যৌন অক্ষমতার বিষয়টি জীবনেরই অঙ্গ এবং সমাধান যোগ্য

0
96
যদি কারও কাম-সুখ ভোগ করার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যায় বা কামক্রিয়া থেকে নিজেকে বিরত করার চেষ্টা দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে সেই ব্যক্তির শারীরিক অক্ষমতাজনিত সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই ধরনের সমস্যা যৌনক্রিয়ায় সক্ষম একজন মানুষের বা দম্পতির জীবনের যে কোনও সময় ঘটতে পারে এবং এর ফলে কামজ সুখ থেকে তারা বঞ্চিত হতে পারে। এই কামচক্রের মধ্যে উত্তেজনা থেকে শুরু করে চূড়ান্ত দেহমিলনের সব কটি পর্যায় অন্তর্ভুক্ত।
কামের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা যে কোনও বয়সের মহিলা বা পুরুষের ক্ষেত্রেই দেখা যেতে পারে। কিন্তু বয়স যত বাড়ে এর সম্ভাবনাও তত বেশি হতে থাকে। চিকিৎসার দ্বারা এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু মানুষ এহেন সমস্যা নিয়ে কথা বলতেই দ্বিধা বোধ করে বা নিজের দুর্বলতা পাছে প্রকাশ পেয়ে যায় সেই ভয়ে অনেকে বিষয়টি সামনে আনতে চায় না।
যদি কারও যৌনসুখ উপভোগ করার ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা দেখা দেয়, তাহলে তাঁর সঙ্গীর সঙ্গে এই বিষয়ে অবশ্যই কথা বলা উচিত এবং বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন। যথাযথ চিকিৎসার মধ্য দিয়ে সুস্থ যৌন জীবন এবং কাম সুখ উপভোগ করা যায়।

যৌন অক্ষমতার উপসর্গগুলি মহিলা এবং পুরুষের ক্ষেত্রে আলাদা হয়। কয়েকটি সাধারণ উপসর্গ হল–
পুরুষের ক্ষেত্রে:

  • উত্থানজনিত অক্ষমতা: মিলনের সময় পুরুষাঙ্গের উত্থানে সমস্যা হয়।
  • বীর্যত্যাগজনিত সমস্যা: বীর্যত্যাগের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারানোর সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে যৌন মিলনের অব্যবহিত আগে অথবা পরে, কিংবা অনেক পরে বীর্যের নিঃসরণ হয়, যা অবশ্যই একধরনের ত্রুটি।
  • যৌনতাড়না কমে যাওয়া– টেস্টোস্টেরন হরমোনের কম ক্ষরণের জন্য কামশক্তি হারিয়ে যায়।

মহিলাদের ক্ষেত্রে:

  • যৌনকামনা নষ্ট হয়ে যায়– ইস্ট্রোজেন এবং টেস্টোস্টেরনের কম ক্ষরণের ফলে কামের আকাঙ্ক্ষা কমে যায়।
  • দেহমিলনের চরম পর্যায়ে উত্তেজনা হারানো– চরম যৌন আকাঙ্ক্ষা সত্ত্বেও যথাযথ উত্তেজনার অভাব।
  • যোনির শুষ্কতা এবং ব্যথা– যৌন মিলনের আগে এবং সময়ে যোনি শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং তীব্র ব্যথার অনুভূতি জাগে।
    যৌনতাড়নায় অস্বাভাবিকতার পিছনে থাকে শারীরিক, মানসিক এবং পরিবেশগত কারণ। এগুলি হল–
    শারীরিক কারণঃ পুরুষদের ক্ষেত্রে যৌন ক্রিয়ায় অক্ষমতার পিছনে স্নায়ুর দুর্বলতা, রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা, ডায়াবেটিস, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, হার্ট বা কিডনির সমস্যা প্রধান। অতিরিক্ত মদ্যপান এবং কিছু বিশেষ ওষুধের প্রভাবে যৌনক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে।
    মহিলাদের ক্ষেত্রে মল এবং মূত্র ত্যাগের সমস্যা, স্নায়ুগত অব্যবস্থা, বাতের সমস্যা এবং কিছু ওষুধের ব্যবহার কামের উন্মাদনা কমিয়ে দেয়। ইস্ট্রোজেন কম ক্ষরণের ফলে যোনির পিচ্ছিলতা হ্রাস পায়। ফলে যৌন মিলনের সময় ব্যথা অনুভূত হয়।
    মানসিক এবং পরিবেশগত কারণঃ কর্মক্ষেত্রে অত্যধিক চাপ কামক্রিয়ায় আসক্তি কমে যাওয়ার একটি সাধারণ কারণ। অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে মানসিক উদ্বেগ, অবসাদ, সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কে সমস্যা এবং যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনও আঘাত।

    অধিকাংশ ক্ষেত্রে যৌন ক্রিয়ায় অক্ষমতা কাটাতে চিকিৎসা বিদ্যার সাহায্য নেওয়া যায়। ওষুধের দ্বারা এই সমস্যার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। পুরুষের ক্ষেত্রে উত্থান ক্ষমতাজনিত সমস্যা কাটানোর জন্য উপযুক্ত ওষুধ প্রয়োগ করা যায়। অনেক সময় ভ্যাকিউম ডিভাইসেসের সাহায্য নিয়ে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। মহিলাদের ক্ষেত্রে ডাইলেটরস ব্যবহারের মধ্য দিয়ে অসুবিধা দূর করা যায়।
    যদি ডাক্তার যৌন সমস্যা রোধ করার ক্ষেত্রে শারীরিক ত্রুটি চিহ্নিত করতে না পারেন, তাহলে মানসিক চিকিৎসার দিকে যেতে পারেন। এই চিকিৎসা মানসিক চাপ এবং উদ্বিগ্নতা কাটাতে সহায়ক। দম্পতিদের ক্ষেত্রে এই ধরনের চিকিৎসা নৈকট্য এবং যোগাযোগ বাড়ায়, সেই সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি রুখতে সাহায্য করে।

    যৌন সঙ্গীর মধ্যে যদি কাম ক্রিয়ায় অস্বাভাবিকতা লক্ষ করা যায়, তাহলে অপরকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিচার করতে হবে। এই ক্ষেত্রে সঙ্গীর মানসিক যন্ত্রণা রোধ করার জন্য অপর সঙ্গীর ধৈর্য এবং সমর্থন দরকার। বিষয়টি যেহেতু সংবেদনশীল এবং পারস্পরিক, সেহেতু উভয়ের সহযোগিতা ভীষণভাবে প্রয়োজন। দরকার হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শের জন্য সঙ্গীকে রাজি করাতে হবে। সম্পর্কের টানাপোড়েন যদি সমস্যাটির কারণ হয়, তাহলে অচিরেই তা সমাধান করা দরকার। এক্ষেত্র যদি উভয়ের চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে, তাহলে অন্য জনকে অনিচ্ছুক হলে চলবে না। ডাক্তারের পরিকল্পনা মতো চিকিৎসায় সাহায্য করতে হবে।

    বিষয়টি অধিকাংশের কাছেই বিরক্তিকর। কিন্তু যদি কেউ এই সমস্যাটিকে সহজে গ্রহণ করে এবং এর থেকে রেহাই পাওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে এহেন অসুখ সারানোর অবশ্যই সুযোগ রয়েছে। এই সব ক্ষেত্রে যত দেরি হয়, তত মানসিক চাপ বেড়ে যায়। জীবনযাপন পদ্ধতির পরিবর্তন যৌন জীবন সুস্হ করতে সাহায্য করে। পারস্পরিক বিশ্বাস এবং সততা মানসিক উদ্বিগ্নতা কাটাতে সহায়ক হয়। কাজের মধ্যে থাকা এবং নিয়মিত শরীরচর্চা রক্ত সঞ্চালন এবং শক্তি বাড়াতে খুবই উপকারী। মদ্যপান এবং ধূমপান বর্জন করা একান্ত দরকার। অবসর যাপন দৈনন্দিন জীবনের অবসাদ, চাপ কমাতে সাহায্য করে। এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ এবং তাঁর পরিকল্পিত চিকিৎসায় সহযোগিতা করা।
Previous article‘বিনামূল্যে’ পাওয়া যাচ্ছে ‘মনের খবর’ সকল সংখ্যার পিডিএফ কপি
Next articleমানসিক চাপ বাড়ছে চাকুরিজীবি এশিয়দের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here