মুকুল একটি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের উচ্চ পদাধিকারি কর্মী। দশ তলার উপরে একটা কোণের দিকে মুকুলের অফিস। মুকুলের সহকর্মীদের মধ্যে প্রায়ই একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনার বিষয়বস্তুটি হল— যখন মুকুলের সহকর্মীরা উপরে ওঠার জন্য লিফ্ট ব্যবহার করে, তখন মুকুল লিফ্টের বদলে সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠে কেন? মুকুলের কাছের মানুষজন এর পিছনে বহু কারণ দেখাতে চেষ্টা করে। কেউ কেউ এই বিষয়টি নিয়ে যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করে। কেউ আবার ঠাট্টা রসিকতাও শুরু করে। যেমন—“মুকুল নিজেকে ফিট রাখার জন্য সিঁড়ি দিয়ে ওঠে…” বা “সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়ে সে নানা বিষয়ে চিন্তা করে…” অথবা “সিঁড়ি বেয়ে ওঠার সময়ে মুকুলের নিজের জীবনের সাফল্যের কথা মনে পড়ে যায়…”।
এরকম অনেক যুক্তি মুকুলের সহকর্মীরা দিতে থাকে। কিন্তু কেউই সঠিক কারণটা মুকুলের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করে না। একদিন অফিসের কাজ শেষ করতে অনেক রাত হয়ে যায়। মুকুল যখন তার সহকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে বলতে অফিস থেকে বেরোবার জন্য উদ্যত হয়, তখন একজন সহকর্মী মুকুলকে লিফ্টে যাওয়ার জন্য বলে। এই কথা শুনেই মুকুল তড়িঘড়ি কোনও দিকে না তাকিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করে। মুকুলের এরকম অস্বাভাবিক আচরণ দেখে সহকর্মীরা সিদ্ধান্ত নেয় যে, মুকুলকে তারা এমন আচরণ করার সঠিক কারণ জিজ্ঞাসা করবে। এরপর মুকুলকে প্রশ্ন করলে সে জানায় যে, কোনও বদ্ধ জায়গায় থাকতে তার খুব ভয় করে। তাই সে লিফ্টে উঠতে চায় না।
ক্লসট্রফোবিয়া হল কোনও বদ্ধ জায়গায় থাকার জন্য অস্বাভাবিক এবং অযৌক্তিক ভয়। এই ভয় মানুষকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে, সে কোনও বদ্ধ জায়গা থেকে আর বাইরে বেরোতে পারবে না। এই সমস্যায় আক্রান্তদের মধ্যে অল্পবিস্তর মানসিক উদ্বেগ এবং প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ দেখা যায়। এছাড়াও ক্লসট্রফোবিয়ার আরও কয়েকটি লক্ষণ হল—
- শরীরে কাঁপুনি বা শিরশিরানি বোধ করা, ঠান্ডা লাগা
- শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া এবং বুকে চাপ অনুভব করা
- হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া
- অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম
- বমি-বমি ভাব
- ঝিমিয়ে পড়া
এই সমস্যা মাঝে-মাঝে এতটাই গুরুতর আকার নেয় যে তা প্যানিক অ্যাটাকে পরিণত হয়। ক্লসট্রফোবিয়ায় আক্রান্তরা কতগুলি বিষয়কে একেবারে এড়িয়ে চলে। যেমন—
- লিফ্টে চড়া
- ছোট ঘর
- পাবলিক বাথরুম
- টানেল বা সাবওয়ে
- প্রচণ্ড ভিড়
এইধরনের ভয় থেকে মানুষের মধ্যে যে আচরণগুলি দেখা যায়, তা হল—
- কোনও উচুঁ বাড়িতে ওঠার জন্য এরা লিফ্টের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করে।
- যখন ছোট একটা ঘরে অনেক মানুষের সঙ্গে এরা থাকে তখন দরজার একদম পাশে এরা বসার চেষ্টা করে।
- যখন রাস্তাঘাটে খুব ভিড় থাকে তখন এরা সচরাচর বাইরে বেরোতে চায় না।
- ঘরে ঢুকে এরা ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করতে চায় না।
ক্লসট্রফোবিয়ার কারণ
মানুষের অন্যান্য ভয়জনিত সমস্যার মতো ক্লসট্রফোবিয়াও সাধারণত মানুষের ছোটবেলায় ঘটা কোনও ভয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকে। ক্লসট্রফোবিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পিছনের ঘটনাগুলি হল—
- বাবা-মায়ের থেকে আলাদা হয়ে বহু সময় ভিড়ভাট্টার মধ্যে কাটানো।
- সাঁতার না জেনে জলের মধ্যে পড়ে যাওয়া।
- বড় কোনও গর্তে পড়ে গিয়ে অনেকক্ষণ সেখানে আটকে থাকা।
এছাড়াও জৈবিক এবং বংশগত কারণে ক্লসট্রফোবিয়া হতে পারে।
চিকিৎসা
এই রোগের চিকিৎসা মূলত থেরাপি-নির্ভর। ক্লসট্রফোবিয়ার ফলে যদি মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয় তাহলে তার জন্য ওষুধের প্রয়োজন হয়। কগনিটিভ বিহেভায়রল থেরাপি সাধারণত ক্লসট্রফোবিয়া সারাতে দরকার হয়। এমনকী যারা প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হন তাদের ক্ষেত্রেও এই থেরাপি প্রযোজ্য।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন