যৌন আচরণে বংশগতির প্রভাব অনেক

যৌন আচরণে বংশগতির প্রভাব অনেক

মুহিব আর শিলার দশ বছরের দাম্পত্য জীবন। এই দশ বছরে শিলা মুহিবের মধ্যে এমন কিছু খুঁজে পায়নি যা আপত্তিকর। সৌন্দর্যের প্রতি দুর্বলতা আছে। সেই দুর্বলতা থেকে মুহিবের অন্য মেয়েদের দিকে একটু আধটু তাকানো শিলা সহজভাবে নিয়েছে। তেমন ভালো তো শিলারও লাগতে পারে কাউকে। সেই ভালো লাগা আর কারো সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া তো এক নয়। মুহিবকে যতটুকু সে দেখেছে বা চিনতে পেরেছে সৎ এবং দায়িত্বশীল বলেই মনে হয়েছে। কখনোই বিশ্বাসঘাতক মনে হয়নি।

সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসই যদি ভেঙে যায় তাহলে আর কী থাকে? কিন্তু মুহিবের মোবাইলে একটা মেসেজ পড়ার পর ভালোবাসার পুরো জগতটাই এলোমেলো হয়ে গেছে শিলার। একজন বিশেষ নারীর প্রতি হঠাৎ করেই মুহিবের আবেগের তারল্যটা শিলা টের পেয়েছে বছর খানেক হলো। মুহিবকে জিজ্ঞেস করলে সে নিজেও তা লুকোয়নি। খুলে না বললেও দুর্বলতার জায়গাটা বলেছে। একটা মায়াময় অনুভূতির কথা বলেছে। কিন্তু শিলার প্রতি তার মনোযোগ তাতে একটুও কমে যায়নি। যত্নও আগের মতো নেয়। রোমাঞ্চ, যৌনতা, প্যাশন সব আগের মতোই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিলার মনে হয়েছে মুহিব সেই মায়া কাটিয়ে উঠেছে। কিন্তু হঠাৎ মেসেজ পড়ে মনে হয়েছে মুহিবের সাথে তার গভীর এক যোগাযোগ রয়েছে । সম্পর্ক নয়, তবে তা সম্পর্কের চেয়ে কমও নয় শিলার কাছে। প্রশ্ন করে দেখেছে। মুহিবের উত্তর সংক্ষিপ্ত। সে শিলাকে কষ্ট দিতে চায় না। তাই শিলার জানতে পারার অনেক আগেই সে ঐ নারীর জীবন থেকে সরে এসেছে। কোনোকিছু লুকোতেও চায় না বলে মেসেজগুলো মুছে ফেলেনি।

সবকিছুর পরেও শিলার প্রশ্ন থেকে যায় কেন মুহিব এমনটা করল? কীভাবে সে এমনটা করতে পারল? প্রশ্নটা মুহিব নিজেও নিজেকে অনেকবার করেছে। উত্তর মেলেনি। এমন একটা প্রশ্ন নিয়েই কাজ করেছেন নিউ ইয়র্কের স্টেট ইউনিভার্সিটির নৃতাত্ত্বিক জাস্টিন গ্রাসিয়া। তাঁর এই গবেষণায় এমন কিছু প্রমাণ পাওয়া যায় যার অনেক কিছুকেই প্রথম দেখায় স্ববিরোধী বলে মনে হতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতিশীল সম্পর্কের পরেও কোনো এক রাত অন্যের সাথে কাটানো, পাগলের মতো ভালবাসাপূর্ণ সম্পর্কের পরেও অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্ক; যদিও সঙ্গীর প্রতি সে যত্নশীল এবং আন্তরিক-কীভাবে সম্ভব হয়? উত্তর একটাই ডোপামিন রিসেপ্টর ডি ফোর পলিমরফিজম।

শুধু সম্পর্ক বা যৌনতা নয় নেশার সঙ্গেও এই রিসেপ্টর জড়িত। এই রিসেপ্টরের ভিন্নতার জন্যই মানুষে মানুষে যৌন আচরণে এত পার্থক্য। গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছিল ১৮১ জন যবুক-যুবতী। তাদের যৌন আচরণের  ‍পূর্ণ ইতিহাস, সম্পর্কের পূর্ণ ইতিহাস ও ডিএনএ স্যাম্পল রাখা হয়েছিল। গ্রেসিয়া বলেন, বংশগতির এই ব্যাখ্যা ক্ষমা পাওয়ার কোনো অজুহাত নয়, তবে এটা ব্যাখ্যা করে এ ধরনের আচরণের পেছনে বংশগতির ভূমিকা থাকে। মানুষের যৌন আচরণ যে জিন দ্বারা পরিচালিত তা এই গবেষণায় প্রতীয়মান হয়।

যৌন তাড়নার ওপর বংশগতির প্রভাব নিয়ে গবেষনার কাজ করেছেন ইসরাইলের কয়েকজন বিজ্ঞানী ২০০৬ সালের দিকে। তাঁদের গবেষণায় ১৪৮ জন কলেজ ছাত্র অংশগ্রহণ করেন। সেই গবেষণায়ও দেখা যায়, যৌন ইচ্ছার সঙ্গে ডোপামিন রিসেপ্টর ডি ফোর এর জিন জড়িত। তবে জিন ছাড়াও শারীরিক এবং শরীরবৃত্তীয় কিছু বিষয়ও যৌন ইচ্ছাকে প্রভাবিত করে। যেমন : টেস্টোস্টেরন ও ইসস্ট্রোজেন নামক যৌন হরমোন যৌন ইচ্ছার সঙ্গে জড়িত।

সম্প্রতি ইরেকটাইল ডিজফাংশনের সঙ্গে জড়িত জিনকে শনাক্ত করা গিয়েছে। ফলে ভবিষ্যতের চিকিৎসার লক্ষ্য হয়ে উঠবে এই জিন। মুটিয়ে যাওয়া, ধূমপান এবং হৃদরোগের সঙ্গে এই জিনের সম্পর্ক আবিষ্কৃত হয়েছে। ষাট বছরের নিচে প্রতি আটজনের মধ্যে একজনের ইরেকটাইল ডিজফাংশন দেখা যায়। আশা করা যায় এই গবেষণা তাদের জন্য সফুল বয়ে আনবে।

সূত্র: লেখাটি মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleসন্তানের উগ্র আচরণ নিয়ে চিন্তিত?
Next articleমানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলায় কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানালেন সায়মা ওয়াজেদ
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here