জীবনে যতই সমস্যা আসুক, মানসিক চাপে জীবন যতই দুর্বিষহ হয়ে উঠুক, মনে প্রশান্তি ফিরিয়ে আনতে মনের মত কিছু কথা, কিছু দিক নির্দেশনাই যথেষ্ট।
কোভিড-১৯ মহামারীর এই দুঃসময়ে আমরা যে কতোটা মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি সেটি বর্ণনা করা খুবই কঠিন। করোনা যেমন অত্যন্ত সংক্রামক এবং বিপদ জনক একই সাথে আমাদের এই মানসিক সংকট, মানসিক চাপও ততোটাই আমাদের ক্ষতি করছে। এই বাড়তি মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে খুব বড় ভূমিকা রাখতে পারে সুহৃদের দুটো মন ভালো করা কথা, কিছু কাজ যা আমাদের আবার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেবে, মনের বল বাড়াবে।
করোনা আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি করেছে। আমরা বাইরে যেতে পারছিনা, কারও সাথে আমাদের দেখা হচ্ছেনা, আবার জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান দিতেও হিমসিম খেতে হচ্ছে। এই সব কিছু আমাদের জীবনে এক সীমাহীন দুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা এই দুর্যোগ আমাদের মানসিক অবস্থা অস্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। আর এর ফলে দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, হতাশা, ভয়, নিদ্রাহীনতা প্রভৃতি মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এমন অবস্থায় অনেকেই আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। মনের মাঝে অশান্তি তাদের না ঘরে সুস্থ থাকতে দিচ্ছে, না তারা বাইরে গিয়ে শান্তি পাচ্ছেন।
মনের এই সমস্যা দূর করতে আমাদের আগে সমস্যার কারণ গুলোর নিবারণ করতে হবে। এই মানসিক সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা কাজে লাগাতে হবে। আর আত্মনিয়ন্ত্রণ, আত্মবিশ্বাস বাড়াতে আমাদের মনের জোর বাড়াতে হবে। এটাই করতে সহায়তা করে আমাদের কাছের মানুষেরা। তাদের সাহচর্য, তাদের পথ নির্দেশনা আমাদের মনে আনবে ইতিবাচক পরিবর্তন। আমাদের মনে আশার সঞ্চার করবে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। নিচে দুটো সহজ উপায় উল্লেখ করা হল যেভাবে এই সম্পূর্ণ কাজটি করা যেতে পারে।
১) একই রকম সমস্যায় ভোগা অন্যদের কাছ থেকে সহায়তাঃ
আপনার মত এমন সমস্যায় ভুগছেন এরকম মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। চেষ্টা করুন কাছাকাছি সেসব পরিচিত মানুষদের সাথে খোলামেলা কথা বলার যারা আপনার মতোই এই কঠিন সমস্যা মোকাবেলার প্রচেষ্টায় আছেন এবং একই সাথে এরকম মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এটি একটি অন্যতম সামাজিক সহায়তা হয়ে উঠতে পারে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলে, একে অপরের সমস্যা গুলো শুনে নিজেরা নিজেদের সমস্যার সমাধানে একে অপরকে সহায়তা করার চেষ্টা করলে সেটি অধিক ফলপ্রসূ হয়। এতে নিজেরা নিজেদের সমস্যাটা খুব ভালোভাবে বোঝা যায় এবং সমাধানে সঠিকভাবে প্রচেষ্টাও করা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে এ ধরণের সামাজিক সহায়তা মানসিক সমস্যা দূর করার পাশাপাশি সংক্রমণের হার এবং সংক্রমণে মৃত্যু হার কমায়, বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যোগায়, রোগ সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা বাড়ায়, নিজেকে নিজে ভালো রাখার মনোবল বাড়ায়, এবং বিভিন্ন সমস্যার মাত্রা কমায়।
২) সুহৃদ এবং সহযোগী বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনঃ
বিষাক্ত সম্পর্কগুলো যেমন আমাদের মধ্যে নেতিবাচক মানসিকতার বিকাশ ঘটায় এবং মানসিক পীড়ার সৃষ্টি করে তেমনি, সঠিক, সুহৃদ এবং সহায়ক সম্পর্কগুলো আমাদের মাঝে ইতিবাচক মানসিকতার বিকাশ ঘটায় এবং আমাদের মনে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনে। গবেষণায় দেখা গেছে সুহৃদ কাছের মানুষদের সংস্পর্শে থাকলে অন্যান্য মানসিক সমস্যার সমাধানের সাথে সাথে আমাদের ইমিউনো সিস্টেমও ভালো থাকে। এতে আমাদের মনোবল বাড়ে এবং সুখানুভূতি ও সন্তুষ্টির সৃষ্টি হয়।
তাই মহামারীর এই দুঃসময়েও অন্যদের সাথে যত বেশী ভাব বিনিময় হবে, ততো বেশী আমাদের মনের ভার কমবে, আত্মবিশ্বাস বাড়বে। করোনাকালীন সময়ে হয়তো সবার সাথে সামনে থেকে দেখা করা সম্ভব নয়। এই সমস্যা এড়াতে প্রযুক্তির ব্যবহার করুন। ফোনে ভিডিও কলে তাদের সাথে কথা বলুন। সব থেকে বড় কথা তাদের সংস্পর্শে থাকুন। আপনার মানসিক জোর বাড়াতে আপনার সাথে সাথে তাদের ভুমিকাও অগ্রগণ্য।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন