সমস্যা: আমার বয়স ২৬। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। সমাজবিজ্ঞান নিয়ে মাষ্টার্স শেষ করেছি। সমস্যার কোনো সমাধান না পেয়ে লজ্জার মাথা খেয়ে আপনাদের দ্বারস্থ হয়েছি। আশাকরি আপনারা আমাকে কিছু কার্যকর দিক নির্দেশনা দিবেন। ৯ বছরের সম্পর্ক মেয়েটার সাথে, এরই মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক হয়ে গেছে। মেয়েটা আমার থেকে ৩ বছরের বড় হবে। মেয়ের মা একজন খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী ঘরে জন্ম। একজন খ্রিষ্টান ধর্মের লোকের সাথে এর আগে বিয়েও হয়েছিল, সেখানে ডির্ভোস হয়ে যায়। ওই সংসার থেকে একটা ছেলে এবং মেয়েকে নিয়ে চলে আসেন নিজের বাবার বাড়ি। বাবার সম্পদের ভাগেরটা পেয়ে নিজে বাড়ি করেন এবং একটা সরকারি চাকুরি করে দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে তার মেয়েটার একটা সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে বিয়ে হয়। নিজের সংসার বাঁচাতে মেয়েটার মা একজন মুসলিম বিবাহিত ছেলেকে বিয়ে করে নিজে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
এদিকে তার কাছে থাকা ছেলেটাকে তিনি খ্রিষ্টান ধর্মের অনুসারি করেই রাখেন এবং একটা খ্রিষ্টান মেয়ের সাথে তাকে বিয়ে দেন। যাই হোক তার নতুন সংসারে একটা মেয়ের জন্ম হয়, এটিই সেই মেয়ে যার সাথে আমার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। এর মধ্যে মেয়েটার বাবা পারিবারিক কলহের জন্য এই সংসার ছেড়ে তার আগের সংসারে ফিরে যান। এখন আমার সাথে তারা তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে কিন্তু আমার পরিবার বা আত্মীয়স্বজন কেউ এই সম্পর্ক মেনে নিতে চাচ্ছেন না। মেয়েটা আমার পরিবারে এসে নামায, রোজা এবং আমাদের অন্যান্য যা কিছু ধর্মীয় বিধান আছে তা সে পালন করতে ইচ্ছুক।
উল্লেখ্য যে ওদের আত্মীয়স্বজনের মধ্যে অনেকেই ইসলাম ধর্মের অনুসারি আবার অনেকেই খ্রিষ্টান। আমি মেয়েটার পরিবারের সাথে কথা বলে, কথা দিয়েছি আমি এর একটা ব্যবস্থা করছি, কিন্তু কোনো কিছুই করতে পারছিনা, কেননা এখনো আমি তেমন উপার্জন করতে সক্ষম হইনি। আমি আমার বাবার একমাত্র সন্তান, বাবা মা কষ্ট পাবে এই ধরনের কোনো কাজও আমি করতে পারছিনা, আবার তাদের রাজিও করাতে পারছি না। ওইদিকে আমি তাদের কথা দিয়েছি আর এই দিকে আমি নিরুপায়। আমার পরিবার থেকে আমাকে নানান ভাবে বোঝানো হচ্ছে এবং আমার ব্রেইনওয়াস করার চেষ্টা চলছে। এইসব ভেবে ভেবে আমি এখন পুরো একটা মানসিক রোগী। সকালে একটা ভাবি তো বিকালে আরেকটা আবার রাতে অন্য একটা। এইভাবে কতদিন আর? আমি মেয়েটাকে ছেড়েও দিতে পারছিনা আবার বাবা মাকে রাজিও করাতে পারছিনা। আব্বার ভাবনা তার একটা সম্মান আছে এলাকায়, এখানে বিয়ে হলে তার সম্মানহানি হবে। সমাজের মানুষ নানান ভাবে নানা কথা শুনাবে। তিনি ভাবছেন ভবিষ্যতে আমার ছেলে মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সময় এই সমস্যা উঠে আসবে। মেয়ের মা খ্রিষ্টান এইসব কথা নাকি আসবে।আমার মা একবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়, আবার আব্বার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে আমি কি করব! এই নিয়ে একটা তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে রেগে নিজের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে দু একটা খারাপ কথাও শুনিয়ে দিচ্ছি তাদের যা আমার সাথে কখনোই যায় না। মেয়েটার পরিবার নিয়ে আমার ব্যক্তিগত ভাবে কোনো সমস্যা নাই।আমি যতটা সহজ ভাবে ভাবি আমার পরিবার বিষয়টাকে আরও জটিল করে তোলে। আমি জানতে চাই এই বিষয়ে আপনাদের মত কি এবং আমার বাবা মা আত্মীয়স্বজনদের কথা কতটুকু যুক্তিসংগত ?
পরামর্শ: পরিচয় জানাতে ভীত প্রশ্নকর্তাকে আমার কাছে সমস্যার সমাধান জানতে চাওয়ার জন্য ধন্যবাদ। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়েই বসবাস করে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রত্যেকে কোনো না কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে।বিবাহ এক ধরণের সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধন। তাই সামাজিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রত্যেকেরই চিন্তার স্বকীয়তা থাকবে – এটাই স্বাভাবিক। আপনি যদি ঐ মেয়ের সংগে বিবাহকে সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধন হিসাবে দেখেন তাহলে একভাবে ভাবতে হবে আর যদি ভালোবাসার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন তাহলে আপনাকে অন্যভাবে ভাবতে হবে।
প্রতিবন্ধকতা ছাড়া ভালবাসার বিজয়ের উদাহরণ মনে হয় খুব কমই আছে পৃথিবীতে। ইতিহাসখ্যাত লাইলী-মজনু, ইউসুফ-জুলেখা, শিরি-ফরহাদ, চন্ডীদাস-রজকিনী অথবা অষ্টম এডওয়ার্ডের ভালবাসা সহ আমাদের আশেপাশের নাম স্মরণ করতে না পারা কত ভুরিভুরি উদাহরনই না আমাদের স্মৃতির মানসপটে দোলা দেয়।
সুতরাং আপনি যদি সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে বেশি গুরুত্ব দেন তবে পরিবার ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে আপনাকে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করতে হবে। সেক্ষত্রেে আমার সীমিত ধর্মীয়জ্ঞান থেকে যতটুকু জানি তাতে মনে হয় অন্য ধর্মের কেউ যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং ইসলাম ধর্মের আচার-আচরণ সম্পূর্নভাবে মেনে চলে তবে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আর ভবিষ্যৎ সামাজিক বন্ধনের কথা ভাবছেন? আপনার মতো আপনার বংশধরদের সাথে সম্পর্ক গড়ার মানুষের খুব একটা অভাব হবে বলে আমি মনে করি না।
আর যদি ভালবাসার গুরুত্ব দেন তবে আপনাকে অবশ্যই সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের উর্ধ্বে উঠে- ভালবাসার শক্তিতে বলীয়ন হয়ে – ভবিষ্যতে কি হবে সেটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে- এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে।
কাজেই বুঝতেই পারছেন- সমস্যা আপনার, সিদ্ধান্তও আপনাকেই নিতে হবে। যদি একা সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন তবে মানসিক সমস্যার সমাধানের ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তার জন্য অভিজ্ঞ কোনো মনোরোগ চিকিৎসকের সাহায্য নিতে পারেন।
আপনার সমস্যার দ্রুত সমাধান ও মঙ্গল কামনা করে শেষ করছি।