা-বাবার সঙ্গে সময় কাটানোর ক্ষেত্রে দেখা গেছে মা-বাবার সঙ্গে সময় কাটাতে পুরুষরা বেশি সুখ অনুভব করে। আর নারীরা তাদের মা-বাবার সঙ্গে কাটানো সময়কে তাদের দৈনন্দিন কাজের মতোই দেখেন। মা-বাবার সঙ্গে সময় দেওয়া মানেই হলো মাকে রান্না-বান্নায় সাহায্য করা, বাড়ির কাজে সাহায্য করা, মা-বাবার সঙ্গে কাটানো সময়কে তারা একরকম কাজ হিসেবেই দেখে। কিন্তু পুরুষদের কাছে সেটা যেন কোনো বিনোদনমূলক কাজ। বিভিন্ন বিনোদনমূলক কাজ করে পুরুষরা যেমন সুখ পায় তেমনি বাবা-মায়ের সঙ্গে সময় কাটালে সেটা তারা উপভোগ করে।
• সুখী মানুষদের সাপোর্টিভ নেটওয়ার্ক বড় থাকে। তাদের বিপদে-আপদে পাশে দাঁড়াবার মতো মানুষের সংখ্যা বেশি। তাঁরা নিজেরাও অন্যের বিপদে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। তাঁরা আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে, বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে।
সম্ভবত, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অধিকাংশ মানুষ বেশির ভাগ সময় কমপক্ষে মাঝারি ধরনের সুখী।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী ব্যক্তিরা সবাই সুখের অনুভূতির কথা ব্যক্ত করেছে। আবার, এমন কিছু বিষয় আছে যেটাকে ব্যক্তি মনে করে তার জীবনকে সুখী করে তুলবে (যেমন- লটারি জেতা), সম্ভবত ততটা বেশি সুখী করতে পারে না যতটা সে আগে ছিল। তবে ক্ষণস্থায়ী একটা সুখের অনুভূতি তৈরি করে। তাহলে প্রশ্ন আসে টাকা কী মানুষকে সুখী করতে পারে?
চলবে…
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।