নেকরোফিলিয়া এমন এক মানসিক ব্যাধি যা একজন মানুষকে মৃত বা অচেতন দেহের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হতে উৎসাহিত করে। এই ভয়াবহ অপরাধটি আজ আমাদের চারদিকে কল্পনার থেকেও বেশী মাত্রায় সংঘটিত হচ্ছে। এটি সম্পর্কে আমাদের সবার মাঝে একটি স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন।
নেকরোফিলিয়া নামক রোগটি নিয়ে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আমাদের মনে রাখতে হবে সেটি হল এটি কোন শারীরিক ব্যাধি নয়। এটি সম্পূর্ণই একজন মানুষের মানসিক বিকার বা মানসিক সমস্যা। বিশেষত পুরুষের মাঝেই এই মানসিক বিকার দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণ একজন মানুষ তার বিপরীত লিঙ্গ বা বিশেষ ক্ষেত্রে সম লিঙ্গের মানুষের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করে। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় এমন অনেকেই আছে যারা মৃত ব্যক্তি বা অচেতন কোন ব্যক্তিদের প্রতি যৌন আকর্ষণ অনুভব করে। তাদের মাঝে মৃত ব্যক্তির সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হবার প্রবণতা দেখা যায়। এই বিশেষ মানসিক সমস্যাকেই আমরা নেকরোফিলিয়া নামে অভিহিত করছি।
সাধারণত একজন নেকরোফিলিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি যৌন সঙ্গমের জন্য যে সব মৃত দেহ বেছে নেয় সেগুলো সদ্য মৃত্যুপ্রাপ্ত দেহ হয়না। বরং পোস্টমর্টেমের উদ্যেশ্যে মর্গে নিয়ে আসা লাশ যা কিছুটা দুর্গন্ধ যুক্ত বা অবস্থা বিশেষ কবর থেকে তুলে নিয়ে আসা লাশও হতে পারে। এ ধরণের মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই লাশ থেকে বের হওয়া ঐ বিশেষ পচনশীল গন্ধের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এরা নারী দেহের বিশেষ অঙ্গের প্রতিও আকৃষ্ট হয়, যেমন, স্তন বা যোনি, আবার অনেকে প্রায় কঙ্কাল হয়ে যাওয়ায় দেহকেও বেছে নেয়। একজন নেকরোফিলিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি যে জীবিত মানুষের সঙ্গে সংগমে লিপ্ত হয়না তা নয়। কিন্তু এদের মাঝে মৃত বা কিছু কিছু ক্ষেত্রে অচেতন দেহের প্রতি বিশেষ যৌন লালসা চরিতার্থ করার মানসিকতা লক্ষ্য করা যায়।
খুব পরিচিত মানসিক ব্যাধি না হলেও নেকরোফিলিয়া বেশ প্রাচীন একটি ব্যাধি। প্রাচীন গ্রিক পুরানে এর উল্লেখ রয়েছে। তাছাড়া বর্তমানে এই আধুনিক যুগেও মাঝে মধ্যেই এ ধরণের খবর আমাদের সামনে আসে। তবে আমাদের দেশে নেকরোফিলিয়া জনিত অপরাধের মাত্রা খুবই কম এবং সাধারণ মানুষ এই মানসিক ব্যাধি সম্পর্কে একেবারেই অবগত নন। সাধারণত যারা মর্গে কাজ করে বা মৃত দেহের রক্ষণাবেক্ষণের সাথে জড়িত তাদেরকেই বিভিন্ন সময়ে এই অপরাধের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে যা অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ, অসন্তোষ জনক এবং মর্মান্তিক। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় এক শতাংশের ও কম মানুষ এই মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে এ ধরণের অপরাধ সংগঠিত করে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, একজন নেকরোফিলিয়া ব্যক্তি হয়তো খুনি নন, কিন্তু তার মাঝে যে কোন ভাবেই হোক মৃত ব্যক্তির দেহের সাথে যৌন সংগমে লিপ্ত হওয়ার তীব্র মানসিক লালসা থাকে যা তাকে মর্গে কাজ করার ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা প্রদান করে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় এ ধরণের মানসিক সমস্যায় ভোগা একজন ব্যক্তি শুধু মাত্র মৃত দেহের সাথে যৌনতায় লিপ্ত হওয়ার বাসনায় খুন করতেও পিছপা হয়না। আবার অনেকেই ধর্ষণ করে কাউকে হত্যা করার পর পুনঃ পুনঃ ঐ মৃত দেহকেও ধর্ষণ করে। তবে এই সব কিছুর মধ্যে তার মাঝে যে মানসিক প্রবৃত্তি কাজ করে সেটি হল, যে কোন উপায়ে মৃতদেহের সাথে যৌন সংগমে লিপ্ত হওয়া এবং এটিই তাকে মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়।
মনস্ততত্ত্ববিদগণ নেকরোফিলিয়া আক্রান্তদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করে বিভিন্ন কারণ খুঁজে বের করার প্রয়াস করেছেন যেগুলো একজন মানুষের নেক্রফিলিক মানসিকতার পেছনে কাজ করে। সাধারণত একজন স্বাভাবিক মানুষ যেমন সে সব ফুল পছন্দ করে বা সেগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয় যেগুলোর সুবাস তার কাছে ভাল লাগে, তেমনি একজন নেকরোফিলিয়া মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষ অর্ধ গলিত বা নষ্ট মৃত দেহের গন্ধের প্রতি বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়। তাছাড়া এ ধরণের মানুষের মাঝে যৌন লালসা ও ঠিক ততোটাই থাকে যেমন একজন সাধারণ ধর্ষকের মাঝে থাকে। এ ধরণের মানসিক ব্যাধির শিকার একজন মানুষ এমন একজন ভিকটিমকে বেছে নেয় যার প্রতিরোধ গড়ে তোলার কোন শক্তি থাকবেনা এবং যে অস্বীকৃতি জানাবে না, অর্থাৎ একটি মৃত দেহ। তবে এটি সবার ক্ষেত্রে একই রকম হবে তেমনটি নয়। কারণ এমনও অনেক কেস পাওয়া গেছে যেখানে একজন নেক্রফিলিক ব্যক্তি ধর্ষণ করে কাউকে খুন করেছে এবং খুন করার পর পুনরায় ধর্ষণ করেছে।
মূলত নেকরোফিলিয়া একটি এমন বিকৃত মানসিকতা যা একজন মানুষকে বিবেক বর্জিত করে দেয়। অনেক দেশেই নেক্রফিলিয়া সংক্রান্ত আইন রয়েছে এবং এ ধরণের ব্যাক্তির জন্য নির্দিষ্ট শাস্তির বিধান ও রয়েছে। কিন্তু এই সমস্যা মোকাবেলায় শুধু শাস্তির বিধান রাখাই যথেষ্ট নয় বরং কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা রাখাও জরুরী। কারণ, মানসিক বিকার দূর করা না গেলে শুধু শাস্তির মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।
লিখেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে