সঙ্গীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে এবং দুজনার মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া বাড়াতে একে অপরকে নিজেদের মনের কথা সঠিকভাবে বুঝিয়ে বলা এবং সেই অনুসারে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
দুজন মানুষের ব্যক্তিত্ব বা মানসিকতায় সব কিছুতেই মিল থাকবে বা একই রকম হবে এমনটা আশা করা ঠিক নয়। এভাবে দুজন ভিন্ন মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ যখন দাম্পত্য বন্ধনে আবদ্ধ হয় তখন মনের মিল এবং মতের মিলের সামাঞ্জস্য বিধান করে দুজনার মধ্যে দাম্পত্য বন্ধন আরও দৃঢ় করা একটু চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। এটি সব দম্পতীদের জীবনেই একটি চিরন্তন সত্য। এভাবে দুজনার মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া সুদৃঢ় করতে নিজের মতামত অন্য জনের সামনে প্রকাশ করা এবং সেটা তাকে বুঝিয়ে কাজে লাগানোর জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
নিজের মনের কথা সহানুভূতির সাথে এবং কার্যকরী ভাবে বুঝিয়ে বলতে পারা এবং অপর জনের মনের কথা বুঝতে পারা একজন ভালো সঙ্গীর খুব বড় একটি বৈশিষ্ট্য। অধিকাংশ সময় দুজনার মধ্যে যে সমস্যাটি এক্ষেত্রে বড় হয়ে দাঁড়ায় সেটি হল, কোন কথা বুঝিয়ে বলার পরিবর্তে আমরা মনে করি আমরা যেটা বলবো অন্য জন সেটি শুনতে বাধ্য। আমরা এক্ষেত্রে মনকে গুরুত্ব না দিয়ে আমাদের অহংকে বেশী গুরুত্ব দেই। অন্য দিকে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হল ভালো বক্তা না হয়ে আগে ভালো শ্রোতা হওয়ার প্রচেষ্টা করা। আমরা অপরের কথা শোনা থেকে নিজের কথা বলার উপর বেশী গুরুত্বারোপ করে ফেলি। এতে যে কোন পরিস্থিতি বা বিষয় সম্পর্কে আমরা শুধু আমাদের মতকেই প্রাধান্য দিয়ে ফেলি। অন্যের মতামতের গুরুত্ব দেওয়াকে নিজের প্রতি অবিচার বা নিজের মতকে কম গুরুত্ব দেওয়া মনে করি। যা একেবারেই অনুচিত একটি মনোভাব।
নিজের মনের কথা খুলে বলা বা কোন বিষয়ে মতামত প্রদানের পূর্বে কোন বিষয়ে মত প্রদান করছেন সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। সঙ্গীর সাথে যে কোন আলোচনার আগে পরিবেশের ভাব গাম্ভীর্য বুঝে নিন। নিজের মত প্রকাশের আগে আপনার সঙ্গীর এ বিষয়ে কি ভাবনা আছে সেটি শুনুন। ভালো মন্দ বিচার করে এবং তার মনের ভাবনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজের মত প্রকাশ করুন। অতএব, মূল কথা হল নিজের মত প্রকাশের পূর্বে কি সম্পর্কে কথা বলছেন এবং যাকে বলছেন তার ভাবনা সম্পর্কে জেনে তারপর নিজের মনের কথা বুঝিয়ে বলুন। এতে করে আপনার মনস্থিতি উপেক্ষিত হবেনা। আবার আপনার সঙ্গীর মনের ভাবনার প্রতিও আপনি শ্রদ্ধাশীল থেকে এবং সামঞ্জস্য বিধান করে আপনি নিজের কথা খুলে বলতে পারবেন। এরকম অবস্থায় কেউই কারও প্রতি বিরক্ত বা কারও মনোভাব উপেক্ষিত হবেনা।
তাছাড়া, যে কোন আলোচনায় বা মত প্রকাশের সময় নিজের মত প্রকাশ করতে গিয়ে বা কোন বিষয়ে উপদেশ প্রদান করতে গিয়ে যেন নিজের মত আপনার সঙ্গীর উপর চাপিয়ে দেওয়া না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। আপনার সঙ্গী যেন কোন ভাবেই মনে না করে যে আপনি তার উপর কর্তৃত্ব করছেন। নিজের মত প্রকাশের ক্ষেত্রে এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কৌশল। যদি আপনার সঙ্গীর উপর আপনি আপনার মত চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা করেন বা নিজের মতের উপর বেশী জোর দেন তাহলে সে নিজের মতকে সুরক্ষার জন্য আপনার মতকে তার মতের থেকে নিকৃষ্ট প্রমাণের প্রচেষ্টা করবে। আর এখানেই ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে। তাই নিজের মত বা উপদেশ প্রদানে সতর্ক থাকুন এবং আধিপত্য বিস্তার থেকে দূরে থাকুন। তাহলে আপনার সঙ্গী আপনার মতকে প্রাধান্য দিতে মোটেও কার্পণ্য করবেনা।
সব সময় নিজের মনের কথা বলার সময় আপনার সঙ্গীর ভাবনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। এটা সব সময় মনে রাখবেন যে সবারই ভালোলাগা, মন্দ লাগা রয়েছে এবং দুজনের মতামতের সমন্বয়েই একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অনেক সময় আপনার সঙ্গীকে যেমন আপনার ভালোলাগাকে গুরুত্ব দিতে হবে তেমনি তার ভালোলাগাকে গুরুত্ব দিয়ে গিয়ে অনেক সময় আপনাকেও অনেক খারাপ লাগার মত কাজকে মেনে নিতে হবে। এটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। আর সম্পর্কে এমন বোঝাপড়া তৈরি করতে পারলে অবশ্যই আপনার মতের গুরুত্ব আপনার সঙ্গী দেবে এবং আপনার মনের কথা সে বুঝবে।
শেষ কথা হল, একে অপরের মনের কথা বোঝা এবং শোনার মাধ্যমেই একটি সুন্দর সম্পর্ক সামনের দিকে এগিয়ে যায়। যখন আপনি আপনার মত প্রকাশ করবেন, অবশ্যই আপনি আপনার সঙ্গীর মনের ভাবনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেই তাকে কিছু বলবেন এবং একে অপরের হিতকে সব থেকে বেশী গুরুত্ব দেবেন। এভাবে দুজন দুজনার মতকে গুরুত্ব প্রদানের প্রচেষ্টা করলে একে অপরকে মনের কথা বোঝানো খুব কঠিন কিছু অবশ্যই হবেনা।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে