ডাউন সিনড্রোম একটি ক্রোমোজোমাল ডিজঅর্ডার। মৃদু বা মাঝারি মাত্রার বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর অন্যতম প্রচলিত কারণ এটি। যেকোনো দেশে, যেকোনো অর্থনৈতিক বা সামাজিক প্রেক্ষাপটে এ রোগ হতে পারে অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট ভৌগলিক বা পরিবেশগত কারণ নেই এই জেনেটিক ডিজঅর্ডারের। এই সিনড্রোমে আক্রান্ত বাচ্চাদের মাঝে যেসব উপসর্গ দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-উচ্চতায় খাটো, নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক গঠন (মাথা ছোট, পায়ের প্রথম ও দ্বিতীয় আঙুলের মাঝে ফাঁকা জায়গা, জন্মগত হার্টের সমস্যা, শ্রবণশক্তি হ্রাস, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, বিষণ্ণতা ইত্যাদি)।
ডাউনসিনড্রোম নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। এর সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে বের করার জন্য এবং যেসব বাচ্চাদের ডাউন সিনড্রোম আছে তাদেরকে একটি উন্নত চিকিৎসা সেবার আওতায় নিয়ে এসে তাদের জীবনযাপন সহজ করা এবং তাদের পরিবারকে স্বস্তি প্রদান করার উদ্দেশ্যে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কাঠামোবদ্ধ চিকিৎসাসেবা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কথা বলা এবং ভাষাগত দক্ষতা একটি শিশুর শিক্ষার মূল ভিত্তি। ডাউন সিনড্রোমের বাচ্চাদের বধিরতা বা শোনার ক্ষেত্রে সমস্যা থাকে, তাই সে সঠিকভাবে যোগাযোগ করতে পারে না।
সুতরাং দ্রুত এবং সময়মতো যদি চিকিৎসা নেয়া হয় তবে সর্বোচ্চ সফলতা আশা করা যায়।
ইউনিভার্সেল হিয়ারিং স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ডাউন সিনড্রোমেমের বাচ্চাদের দ্রুত স্ক্রিনিং করা যায়। এই স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে বাচ্চার বয়স ৩ মাসের মধ্যে শ্রবণশক্তি শনাক্ত করা সম্ভব এবং ৬ মাসের মধ্যে চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব।
যেকোনো বাচ্চার কানে শুনতে সমস্যা থাকতে পারে কিন্তু যাদের ডাউন সিনড্রোম আছে তাদের মধ্যে এই সমস্যা প্রকট। সুতরাং সঠিকভাবে সমস্যা নির্ণয় এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে শ্রবণক্ষমতাকে স্বাভাবিকের কাছাকাছি আনা যায়। যা বাচ্চার পরবর্তী শারীরিক ও মানসিক উন্নয়নে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে।
বাচ্চাদের জন্মগত হার্টের সমস্যাও ডাউন সিনড্রোমের একটি প্রধান সমস্যা। সুনির্দিষ্ট এবং ত্বরিত হার্টের সমস্যা নির্ণয় অর্থাৎ সদ্যোজাত শিশুদের এই স্ক্রিনিং করা উচিত। কেননা রোগ শনাক্ত করতে দেরি হলে তা খুব একটা সুখকর ফলাফল বয়ে আনে না বরং খারাপ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। পালমোনারি আর্টারিয়াল হাইপার টেনশান, অন্ত্র ও পাকস্থলীর সমস্যা, স্থূলতা এই বিষয়গুলো এখন দ্রুত নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।
ডাউন সিনড্রোমের সকল বাচ্চাদের শারীরিক সমস্যাগুলো যদি দ্রুত সময়ে (বাচ্চার অল্প বয়সে ) শনাক্ত করা যায় এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা কিংবা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তাহলে আশা করা যায়, তাদের অক্ষমতাগুলো কমিয়ে এনে তাদের সম্ভাবনার বিকাশ ঘটানো সম্ভব। এসব ব্যবস্থাসমূহ শুধুমাত্র চিকিৎসা ব্যয় কমাবে তাই নয়, সেই শিশু জীবনের গুণগত মানও উন্নত করবে।
ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত কিশোর-কিশোরীদের একটি বড়ো অংশ মানসিক সমস্যায় ভোগে যেমন : সিজোফ্রেনিয়া, বিষণ্ণতা এবং স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া। এছাড়াও আচরণগত সমস্যা ও আবেগজনিত অস্থিরতায় প্রায় সবাই ভুক্তভোগী। এসব ক্ষেত্রে কিছু নিদির্ষ্ট ঔষধের পাশাপাশি কাঠামোবদ্ধ সাইকোসোশ্যাল চিকিৎসার আওতায় নিয়ে এলে ঐসব শিশু এবং পরিবারের দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মের যে একটা বড়োসড়ো ছেদ পড়ে সেটা থেকে ফলপ্রসু উপায়ে বের হয়ে আসা সম্ভব এটাও গবেষণায় প্রমাণিত।
ডাউন সিনড্রোমের জন্য একক কোনো চিকিৎসা নেই এটা সত্য। চিকিৎসা কী হবে তা প্রত্যেক আলাদা শিশুর শারীরিক ও মানসিক শক্তি ও সীমাবদ্ধতার ওপর ভিত্তি করেই নির্ণয় করতে হবে। চিকিৎসক, প্রশিক্ষক, স্পিচ থেরাপিস্ট, ফিজিও থেরাপিস্ট, বিশেষায়িত স্কুল, সমাজকর্মীর সমন্বয়ে টিমওয়ার্কের মাধ্যমেই এর চিকিৎসা সম্ভব।
Reference : Marilyn J. Bull, Improvement of Outcomes for Children with Down Syndrome (https://doi.org/10.1016/j.jpeds.2017.11.014)
** লেখাটি মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিন এর ২য় বর্ষ, ৩য় সংখ্যা থেকে নেওয়া।