কোভিড-১৯ এ আমাদের সবার সাথে সাথে শিশু কিশোরদের মাঝেও সৃষ্টি হয়েছে চরম হতাশা, আশঙ্কা এবং মানসিক চাপ। এই হতাশা এবং মানসিক চাপ সহ অন্যান্য সমস্যার সাথে লড়াই করে যেন তারা সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারে সে লক্ষ্যে তাদের মাঝে মানসিক শক্তি বাড়াতে আমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে।
করোনা শুধু বড়দের জীবন যাপনকেই দুর্বিষহ করে তুলেছে তাই নয়, বরং আমাদের শিশু কিশোরদের জীবনেও সৃষ্টি করেছে তীব্র মানসিক পীড়া এবং স্বাভাবিক মানসিক বিকাশকে করেছে বাঁধাগ্রস্ত। তাই এই সময়ে তাদের অতিরিক্ত পরিচর্যার প্রয়োজন রয়েছে যেন তাদের মাঝে আশা এবং স্বপ্ন বেঁচে থাকে এবং তাদের জন্য আমরা একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে পারি।
অনেকের কাছেই এই সময়ে শিশুদেরকে সুস্থ রাখতে শুধু করোনা থেকে সুরক্ষিত রাখাকে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হতে পারে। কিন্তু এটি মোটেও সঠিক নয়। একজন প্রাপ্ত বয়স্ত ব্যক্তি শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকলেই তার মন ভালো থাকে এবং তার দৈনন্দিন সব কাজকর্মও সুচারু রূপে সম্পন্ন হয়। তাই তাদের শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকাটাই সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়। যেটা শিশু কিশোরদের জন্য ঠিক একইভাবে সত্য নয়। শিশু কিশোরেরা আমাদের আগামী দিনের স্বপ্ন এবং আশা। তারাই নির্মাণ করবে আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আর এই সময়টাতে তাদের যেমন শারীরিক বিকাশ হয় তেমনি মানসিক বিকাশ ও হয়। যেটা ধীরে ধীরে তাদের পরিপূর্ণ মানুষ করে তোলে। তাই শুধু করোনা থেকে সুরক্ষিত রাখলে শিশু কিশোরদের শারীরিক ভাবে সুস্থ রাখা গেলেও তাদের মানসিক বিকাশের প্রতি যদি লক্ষ্য রাখা না হয় তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ সংকটের মধ্যে পড়বে। তাই তাদের মানসিক ভাবে সুস্থ রাখতে সব রকম ভয়, আশঙ্কা, হতাশা, সব রকম মানসিক চাপ এগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই সহায়তা করতে হবে।
কোভিড-১৯ সব থেকে বেশি যে বদলটি আমাদের মাঝে নিয়ে এসেছে সেটি হল আমাদের দীর্ঘস্থায়ী গৃহ বন্দী জীবন এবং সবার থেকে দীর্ঘ দিন ধরে আলাদা থাকা। এই অস্বাভাবিক অবস্থা শিশু কিশোরদের জীবন বোধ এবং মানসিক শক্তি হরণ করছে। তারা মানসিক ভাবে এতোটাই ভেঙ্গে পড়েছে যে জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দ্যেশ্য সাধনের পথে চরম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই মানসিক শক্তি বাড়াতে তাই তাদের মাঝে নতুন প্রত্যাশা এবং জীবনী শক্তি সঞ্চার করতে হবে। শিশু কিশোরদের উপর করা বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক বিকাশ সংক্রান্ত গবেষণায় দেখা গেছে যখন শিশু কিশোরদের মাঝে সুন্দর ভবিষ্যতের এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হয় তখন তাদের মাঝে মানসিক স্বস্তি বজায় থাকে এবং তাদের মাঝে একাকীত্ব, হতাশা, মানসিক চাপ ইত্যাদি মানসিক সমস্যাও কম হয়। এটি শুধু তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের স্পপ্নই দেখায় না বরং তাদের যথাযথ মানসিক বিকাশেও ভূমিকা রাখে। তারা শুধু শারীরিক ভাবে নয়, মানসিক দিক থেকে সুস্থ থাকে।
হয়তো করোনা মহামারীর এই সময়ে গৃহ বন্দী এই জীবনে মনে হতে পারে যে আমাদের সবার জীবন থমকে গেছে। কিন্তু মহামারী কখনোই জীবনের সব থেকে বড় সত্যি হতে পারেনা। এই সমস্যা যেমন সৃষ্টি হয়েছে তেমনি দূর হয়েও যাবে। কিন্তু আমাদের ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। নিজেদের সাথে সাথে শিশুদের মনোবলও অটুট রাখতে হবে। গৃহে থেকেই এই দুঃসময়কে সুসময়ে বদলে দেবার প্রয়াস করতে হবে। শিশুদের সাথে অধিক থেকে অধিকতর সময় অতিবাহিত করতে হবে যেন একাকীত্ব না অনুভব করে। তাদের মন ভালো রাখার জন্য তাদের পছন্দসই কাজ গুলো করে তাদের মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়া থেকে দূরে রাখতে হবে। তাদের মনোযোগ করোনা মহামারীর এই অস্বাভাবিক অবস্থা থেকে সরিয়ে ইতিবাচক ও আনন্দদায়ক কোন দিকে নিতে হবে। তাদের মাঝে ইতিবাচক চিন্তাভাবনার সঞ্চার করে মন থেকে হতাশা ও আশঙ্কা দূর করে জীবনকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার অনুপ্রেরণা প্রদান করতে হবে।
আজকের শিশুরাই আগামীর কর্ণধার। তাই তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা অভিভাবকদের অন্যতম কর্তব্য। এই মহামারীকালীন সময়ে তাদের মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করতে তাই বড়দের আরও বেশি সচেতন ও সচেষ্ট হতে হবে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে