আমার স্ত্রীকে আমি কিভাবে বুঝাতে পারি?

সমস্যা: আমার পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবন। আমার স্ত্রীর বর্তমান বয়স ২৬ বছর। আমার বয়স ৩৫ বছর। আমার ২০ মাস বয়সী একটি মেয়ে আছে। আমার স্ত্রী মেয়েটাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর জবরদস্তি করে দিনে ৪-৫ বার সুজি এবং গরুর দুধের মিশ্রণ ফিডার দিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ হলো, তাকে মাছ, ভাত, সবজি, তরকারি খাওয়ানো শিখাতে হবে। প্রয়াজনে তাকে দু’এক বেলা ফিডার না দিয়ে তার মধ্যে ক্ষুধা তৈরি করতে বলেছেন। কিন্তু সে ডাক্তারের পরামর্শ মানতে নারাজ। মেয়ে ফিডার না খাইতে চাইলে আমার স্ত্রী প্রায়ই তাকে শারীরিক টর্চার করে এবং ধমক দেয়। রাতে বা দিনে অনেক সময় মেয়েটি না ঘুমাতে চাইলে তাকে শারীরিক টর্চার করে। রাতে বাচ্চারা অনেক সময় বিভিন্ন পজিশনে ঘুমাতে চায় যেমন- কাত হয়ে, চিৎ হয়ে ইত্যাদি। আমার স্ত্রী মেয়েটাকে একটি নির্দিষ্ট পজিশনে শুইয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করে। ঐ পজিশন থেকে একটু নাড়াচাড়া করলেই মেয়েটাকে রাতের বেলায় ঘুমের মধ্যেই ধমক এবং মারধর শুরু করে। মেয়েটা তখন ঘুম থেকে ওঠে আমাকে দেখে বাবা, বাবা বলে চিৎকার করে জড়িয়ে ধরে। আমার স্ত্রীকে শিশুদের খাওয়ানো, পড়ানো, লালন, পালন বিষয়ক বিভিন্ন জার্নাল, বই পুস্তক, অনলাইন মিডিয়ার সহায়তা নেয়ার পরামর্শ দিলেও তাতে সে কখনোই কর্ণপাত করে না।

আমার পর্যবেক্ষণ:
১. আমার শিশুটি শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের শিকার
২. আমার স্ত্রীকে মানসিকভাবে অসুস্থ মনে হয়
৩. স্ত্রীকে বুঝিয়ে আমি ব্যর্থ হয়েছি
৪. আমার স্ত্রী কোনো মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতেও নারাজ
৫. মেয়েটার ছোট খাট খেলাধূলাটাকেও সে নিরুৎসায়িত করে
৬. মেয়েটা আমার সাথে থাকতে বেশি পছন্দ করে যদিও আমি তাকে বেশি সময় দিতে পারি না। আমার প্রতি আগ্রহের কারণ, তাকে আমি একটু খেলাধূলার স্বাধীনতা দেই। ছোটখাটো শিশুসুলভ চাওয়াগুলোকে প্রশ্রয় দেই।

আমার প্রশ্নঃ আমার স্ত্রীকে আমি কিভাবে বুঝাতে পারি? আর শিশুটিকে এই অবস্থা থেকে কিভাবে স্বাভাবিক জীবনে বের করে আনতে পারি বা আমার অবস্থানটা কি হওয়া উচিত?

পরামর্শ: আপনাকে ধন্যবাদ যে আপনি পরামর্শ চেয়েছেন কারণ সাধারণত এই ধরনের সমস্যায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি হয়। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে সেরকম হবেনা বলেই আমার বিশ্বাস কারণ আপনি সমস্যাটা ধরতে পেরেছেন এবং তার সমাধানও বুঝেছেন। আপনি যতটুকু বর্ণনা করেছেন তাতে বুঝতে পারছি যে আপনার স্ত্রী সম্ভবত কোন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এই সমস্যা সাধারণ দুশ্চিন্তা থেকে শুরু করে বড় কোন সমস্যাও হতে পারে যা উনার সাথে সামনাসামনি কথা না বলে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আপনার সমস্যা হলো যে আপনি তাকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিতে পারছেন না। আসলে আমাদের সমাজে একটি ভ্রান্ত ধারণা আছে, আর তা হলো, মনোরোগ মানেই “উন্মাদ” হওয়া আর মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া মানেই নিজেকে “পাগল” বলে প্রমাণ করা। আপনার স্ত্রীও সম্ভবত তাই মনে করছেন। এক্ষেত্রে আপনি যা করতে পারেন তা হলো-

১. উনাকে বুঝান যে মনোরোগ মানেই খারাপ কিছু নয়। হয়তো উনার সমস্যা খুব ছোট যার খুব সহজ বৈজ্ঞানিক সমাধান রয়েছে।

২. একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে আপনাদের সম্পর্কের জন্য সেটা ভাল হবে এবং আপনাদের সন্তানের জন্যও ভাল হবে তাও তাকে বুঝান।

৩. উনাকে এইটাও বুঝান যে, এমনও হতে পারে – আপনার স্ত্রীর হয়তো কোনো সমস্যা নেই বরং আপনারই সমস্যার জন্য আপনিই তাকে ভুল বুঝছেন। আর এটা নিশ্চিত করার জন্যও আপনাদের দুজন একসঙ্গে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া প্রয়োজন।

৪. যদি কোন ভাবেই আপনি তাকে বুঝাতে না পারেন, সেক্ষেত্রে আপনার পরিবারের এমন কোন ব্যক্তি যার কথা উনি মান্য করেন, তাঁর সাহায্য নিতে পারেন।

মনে রাখবেন, সমস্যা যত দীর্ঘায়িত হবে সমাধান ততই কঠিন হবে।

পরামর্শ দিয়েছেন: ডা. শাহরিয়ার ফারুক

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিকিৎসকের সরাসরি পরামর্শ পেতে দেখুন: মনের খবর ব্লগ
করোনায় মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক টেলিসেবা পেতে দেখুন: সার্বক্ষণিক যোগাযোগ
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
করোনায় সচেতনতা বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও বার্তা দেখুন: সুস্থ থাকুন সর্তক থাকুন

Previous articleডাউন সিন্ড্রোম: শিশুদের ক্রোমোজমের সমস্যা
Next articleকরোনা কালে ঘরে না থাকার মানসিকতা এবং নেপথ্যের যত কারণ
রেজিস্ট্রার, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here